ঢাকা, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ ভাদ্র ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখতে সরকার তৎপর : শিল্পমন্ত্রী


প্রকাশ: ২৫ জুলাই, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখতে সরকার তৎপর : শিল্পমন্ত্রী

   

স্টাফ রিপোর্টার : শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাথে মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর সংস্থাসমূহের ২০২০-'২১ অর্থবছরের কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষরিত অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখতে সরকার তৎপর রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বক্ষণিক তদারকি ও নির্দেশনায় জীবন ও জীবিকার মাঝে সমন্বয়ের চ্যালেঞ্জ নিয়ে করোনাকালে সরকার কাজ করছে। 


শিল্পমন্ত্রী নির্বাচনী ইশতেহারে শিল্প খাতের উন্নয়নে গৃহীত পরিকল্পনাসমূহ  বাস্তবায়নে কর্মকর্তাদের আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। 

শিল্পমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের আস্থার প্রতীক। করোনাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় তিনি নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। এর অনুকরণে আমাদের সবাইকে আরও কর্মতৎপর  এবং উদ্যমী হতে হবে। যেসব খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। 

একই সাথে প্রকল্প মূল্যায়ন সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে শিল্প মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকদের নির্দেশনা দেন।

আজ রোববার (২৬ জুলাই) অনলাইনে ভার্চুয়াল মাধ্যমে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। 

শিল্পসচিব কে এম আলী আজমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। 

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দপ্তর-সংস্থার প্রধানগণ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শিল্প সচিব এপিএ-তে স্বাক্ষর করেন।

উল্লেখ্য, সরকারের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, সরকারের উন্নয়ন নীতি এবং সার্বিক উন্নয়ন অগ্রাধিকারকে সামনে রেখে ২০২০-২১ অর্থবছরের এপিএ প্রণয়ন করা হয়েছে। এজন্য এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা, ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, নির্বাচনী ইশতেহার এবং রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। 

পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও নির্দেশনাসমূহের বাস্তবায়ন, মন্ত্রণালয়ের বাজেট কাঠামো, অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে লাভজনককরণ, লোকসানি প্রতিষ্ঠানসমূহের লোকসান পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনাসহ স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও  প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করে এপিএ প্রণয়ন করা হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, কাজে গতানুগতিকতা পরিহার করে এপিএ'র অধীনএ গৃহীত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আরো আন্তরিকভাবে কাজ করার জন্য শিল্প  মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর সংস্থাসমূহের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শিল্প খাতের উন্নয়নে আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করা ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে লাভজনক করার মাধ্যমে মুজিববর্ষকে সার্থক করতে হবে। 

শিল্প প্রতিমন্ত্রী দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনে প্রকল্প গ্রহণের তাগাদা দেন। 

তিনি বলেন, কর্ণফুলী পেপার মিলসহ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পুরানো শিল্প কারখানাসমূহের আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি প্রকল্পসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের তাগাদা জানিয়ে বলেন, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়িত না হলে জনগণের অর্থের অপচয় হয়।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসরণ করে করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। এর ফলে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রয়েছে। দেশের সর্বত্র পণ্যের ভেজাল রোধে সকল জেলায় বিএসটিআই'র দপ্তর স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেন প্রতিমন্ত্রী।

শিল্প সচিব বলেন, শিল্প খাতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আনা, বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ সামগ্রিকভাবে শিল্পখাতের উন্নয়নে শিল্প মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তিনি বলেন, রুপকল্প ২০২১, রুপকল্প ২০৪১, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট, বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ অর্জনে দেশীয় শিল্প খাতসমূহের বিকাশ ঘটাতে হবে। এজন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম আরও জোরদার করার জন্য মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর সংস্থাসমূহের কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানান শিল্প সচিব। 

পরে ২০১৯-'২০ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রকল্পসমূহের জুন ২০২০ পর্যন্ত অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শিল্প সচিব কে এম আলী আজমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এমপি ও বিশেষ অতিথি ছিলেন কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি। সভায় জানানো হয়, বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রকল্প বাস্তবায়নের হার (আর্থিক) ৯৯.১৭ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। 

সভায় জানানো হয়, সারের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে ৩৪টি বাফার গোডাউন নির্মানের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে। সভায় প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা নিয়োগ এবং দেশীয় অভিজ্ঞ একাধিক স্টিল অবকাঠামো নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের  মাধ্যমে বাফার গোডাউন নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

সভায় আরও জানানো হয়, গোপালগঞ্জ বিসিক শিল্প নগরী সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ সমাপ্তি পর্যায়ে রয়েছে এবং সাভারে অবস্থিত চামড়া শিল্পনগরীর সিইটিপি'র অটোমেশনের কাজ এবং এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ শীঘ্রই সমাপ্ত হবে। লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি)-এর মানদন্ড অর্জনে উদ্যোগসমূহের সঠিক বাস্তবায়নের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এছাড়া প্রকল্পসমূহের বিগত  বছরের  অব্যায়িত অর্থ ফেরত এবং প্রকল্পে নতুন পদ সৃজন সংক্রান্ত প্রস্তাব প্রেরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।   

সভায় করোনার ভয়কে জয় করে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়ার পরামর্শ দিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনে সরকারি বন্ধের দিনেও কাজ করে প্রকল্পের অগ্রগতিকে এগিয়ে নিতে হবে। তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কেবলস, সিমেন্ট,  চিনিসহ অন্যান্যপণ্য পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আধুনিকায়ণের গুরুত্ব আরোপ করেন। এসব কারখানায় যেসব পণ্য উৎপাদিত হয়, সেগুলো বিদেশ থেকে আমদানি পরিবর্তে দেশেই উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।

সভায় শিল্প মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন দপ্তর-সংস্থাসমূহের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ও প্রকল্প পরিচালকগণ উপস্থিত ছিলেন।


   আরও সংবাদ