প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ২১:০৫ অপরাহ্ন
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে কুড়িগ্রাম-২ আসনের জাতীয় পার্টির এমপির মিথ্যে অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন হলেও তদন্ত আলোর মুখ দেখার আগেই পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বদলি করা হয়েছে। গত সোমবার তার বদলী করা হয়। বদলীর খবর শোনার পর ফুঁসে উঠেছে কুড়িগ্রামের সাধারণ জনগণ।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলামের বদলীর খবরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সহ সাধারণ মানুষের মাঝে।
সাধারণ জনগণের অভিযোগ, এমপি পনির উদ্দিন আহমেদের পছন্দের ঠিকাদার টেন্ডার জিততে না পেরে ভাড়া করা লোক এনে পাউবোর চলমান উন্নয়নমুলক কাজ বন্ধ করে দেয়। তারূ ঠিকাদারসহ পাউবোর লোকজনকে মারধরও করে। কাজ অর্ধেক করার পর আটকে যায়। টেন্ডার হওয়ার নয় মাসেও ঠিকাদারকে কাজ করতে দিচ্ছে না। এছাড়া নানান মিথ্যে সাজিয়ে এমপি সাহেব বিভিন্ন দফতরে নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। এতে তার বদলী হয় বলে অভিযোগ করেন সাধারণ জনগণ।
কুড়িগ্রামের সিনিয়র সিটিজেন আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আরিফুর একজন দক্ষ প্রকৌশলী। তিনি কুড়িগ্রামে আসায় এখানকার কাজের গিত বেড়ে যায়। আগামী ছয় মাসের মধ্যে কুড়িগ্রামের উন্নয়ন দৃশ্যমান হতো। কিন্তু তাকে সরিয়ে দেওয়ায় ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি। কুড়িগ্রামের উন্নয়ন সম্ভবত থেমে যাবার উপক্রম হয়েছে। এটা মানতে পারছি না।
আরেক সমাজকর্মী রবিউল ইসলাম বলেন, কুড়িগ্রামের তিন দিকে ভাঙছে। এটাকে রক্ষার জন্য অতীতে এরআগে কেউ এতো বেশি দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করেননি। কিন্তু আরিফুর রহমান আসার পর সব চিত্র পাল্টে যেতে শুরু করেছে।
জানা যায়, ধরলা নদীর ডান তীর প্রকল্পে ৫৯৫ কোটি টাকা একনেকে পাশ হলেও জমি অধিগ্রহণের জটিলতার কারণে ধরলা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের চল্লিশটি গ্রুপে প্রায় ৩২০ কোটি টাকার টেন্ডার সম্পন্ন হয়।
এই টেন্ডারে ৪০ টি গ্রুপের মধ্যে ২০ টি গ্রুপের কাজই চেয়েছেন স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব পনির উদ্দিন আহমেদ ।
চাহিদা মোতাবেক কাজ না পেয়ে মরিয়া হয়ে বিভিন্ন অধিদফতরে নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগে বিএনপি জামাত পৃষ্ঠপোষক গোলাম রব্বানী নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে ৩০০ কোটি টাকার কাজ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি। অথচ ওই ঠিকাদার পাবনা-২ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। গোলাম রব্বানীর নামে মাত্র ৩৯ কোটি টাকার কাজের কার্যাদেশ রয়েছে।
স্থানীয় জাতীয় পার্টির এমপি ধরলা নদীর বাম ও ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের দরপত্রে অনিয়মের অভিযোগে ডিও লেটার এর প্রেক্ষিতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় নং ৪২,০০, ০০০০, ০৩৫ ,৯৯, ০০৩১৯৯/৪১ স্বারকে উপসচিব উন্নয়ন-২ অধিশাখা মাহমুদ হাসানকে তদন্তকর্মকর্তা নিয়োগ করে আগামী পনের কার্যদিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
কিন্তু তদন্ত শুরু না করেই শুধুমাত্র অভিযোগ পত্রের ভিত্তিতে নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলামকে সোমবার পাউবোর সহকারী পরিচালক (প্রশাসন ২) প্রদীপ কুমার বসাক স্বাক্ষরিত এক আদেশে বদলি করা হয়।
এ ব্যাপারে, নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, দরপত্রে কোনরকম অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব পনির উদ্দিন আহমেদ ৪০ টি গ্রুপের দরপত্রের সিংহভাগই তার মনোনীত ঠিকাদারদের দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। নিয়ম মেনে কাজ বিতরণ করায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমার নামে মনগড়া অভিযোগ করেছেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির নেতা আলহাজ্ব পনির উদ্দিন আহমেদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের করা হলে তিনি বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী কোনো জানান না আমাকে। কোথায় কি হচ্ছে তা জানা নেই। আমি পিএম কার্যালয়সহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছি।
এদিকে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে নদ-নদী ভাঙ্গনরোধে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। কর্মকালীন সময়ে হঠাৎ করে নির্বাহী প্রকৌশলীর বদলীর আদেশে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষের আশঙ্কা নির্বাহী প্রকৌশলীর বদলি জনিত কারণে থমকে যাবে ভাঙ্গন প্রতিরোধে চলমান কাজ।
এ অবস্থায় প্রকল্পের কাজ চলমান রাখতে নির্বাহী প্রকৌশলীর বদলি বাতিল করে তদন্তের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় জনগণসহ সুধী সমাজ।
সাধারণ জনগণের দাবি, প্রকৃত তদন্ত করলে সত্যটা বেরিয়ে আসবে। এমপির দেওয়া অভিযোগ মিথ্যা হলে প্রকৌশলীকে স্বপদে পুনঃবহাল করা হোক।