Severity: Warning
Message: mysqli::real_connect(): Headers and client library minor version mismatch. Headers:100324 Library:30120
Filename: mysqli/mysqli_driver.php
Line Number: 201
Backtrace:
File: /home/bnnews24/public_html/application/controllers/SS_shilpi.php
Line: 6
Function: __construct
File: /home/bnnews24/public_html/index.php
Line: 316
Function: require_once
প্রকাশ: ১৭ অগাস্ট, ২০২০ ০০:০০ পূর্বাহ্ন
মুহাদ্দিস আব্দুল গাফফার আল-মাক্কী : জাতি সামগ্রিকভাবে যে সম্পত্তির মালিক তাই হলো জাতীয় সম্পদ। রাষ্ট্রের সকল ব্যক্তির ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত সম্পত্তির কে একত্রে জাতীয় সম্পত্তি বলা হয়। তাছাড়া জনগণের সুনাম, নৈপুণ্য, দক্ষতা ইত্যাদি ও জাতীয় সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব কিছুই একমাত্র মালিক আল্লাহ। মানুষ পৃথিবীতে তার প্রতিনিধি এবং তার সম্পত্তির জিম্মাদার, ভোগ ও বিলি বণ্টন করার অধিকারী মাত্র। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন।
অর্থাৎ- যা কিছু আকাশসমূহে রয়েছে এবং যা কিছু জমিনে আছে সবই আল্লাহরই। (সূরা বাকারা ২৮৪)।
আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন- আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি। (সূরা বাকারা -৩০)। সকল মানুষকে খলিফা বা প্রতিনিধি ঘোষণা করেছেন। তিনি তোমাদের পৃথিবীতে প্রতিনিধি নিয়োগ করেছেন (সূরা ফাতির)।
মহানবী (সা:) এরশাদ করেছেন- তোমাদের একটি লোকই এক একজন রক্ষক এবং তোমাদের প্রত্যেককেই অধীনাস্থ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। বুখারী মুসলিম।
অতএব কোরআন ও হাদিসের আলোকে দেশে যাবতীয় সম্পত্তি হেফাজত করা দরকার ও প্রত্যেক নাগরিকের উপরে ফরজে আইন। আর এই দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে যেমন দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তেমনি আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে।
আল্লাহ ইরশাদ করেন- তিনি সত্বর হিসাব গ্রহণকারী।
সম্পত্তি সংরক্ষণের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে মহানবী (সা) ইরশাদ করেন- আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি তার সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ (বুখারী)। এখানে সম্পত্তি সংরক্ষণকারী শাহাদাতের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
মূলত জাতীয় সম্পত্তি সংরক্ষণ ও সঠিক আয় ও ব্যয়ের উপর নির্ভর করে জাতীয় উন্নতি, রাষ্ট্রের উন্নতি। আল্লাহর খলিফা হিসেবে সরকারও প্রত্যেক নাগরিকের ওপর জাতীয় সম্পত্তি হেফাজত করা একটি পবিত্র আমানতও বটে।
আর এই আমানত রক্ষা ব্যাপারে আল্লাহ এরশাদ করেন- আল্লাহ তোমাদেরকে যাবতীয় আমানত মালিকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। (সূরা নিসা-৫৮)।
জাতীয় সম্পত্তি সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে অবশ্যই আমানতের খেয়ানত করা হবে এবং তার ঈমান ও থাকবে না। এব্যাপারে মহানবী সাল্লাম ইরশাদ করেন- যার মধ্যে আমানতদারী নাই তার মধ্যেই মান ঈমানও নাই (রায়হাকী)।
সে কারণেই যুগে যুগে পয়গম্বর ও খোলাফায়ে রাশেদীনগণ জাতীয় সম্পত্তি হেফাজতের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। যেমন, হযরত ইউনুস (আ) দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মিশরের বাদশাকে সম্পত্তি সংরক্ষণে পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন- হে বাদশা! আপনি আমাকে এই দেশের ধন-ভান্ডারের নিযুক্ত করুন। আমি বিশ্বস্ত রক্ষক এবং ওই ব্যাপারে জ্ঞানবান। (সূরা ইউনুস)।
এখানে একথাও বুঝা যায় যে, হেফাজত দ্বারা জাতীয় সম্পত্তি হেফাজত ও জ্ঞান দ্বারা এই হেফাজতের ও আইনের সঠিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
হযরত সুলাইমান (আ) বাদশা হয়েও জাতীয় সম্পত্তি দেখা শোনার দায়িত্ব প্রচুর্য থাকা সত্বেও সংশয় করেছেন। যার বর্ণনা সূরা সাদের মধ্যে রয়েছে।
খোলাফায়ে রাশেদার দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা) রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া সত্বেও রাষ্ট্রীয় তথা জাতীয় সম্পত্তি তদন্ত করতে। এমনকি জাতীয় সম্পদের ব্যবহার ও মিতব্যায়িতা নিদর্শন তিনি রেখে গেছেন। তিনি রাষ্ট্রীয় কাজ সমাপ্তি হওয়ার সাথে সাথে আলো নির্বাসিত করে দিতেন। এ থেকে বোঝা যায় সম্পত্তি ব্যক্তিগত কাজেও ব্যবহার করা জায়েজ নেই।
কোরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে সম্পত্তি হেফাজত করার দরুন যেমন পার্থিব কল্যাণ ও উন্নত সাধিত হয় তেমনি পরকালেও মুক্তি লাভের আশা করা যায়। কেননা কুরআনে মহান আল্লাহ সম্পত্তি হেফাজত করার পরিবর্তে আত্মসাৎ করার সম্পূর্ণ হারাম ঘোষণা করেছেন।
এরশাদ হচ্ছে- তোমরা পরস্পরে অন্যায় ভাবে ওপারের ধন সম্পদ ভক্ষণ করো না (সূরা বাকারা ১৮৮)।
বর্তমানে আমাদের সমাজে যারা বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভাংচুরের পথকে বেছে নিয়ে জাতীয় সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করে। তারা দেশ ও জাতির শত্রু এবং আল্লাহর নিকট ঘৃণিত ব্যক্তি।
এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন- আল্লাহ বিশৃংখলাকারীদের কে ভালোবাসেন না। (সূরা বাকারা-২০৫)।
তাই আমাদের সকলের উচিত জাতীয় সম্পদ বলতে যা বুঝায় উহার সার্বিক সংরক্ষণে যত্নবান হয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা এবং ক্ষতি সাধনের পরিবর্তে সংরক্ষণ নীতি অবলম্বন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।
আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন। আমিন।
মুহাদ্দিস আব্দুল গাফফার আল-মাক্কী
প্রধান মুহাদ্দিস (সহকারী অধ্যাপক)
তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা, প্রধান শাখা।
বিশিষ্ট গবেষক, লেখক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।