ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অহংকারী ও অবাধ্য জাতি নিশ্চয়ই ধ্বংস হবে


প্রকাশ: ২৪ জুন, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


অহংকারী ও অবাধ্য জাতি নিশ্চয়ই ধ্বংস হবে

   

বিএন নিউজ ডেস্ক : আল্লাহর অবাধ্য ও অহংকারী জনগোষ্ঠী মধ্যে আ'দ জাতি, হজরত হুদ (আঃ) ছিলেন আ'দ জারির প্রেরিত নবী। আ'দ জাতির ধ্বংসের সংক্ষিপ্ত ঘটন কোরআনে অনেক সূরায় আলোচিত হয়েছে।
আদ জাতি ইয়েমেনের হাজরা মাউত অঞ্চলে তারা বসবাস করতে। দীর্ঘাকৃতি (৭০-৪০০) গজ লম্বা এবং দৈহিকভাবে খুবই  শক্তিশালী ও পাথর ছেদন শিল্পে তাদের বিশেষ খ্যাতি ছিল।

কুসংস্কারাচ্ছন্নতা ও মূর্তি পূজায় লিপ্ত হয়ে পড়ে। দৈহিক শক্তির কারণে তারা বিভিন্ন অত্যাচার অন্যায় ও উচ্ছঙ্খলতা ও অমার্জনীয় পাপের জীবন যাপন করতে শুরু করে।

এই পরিস্থিতিতে আল্লাহ হুদ (আঃ) কে তাদের উদ্দেশ্যে পাঠান, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শুকুর গোঁজার ও সৎ কাজের আহ্বান দেয়ার জন্য।
সূরা আ'রাফ আয়াত ৬৫: আল্লাহ বলেন,আদ জাতির নিকট তাদের ভ্রাতা হুদ কে পাঠায়া ছিলাম, হুদ বলিল, হে ভ্রাতাগণ! আল্লাহ এবাদত করো, তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নাই, তোমরা কি সতর্ক হবে না? 

তাদের সামান্য কিছু লোক ছাড়া বাকি সবাই তাঁকে প্রত্যাখ্যান করলো।
আয়াত ৬৬: তাঁর জাতির নেতারা বলিল, আমরা তোমায় দেখিতেছি বোধহীন এবং তোমাকে আমরা মিথ্যাবাদী ভাবি।
আয়াত ৬৭: হুদ বলিল,ভ্রাতাগণ! আমাতে বেওকুফীর কিছুই নাই,আমি প্রেরিত সারা জাহানের পালনকর্তা হতে।
আয়াত ৬৮: আমার রব্বের সত্যবানি পৌছাইতেছি,আমি তোমাদের বিশ্বস্ত হিতাকাংখী।

হুদ (আঃ) কোনো কথাই তারা বিশ্বাস করলো না ।এ অবস্থায় আল্লাহর শাস্তি তাদের ওপর নেমে আসতে লাগল।

প্রথমে  দীর্ঘস্থায়ী তিন বছর বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকে খড়ার কবলে পরল। আপতিত গজবে শস্যক্ষেত সমূহ শুষ্ষ বালুকাময় মরু ভূমিতে পরিণত হয়।বাগ বাগিচা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। এতেও তারা শিরক ও মূর্তি পূজা ত্যাগ করেনি।

সূরা হুদ আয়াত ৫১: হে আমার কত্তম!এর পরিবর্তে তোমাদের কাছে কোনো পরিশ্রমিক চাই না, আমার পারিশ্রমিক আছে আমার সৃষ্টিকর্তার কাছে তবুও বুঝবে না? 

আয়াত ৫২: হুদ (আঃ) বলল,ভাইসব! স্বীয় রব্বের কাছে ক্ষমা চাহ, তার পর করো তাওবাহ, তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টি বর্ষাইবেন এবং বাড়াইবেন তোমাদের শক্তিকে আরো, তোমরা অবাধ্যতা করিয়া বিমুখ হইও না।

হুদ (আঃ) তাদের কে বললেন,এর মাধ্যমে আল্লাহ তালার পক্ষ থেকে তোমাদের সতর্ক করা হচ্ছে। কিন্তু অত্যচারি আদ জাতি তার কোনো উপদেশ শুনলনা,তারা কুফরী শিরক ও উচ্ছঙ্খলতার পথেই এগিয়ে চলো।

সূরা হুদ আয়াত ৫৩: আ'দ জাতির ওরা বলিল,হে হুদ! তুমি আমাদের নিকট কোনো দলিল আনো নাই, আমরা আমাদের প্রভূকে ছাড়িতে পারিনা তোমার কথায়, আমরা তোমায় বিশ্বাস করি না।

আয়াত ৫৪: ওরা বলিল, আমাদের মাবুদের কেহ মরা পড়িয়াছে,হুদ বলিল,আমি আল্লাহ কে সাক্ষী ও তোমাদেরকেও সাক্ষী করিতেছি, তোমরা যাকে শরিক করো আমি তাহইতে বিমুখ।

আয়াত ৫৫: হুদ (আঃ) বলল, আল্লাহ ছাড়া আমার বিরুদ্ধে সম্মিলিত ষড়যন্ত্র পাকাও, আমাকে অবসর দিওনা।
আয়াত ৫৬: আমার ও তোমাদের রব্বের উপর ভরসা রাখি, জীব-জন্তু এমন কিছুই নাই যা তাঁর অধিনাস্ত নয়, আমার রব্ব আছেন সরল পথেই।
আয়াত ৫৭: এরপরও তোমরা বিমুখ হইলে আমি যা সহ প্রেরিত তা তোমাদের কাছে পৌছিয়াছি এবং আমার রব্ব তোমাদের স্থলে অন্য কত্তমকে স্থালাভিষিক্ত করিবেন, তার কোনই ক্ষতি করিতে পারবে না, আমার রব্ব সকল কিছুর রক্ষক।

অবশেষে তারা বাধ্যহয়ে আল্লাহ কাছে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে।তখন আসমানে সাদা, কালো ও লাল মেঘ দেখা দেয় এবং গায়েবি আওয়াজ আসে যে, তোমরা কোন টি পছন্দ করো? লোকেরা বললো কালো মেঘ। তখন কালো মেঘ এলো, লোকেরা স্বাগত জানিয়ে বললো,"এটি আমাদের বৃষ্টি দেবে" জবাবে বলা হয় , বরং এটা সেই বস্তু যা তোমরা তাড়াতাড়ি চয়েছিলে।এটা বায়ু এতে রয়েছে মর্মদন্ত শাস্তি। পালনকর্তা তাঁর আদেশে সব কিছুই ধ্বংস করে দেবে।

আ'দ জাতি অহাংকার করে বললো,কে আছে আমাদের চেয়ে শক্তিশালী?
পরিশেষে তাদের উপর পরদিন ভোরে আল্লাহর চুড়ান্ত গজব নেমে আসে প্রচন্ড ঝড় ঝঞ্ঝা পাঠানো হলো, এই শাস্তি একাধারে আটদিন ও সাতরাত্র ব্যাপী অনবরত ঝড় তুফান তাদের উপর প্রবাহিত হলো।

সূরা আল হাক্ককাহ আয়াত ৬-৭ , আল্লাহ বর্ণনা করেন, মেঘের বিকট গর্জন ও বজ্রঘাতে বাড়ীঘর ধ্বংস হয়ে যায়।প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে গাছ-পালা সব উপড়ে যায় মানুষ ও জীবজন্তু শুন্যে উড়তোউল্ঙিত হয়ে সজোরে জমীনে পতিত হয়। 

আল্লাহ নির্ধারিত গজবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে অহংকারী ও অবাধ্য পুরো আদ জাতি শেষ হলো। শুধুই বেঁচে রইলো হুদ (আঃ) উপর যারা পূর্ণ আস্থা ও ঈমান এনেছিলেন।

সূরা হুদ আয়াত ৫৮: আল্লাহ বলেন, আমার নির্দেশ আসিল হুদ ও তাঁর উপরে বিশ্বাসীদের প্রতি আমার অনুগ্ৰহে দয়া ও রক্ষা করলাম কঠিন শক্ত আজাব হইতে।

শিক্ষনীয় বিষয়ঃ আল্লাহ অহংকারী ও অবাধ্য জনগোষ্ঠীকে পছন্দ করেন না। সর্বাস্থায় মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও রহমত কামনা করতে বাধ্য থাকতে হবে।

আল্লাহ পরিপূর্ণ বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন।


   আরও সংবাদ