ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ ভাদ্র ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

নরসিংদী থেকে বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির বন্ধু সাদা বক


প্রকাশ: ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ ১৩:০০ অপরাহ্ন


নরসিংদী থেকে বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির বন্ধু সাদা বক

   

বোরহান মেহেদীঃ ষড়ঋতুর এই দেশ আমাদেরই বাংলাদেশ। পালা পরিক্রমায় এখন এলো বলে বসন্ত কাল। শীত বিদায় পালা। যদিও এখনো এর আবেশ প্রকৃতিতে বিদ্যমান। প্রকৃতিতে সবুজ অপরূপ সুন্দরের প্রতীক। ফসলের মাঠে ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা বকের লুকোচুরি যেন চিরন্তন বাংলার এক নয়নাভিরাম রূপ।

এই সময়টাতে নরসিংদীর বিল ও জলাশয়ের ধারে দল বেঁধে নামতো দেশি সাদা বক। এ যেন বক পাখির মিলনমেলা। ধানের ক্ষেত চাষ করার সময়ও শত শত বক উড়ে এসে লাঙ্গলের ফলার চার পাশে ঘিরে বসতো। উঠে আসা মাটির নিচের পোকামাকড় খেয়ে ক্ষুধা মেটাতো। সারিসারি এসব সাদা বক দেখে, সব বয়সী মানুষের মনে আনন্দের খোড়াক জোগাতো সে সময়।

তাছাড়াও শীতলক্ষা ও মেঘনার ওপরে সাদা মেঘ আর ফসলের কাদাঁজলে সাদা বকের শীতকালীন অবস্থান এক মনোমুগ্ধকর দৃর্শ্য ছিলো। ওদের দুরন্ত উড়াউড়ি কিচিরমিচির সবমিলে দৃর্শ্যপট বদলে যেতো। অপুর্ব এদের এই কোলাহল। তখন এ অঞ্চল ছিলো বকের অভয়াশ্রম। 

সাদা ও কানি বক, এদের প্রচুর পরিমানে দেখা মিলতো এসময়। বিশেষ করে বিল, মজাপুকুর, ডোবায়, ফসলের মাঠে। সাধারনতঃ জলাধার ঘেষে বক বাস করে থাকে। এরা গাছের মগ ডালে বাসা বেধে থাকতো। আর এই পাখির প্রধান খাদ্য তালিকার মধ্যে মাছ ও পোকা মাকড়ই মুখ্য ছিলো । 

সকল বর্ণনা ও সাহিত্যরস অলংকার আজ ফিকে হয়ে যাচ্ছে। বাঙ্গালীর কাব্যে প্রাণছোঁয়া জীববৈচিত্রের আদরমাখা এই দেশী পাখি এখন সর্বত্র হারিয়ে যাচ্ছে। শুধু গ্রামগঞ্জে ফসলের জমিতে ও শহরের লেকগুলোতে শীতের মৌসুমে দেখা মিলে সল্পসংখ্যক বকের।

জেলার পলাশ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম পাইকসা এলাকার কৃষক মো: কাইয়ুম জানান, এই সাদা বক আমাদের অনেক উপকার করে। ইরিধানের চারা লাগনো জমিতে মাজরা পোকা, পামরি পোকা, কেছো, ফড়িং, তুরকুলা পোকা দেখা যায়। এতে ফসলের অনেক ক্ষতি হয়। ক্ষেতে পানি দেওয়ার পর এই সব পোকা ভাসতে থাকে আর তা বক খেয়ে সাবার করে। এতে ফসলের উপকারে আসে। 

কিন্তু এখন চিরন্তণ বাংলার সাহিত্য অলংকার ও গ্রামের ঐতিস্য অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতিক এই সাদাবক আগের মতো আর দেখা মিলেনা। এই পাখিটি বৈষয়িক পরিবেশ দুষণ , লোভী পাখি শিকারীদের ক্রমশঃ ফাঁদে পড়ে এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। 

পলাশের প্রাণী ও পশুসম্পদ সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠকর্মী চিকিৎসক মাহবুব আলম জানান, বক আমাদের একটা প্রাকৃতিক বন্ধু। বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ সংরক্ষন বিষয়টি খুব গুরুত্বপুর্ণ । বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন কীটনাশক ব্যবহার কমাতে হবে। যাতে বিষাক্ত মাছ ও পাকামাকড় খেয়ে বকপাখি মরতে নাপারে। 

সুন্দর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র বাঁচিয়ে রাখার জন্যে আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহারের বিকল্প নেই। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে শষ্য উপকারী পাখি ফসলি জমি থেকে ক্ষতিকর পোকামাকড় নির্ভয়ে খেয়ে ফেলতে সুযোগ পাবে। এতে করে মাটি তার পরিপূর্ণ পুষ্টিতা পাবে, ফসল ফলবে ভালো। আর কৃষক হবে লাভবান অন্য দিকে রক্ষা হবে দেশী বক পাখির অভয় নিবাস।


   আরও সংবাদ