ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

ভবদহের পানি সরাও, মানুষ বাঁচাও দাবিতে মানববন্ধন


প্রকাশ: ৬ অক্টোবর, ২০২০ ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন


ভবদহের পানি সরাও, মানুষ বাঁচাও দাবিতে মানববন্ধন

মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি : যশোর-খুলনার মরণ ফাঁদ ভবদহের পাড়ে কান্নার রোল পড়ে গেছে। রান্না ঘরে পানি, বসত ঘরে পানি, গোয়ালঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ধর্মীয় উপসনালয়ে পানিতে সয়লাব। এখন সন্তান-সন্ততি নিয়ে খোলা আকাশের নীচে পানির উপরেই থাকতে হবে। 

আজ ভবদহ মশিয়াহাটী বহুমুখি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে মানববন্ধনে আসা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নারী-পুরুষের গগণ বিদারি আহাজারিতে এসব কথা উঠে আসে। এসময় কোমর পানিতে দাড়িয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।

ভবদহ সমস্যা সমাধানের নামে ৮শ’৮ কোটি টাকার মাটি কাটা প্রকল্প বাতিল ও ভবদহের স্থায়ী সমাধানে টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) বাস্তবায়নের দাবিতে ভবদহ পানি নিস্কাশন সংগ্রাম কমিটির ডাকে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়।

এলাকা ঘুরে ও মানববন্ধনে আসা ভূক্তভোগিরা জানায়, বছরের পর বছর মরন ফাঁদ ভবদহের যাতাকলে পিস্ট হয়ে আজ আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছে। যশোর-খুলনা জেলার ২৭ বিলের পানি নিস্কাশনের একমাত্র প্রবাহ/প্রবেশ পথ ভবদহ স্লইচ গেট। এ গেট সংলগ্ন শ্রী, হরি, টেকাসহ বিভিন্ন ছোট-বড় খাল পলিতে জমে বিল থেকে উচু হওয়ায় এখন আর এক বিন্দুও পানি সরছে না। 

একদিকে উজানের ঢল অপরদিকে আকামশ বৃষ্টির কারণে ভবদহ পাঁড়ের কমপক্ষে শতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এলাকায় মানুষের মাঝে চরম দুর্দশা নেমে এসেছে। এ অবস্থা বিরাজ করতে থাকলে  ভবদহ বিল পাড়ে জীব-বৈচিত্রে চরম মানবিক বিপর্যয় নেমে আসবে। 

পানি সরানোর দাবিতে ফুঁসে উঠেছে পানিবন্দী মানুষ। দাবি তুলছেন, ভবদহ জলাবদ্ধার স্থায়ী সমাধানের জন্য টিআরএম(রিভার টাইডাল ম্যানেজমেন্ট-জোয়ারাধার) বাস্তবায়নের। 

বিভিন্ন শ্লোগান সম্বলিত প্লাকার্ড, ফেস্টুন হাতে নিয়ে তাঁরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন। মাঘী পূর্ণিমার আগেই বিল কপালিয়ায় টিআরএম প্রকল্প অবিলম্বে বাস্তবায়ন করসহ, এলাকার সকল নদী-খাল পুনরুদ্ধার ও অবমুক্ত করে আমডাঙ্গা খাল প্রশস্ত ও গভীর খনন করতে হবে হবে, ভবদহ স্লুইসগেটের ২১ ও ৯ ভেন্টের মাঝ দিয়ে সরাসরি নদী সংযোগ দিতে হবে, ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসন, অপরিকল্পিত মাছের ঘের অপসারনসহ পানিপ্রবাহের সকল বাঁধ উচ্ছেদ করতে হবে। 
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রনজিৎ বাওয়ালী, প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, যুগ্ম আহবায়ক গাজী আব্দুল হামিদ, সদস্য সচিব চৈতন্য পাল, অনিল বিশ্বাস, কনৌজ চন্ডাল, শিবুপদ বিশ্বাস, কানু বিশ্বাস, মানব মন্ডল, কার্তিক বকশি, রাজু আহমেদ, পল্লী ডাক্তার শহিদুল ইসলাম,উত্তম কুমার বিশ^াস, উৎস কুমার, শেখর বিশ^াস, কার্তিক বকসি, সুকৃতি রায়, প্রদীপ হালদার. অনির্বান ধর প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, এক মহাবিপর্যয় জলাবদ্ধতার আশংকায় আমরা শঙ্কিত। ইতিমধ্যে এলাকার শতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে  প্লাবিত গ্রামের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় দুই লাখ মানুষ। আর একটু বৃষ্টি হলে মণিরামপুর, কেশবপুর ও অভয়নগর উপজেলা শুধু নয় যশোর সদর উপজেলা ও শহরের এক অংশ এবং সেনানিবাস পর্যন্ত জলাবদ্ধতা বিস্তৃত হবে। এই এলাকার মানুষ কীভাবে বাঁচবে সেটাই এখন প্রশ্ন।

অপরদিকে নদী শুকিয়ে আছে। ভবদহ ইসগেট থেকে বারো আউড়িয়া মোহনা পর্যন্ত ৫০-৬০ কিলোমিটার বিপদজনকভাবে ভরাট হয়ে গেছে। বার বার সরকার, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত ও ক্ষোভ-বিক্ষোভ করলেও তাতে কর্ণপাত করছে না। যথাসময়ে বিল কপালিয়া ও অন্যান্য বিলে টিআরএম চালু করলে এই পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না বলে বক্তাদের দাবি। 

ভবদহ ইসগেটের মাধ্যমে নদীকে হত্যা করা হয়েছে। এটা একটা মরণফাঁদ। এর কোন কার্যকারিতা নেই। এই প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিবেশ ও জনমত সমীক্ষার নীতিমালা না মেনে  জনমতকে উপেক্ষা করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৮০৮ কোটি টাকার প্রকল্প উত্থাপন করেছে, যা সরকারি নীতিমালার চরম লঙ্ঘন। প্রকল্পে তিন-ফসলী বিলগুলোকে জলাশয় দেখানো হয়েছে, যা চরম মিথ্যাচার ছাড়া কিছু নয়। 

পলিবাহিত নদী কেটে নদী রক্ষার যুক্তি অবৈজ্ঞানিক ও অর্থ লোপাটের ফন্দি ছাড়া কিছু নয়। নদী কেটে নদী বাঁচানো যায় না। সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথে না গিয়ে সমস্যাকে জিইয়ে রেখে প্রতি বছর নদীতে পাইলট চ্যানেল খননের নামে অর্থ অপচয়, দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

 প্রতি বছর নদীতে পাইলট চ্যানেল খনন করা হয় তার ফলাফল শূন্য। ভবদহ ইসগেটের ৯-ভেন্টের সামনে ৬০০ মিটার খোঁড়াখুড়ি হয়েছে তার কোন কার্যকারিতা নেই। সেখানে মাছচাষ করছে ভবদহ ক্যাম্পের পুলিশ। 

তাই ভুক্তভোগী জনগন অচীরেই ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য দীর্ঘ দিনের পরিক্ষীত ভবদহের বিভিন্ন বিলে পর্যায়ক্রমে টিআরএম প্রকল্প চালুর জন্য সদাশয় সরকারের প্রতি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জোরালো দাবী জানান।a


   আরও সংবাদ