ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ ভাদ্র ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজধানীতে মেডিনোভা ও সিরাজুল ইসলাম হাসপাতালসহ ৪ হাসপাতালকে ৫৯ লাখ টাকা জরিমানা


প্রকাশ: ২৪ অগাস্ট, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


রাজধানীতে মেডিনোভা ও সিরাজুল ইসলাম হাসপাতালসহ ৪ হাসপাতালকে ৫৯ লাখ টাকা জরিমানা

   

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর মালিবাগ চৌরাস্তায় মেডিনোভা মেডিকেল হাসপাতাল, সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও আমেরিকা বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে অভিযান চালায় র‌্যাব। এসময় বিপুল পরিমাণে মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল সামগ্রী ও রিএজেন্ট পাওয়া গেছে। কোভিড-১৯ ইউনিট ও মাইক্রোবায়োলোজি ল্যাব একই সঙ্গে স্থাপন করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। এছাড়াও হাসপাতালে একাধিক রোগীর ব্লাড স্যাম্পল একসঙ্গে রাখা হতো বলেও প্রমাণ মিলেছে।

মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) বিকেল ১২ টা থেকে শুরু হয়ে চলে রাত ৯টা পর্যন্ত র‌্যাব-৩'এর সার্বিক সহযোগিতায় হাসপাতালগুলোতে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে অভিযান চালায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, অভিযান শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (হাসপাতাল) সালমা তানজিয়া।

এসময় উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব-৩'এর ঝিলপাড় ক্যাম্প কমান্ডার সাখাওয়াত হোসেনসহ তার সঙ্গীয় র্ফোস।

এসব অনিয়মের অভিযোগে সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কে ৩০ লাখ, পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ২০ লাখ, আমেরিকা বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালকে ৩ লাখ এবং মেডিনোভা মেডিকেল হাসপাতালকে ৬ লাখ টাকা। সর্বমোট ৪ হাসপাতালকে ৫৯ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই সঙ্গে এসব অনিয়ম ঠিক করতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, হাসপাতালটিতে মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট, টেস্টিং কিট ব্যবহার, বিপুল পরিমাণে মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল সামগ্রী পাওয়া গেছে। অন্য হাসপাতাল থেকে রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে নিজেদের প্যাডে রিপোর্ট দিতো। হাসপাতালের রোগীদের রক্তের স্যাম্পল সংগ্রহ করে একসঙ্গে রাখতো। ল্যাবে আমরা বেশকিছু প্যাট্রিটিডিক্স পেয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী একজন রোগীর রক্তের স্যাম্পল রাখার জন্য একটি প্যাট্রিটিডিক্স ব্যবহারের কথা। তবে হাসপাতালের ল্যাবে একটি প্যাট্রিটিডিক্সে একসঙ্গে তিনজন রোগীর রক্তের স্যাম্পল রাখা হতো। এতে আমরা ধারণা করছি, হাসপাতালে রোগীদের রক্তের সব পরীক্ষা রিপোর্ট ভুয়া হয়েছে।

হাসপাতালের অনিয়ম সম্পর্কে সারওয়ার আলম বলেন, হাসপাতালের ১২ ও ১৩ তলায় কোভিড-১৯ ইউনিট করা হয়েছে। একই ফ্লোরে রয়েছে হাসপাতালটির মাইক্রো বায়োলোজিক্যাল ল্যাব। ওই তলায় বাম পাশে কোভিড-১৯ ইউনিট এবং ডান পাশে ল্যাব। কোনো হাসপাতালে কোভিড-১৯ ইউনিট ও মাইক্রো বায়োলোজিক্যাল ল্যাব একই ফ্লোরে একসঙ্গে থাকতে পারে না।  

‘মাইক্রো বায়োলোজিক্যাল ল্যাব থাকলেও সেখানে কোনো মাইক্রো বায়োলোজিস্ট ছিল না। ল্যাবের অবস্থাও খুব খারাপ দেখা যায়। ব্লাড সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়নি। সাধারণভাবে ফ্রিজিং করতে দেখা যায়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, হাসপাতাল গুলোর ম্যানেজমেন্টে বেশি সমস্য রয়েছে। হাসপাতালে একাধিক জনবল থাকা সত্বেও অধিকাংশ হাসপাতাল লেজার মেন্টেন করে না। এবং অবহেলা করেছে। এই জন্য অনেক হাসপাতালকে জরিমানা করা হয়েছে।

বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে অভিযান পরিচালার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে কিনা? সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সারওয়ার আলম বলেন, আইন অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা ক্ষেত্রে কারো অনুমোতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ আইন অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী সম্পূর্ণ স্বাধীন। কোর্ট পরিচালনা করার ক্ষেত্রে পরিচালনাকারীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা আইন সংবিধান অনুযায়ী সরকার দিতে বাধ্য। আগে অভিযান পরিচালনা করার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়কে জানাতে হতো। তবে বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আমাদের অভিযানের সঙ্গে থাকছে। এতে বাস্তব চিত্রগুলো তারা সরেজমিনে থেকেই জানতে পারছে। আগামীতেও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে থেকে সহায়তা করবে।

অভিযানে থাকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সালমা তানজিয়া বলেন, হাসপাতালটিতে যেসব নিয়ম মানার কথা তার একটা নিয়মও তারা মানেনি। তাদের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ মাইক্রোবায়োলোজিক্যাল ল্যাব ও করোনা ইউনিট একই জায়গায়। একই দরজা দিয়ে বের হয়ে একই জায়গায় মাইক্রোবায়োলজি ল্যাব ও করোনা ইউনিটের আইসিইউ। এটা আমাদের নিয়মিত অভিযান। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সারওয়ার আলম যে হাসপাতালে যাচ্ছেন সেই হাসপাতালেই বিভিন্ন অনিয়ম দেখা যাচ্ছে। আপনারা কেন এ ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছেন না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা আমাদের সমন্বিত অভিযান।

নিয়মিত অভিযান পরিচলনা করলেও অবস্থার উন্নতি হচ্ছে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে যুগ্ম সচিব সালমা তানজিয়া বলেন, আগের চেয়ে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। এবং সবাই আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি সচেতন হয়েছে।


   আরও সংবাদ