প্রকাশ: ২৪ জুলাই, ২০২২ ১৯:৫৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা হত্যা চেষ্টা মামলার দন্ডপ্রাপ্ত আসামি নাজমুল মাকসুদ মুরাদের গার্লফ্রেন্ড নাসরিন আক্তার শিমলা মুরাদের সহযোগিদের নিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় ইতিমধ্যে চাঁদাবাজি করছে মুরাদের নামে। এছাড়া শীর্ষ সন্ত্রাসী আরমান ও তারেকুজ্জামান রাজিবকে কারামুক্ত করতে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এই টাকা হাতানোর পর উল্টো আরমান ও রাজিবের স্বজনদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদও ছড়িয়েছে এই শিমলা। তার বিরুদ্ধে মানহানি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
জানা গেছে, ক্যাসিনো অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়ার পরে আদালতে ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে শিমলার সঙ্গে পরিচয় হয় আরেক সন্ত্রাসী নাজল মাকসুদ মুরাদের। পরবর্তীতে তাদেও মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মুরাদের নির্দেশে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছে। নিম্নে সারির সন্ত্রাসীদের সকলে চিনলেও আড়ালে থাকা এই শিমলাকে অনেকেই চেনেনা।
গাইছয়া কাশেম সেন্টারে শিলার অস্তানা, সেখানে বসেই সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ করে। এলাকায় লেডি টেরর নামে পরিচিত শিমলা। এহেন কাজ নেই যা তার বাহিনী দিয়ে চলছেনা। তবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব কর্মকান্ড চালানো হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি। তার অত্যাচাওে অতিষ্ট হয়ে এলাকার ভুক্তভোগীরা একাধিক জিডি করেছেন থানা। তার বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। কিন্তু সুচতুর শিমলা নানা কায়দায় পুলিশকেও ম্যানেজ করে এলাকায় বীর দর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এদিকে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টার বিস্ফোরক আইনের মামলায় ১১ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। একইসঙ্গে এ মামলায় অপরাধ প্রমাণ না হওয়ায় একজনকে খালাস দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন বিচারক। ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জাহিদুল কবির এ দিন ধার্য করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রশীদ, মিজানুর রহমান, মো. শাজাহান বালু, গাজী ইমাম হোসেন, গোলাম সারোয়ার ওরফে মামুন, জজ মিয়া, ফ্রিডম সোহেল, সৈয়দ নাজমুল মাকসুদ মুরাদ, খন্দকার আমিরুল ইসলাম কাজল, জাফর আহমেদ ও হুমায়ুন কবির ওরফে হুমায়ুন। এ ছাড়া অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় হুমায়ুন কবির ওরফে কবিরকে খালাস দেওয়া হয়।
নাজমুল মাকসুদ মুরাদ ১৯৯৬ সালে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। ২০১১ সালে বাংলাদেশের অনুরোধে রেড নোটিশ জারি করে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল। সেই পরোয়ানার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ২ ফেব্রæয়ারি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি তাকে আটলান্টায় গ্রেপ্তার করে। এর পর থেকে তিনি সে দেশের নিরাপত্তা সংস্থার হেফাজতে ছিলেন। মুরাদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা আছে। এর একটি হত্যা, একটি হত্যাচেষ্টা ও একটি চাঁদাবাজি। মুরাদ ১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট মধ্যরাতে ফ্রিডম পার্টির সদস্য কাজল ও কবিরের নেতৃত্বে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হামলা করেন। তারা সেখানে গুলি করেন ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীরাও এ সময় পাল্টা গুলি চালান। এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা হয়।
১৯৯৭ সালের ২০ ফেব্রæয়ারি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ মামলার অভিযোগপত্র দেয়। এতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) সৈয়দ ফারুক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুর রশিদ ও মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) বজলুল হুদা এবং নাজমুল মাকসুদ মুরাদসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়। ২০০৯ সালের ২৭ আগস্ট থেকে এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। এ মামলার দুই আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান ও বজলুল হুদাকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ফাঁসি দেওয়া হয়। অন্য দুটি মামলার মধ্যে খুনের মামলাটি ছিল পলাশ হত্যা। ১৯৯৫ সালে মতিঝিলে খুন হন পলাশ। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মুরাদকে আসামি করা হয়। একই বছরে শাহজাহানপুরে একটি চাঁদাবাজির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।