প্রকাশ: ১০ অগাস্ট, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের সকল পর্যায়ে খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সীমিত আকারে চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য যে, চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে করোনা মহামারির কারণে দেশের সকল পর্যায়ে খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
তবে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সম্প্রতি খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালুকরণের বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে মতামত চেয়ে পত্র প্রেরণ করে।
খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করন প্রসংগে আজ সচিবালয়ে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এক জরুরি সভা শেষে বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ার প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে। আমাদের দেশেও করোনা সংক্রমণের হার নিম্নমুখী। এ প্রেক্ষিতে, আমরা খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালুকরণের বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে পত্র প্রেরণ করি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর ১০টি শর্তে সীমিত আকারে খেলাধুলা আয়োজন ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালুর বিষয়ে মতামত প্রদান করেছে। এমতাবস্থায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত শর্তসমূহ প্রতিপালন পূর্বক দেশের সকল পর্যায়ে খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সীমিত আকারে চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
প্রতিমন্ত্রী এ সময়ে করোনাকালীন সময়ে অসহায় ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠকদের জন্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন, করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই আমরা আমাদের অসহায় ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠকদের আর্থিকভাবে সহায়তা করে আসছি। প্রথম দফায় আমরা এক হাজার ক্রীড়াবিদকে এক কোটি টাকা প্রদান করি।
পরবর্তীতে আমরা আরও তিন কোটি টাকা দেশের তৃণমূল পর্যায়ের প্রায় চার হাজারের অধিক অসহায়, দুঃস্থ ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়া সংগঠক ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মাঝে বিতরণ করি। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে আরো দশ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।
আমরা সেটিও দীর্ঘ মেয়াদে রেখে খেলোয়াড়দের পাশে দাড়াতে চাই। আমি সকলকে অনুরোধ করব, স্বাস্থ্যবিধি মেনে খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নিতে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক সীমিত আকারে খেলাধুলা আয়োজন ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালুর বিষয়ে আরোপিত শর্তাবলী-
১। খেলাধুলা শুরুর আগে খেলার মাঠ ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালুর পূর্বে, মহামারি প্রতিরোধক সরঞ্জাম যেমন মাস্ক, গ্লোভস, জীবাণুনাশক এবং নন-কন্ট্যাক্ট ইনফ্রারেড থার্মোমিটার সংরক্ষণ করে সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কাজের পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। তদারকি ও বাস্তবায়ন এর দায়িত্বের জন্য একজনকে নির্দিষ্ট করলে ভাল হয়। সংশ্লিষ্ট সকল কর্মীদের স্বাস্থ্য বিধি প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।
২। সীমিত আকারে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও খেলাধুলার আয়োজন করা যেতে পারে।
৩। খেলোয়াড়, প্রশিক্ষক, ম্যানেজমেন্ট কমিটি এবং খেলাধুলা সংশ্লিষ্ট সকলের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখতে হবে ক্যাম্প শু্রুর পূর্বে প্রয়োজনবোধে সবার কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা যেতে পারে।
৪। খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণকালীন ক্যাম্পে অবস্থানের সময় স্বাস্থ্য বিধি মেনে থাকার ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। খাওয়া দাওয়ার ব্যপারে পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্য সম্মত খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। সামাজিক দুরত্ব বজার রেখে খাবার গ্রহণ ও খাবারের ব্যবহৃত থালা বাসন পরিস্কার ও জীনাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। সম্ভব হলে ডিসপোজেবল প্লেট ব্যবহার করাই ভাল। ধুমপান নিরুৎসাহিত করতে হবে। খেলোয়াড়দের ঘুম, বিশ্রাম এবং মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখতে হবে। ডিজিটাল ও অনলাইনের মাধ্যমে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
৫। খেলা ও প্রশিক্ষণের সময় ব্যক্তিগত পানির বোতল ও তোয়ালে ব্যবহার করতে হবে। ব্যক্তিগত সরঞ্জাম এবং জামাকাপড় নিজস্ব ব্যাগে রাখতে হবে। টিস্যু, রুমাল বা অন্যান্য ব্যবহৃত উপকরণ যেমন প্লাস্টার, ব্যান্ডেজ ইত্যাদি তাৎক্ষণিকভাবে উপযুক্ত পাত্রে (মুখবন্ধ ময়লার পাত্র) ফেলে দিতে হবে।
৬। অধিক জন সমাগম না করে সীমিত আকারে খেলাধুলার আয়োজন করা যেতে পারে। মাঠে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার সময় দর্শকদের সারিবদ্ধভাবে পরস্পর হতে এক মিটারেরও বেশি দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। মাঠে প্রবেশের পর নির্দিষ্ট দূরত্ব (১মিটার) বজায় রেখে বসার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি দুইজন দর্শকদের মাঝে এক সিট খালি রাখতে হবে।
৭। খেলার মাঠের প্রবেশ পথে খেলোয়াড়, প্রশিক্ষক, ম্যানেজমেন্ট কমিটি এবং বহগিরাগত দর্শনার্থীদের (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) শরীরের তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এক্ষেত্রে যাদের শরীরের তাপমাত্রা ৯৮.৪μ ফারেনহাইটের বেশি হলে তাদের মাঠে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে পাঠাতে হবে।
৮। খেলোয়াড়, প্রশিক্ষক/কোচ এবং ম্যানেজমেন্ট কমিটির মধ্যে কোভিড-১৯ এর সন্দেহভাজন কোনো রোগী থাকলে তাৎক্ষিণকভাবে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯। খেলার মাঠের আবর্জনা প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে এবং আবর্জনা সংরক্ষণকারী পাত্র প্রতিদিন জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
১০। স্টেডিয়ামে আগত সকলকে স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করার জন্য সহজে দৃশ্যমান হয় এমন স্থানে বিলবোর্ড, রেডিও, ভিডিও ও পোস্টারের মাধ্যমে সচেতনতামূলক বক্তব্য প্রচার করার ব্যবস্থা করতে হবে।
উক্ত সভায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আখতার হোসেনসহ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।