প্রকাশ: ২৪ মার্চ, ২০২১ ০৮:১১ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং সে দেশের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশ সফর করছেন। ভুটানের একটি সাংস্কৃতিক দল এ উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে। করোনা মহামারির মধ্যেও ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর এ সফর দু’দেশের মধ্যে অসাধারণ বন্ধুত্বের পরিচয় বহন করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে ঢাকায় স্বাগত জানান। তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। ডা. লোটে শেরিং সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরির্দশন করেন এবং তার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখানে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাঁকে স্বাগত জানান এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ঘুরিয়ে দেখান। সেখানে তিনি বেশ কিছু সময় অবস্থান করেন এবং পরিদর্শন শেষে ভিজিটর বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
আজ বুধবার (২৪ মার্চ) বিকালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু স্মারক বক্তৃতা প্রদান করবেন।
পারস্পারিক সম্মান, রাজনৈতিক সমঝোতা ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে এবং উভয় দেশের জনগণের সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে অত্যন্ত চমৎকার, বন্ধুত্বপূর্ণ ও ভালো প্রতিবেশীসূলভ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান। ২০০৯ সাল থেকে দু দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়, বিশেষ করে, ২০১৯ সালে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর তাৎপর্যপূর্ণ বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান ঘনিষ্ট দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো গভীর হয়েছে।
আজ সকালে অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে পরীক্ষিত বন্ধুত্বের প্রতিফলন ঘটেছে। দু’দেশের ঐতিহাসিক ও ভালো প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় গভীর বলে উভয় প্রধানমন্ত্রী একমত হয়েছেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দর্জি ওয়াংচুক এবং সেদেশের জনগণের অমুল্য সমর্থনের বিষয়টি অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসময় স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের প্রথম স্বীকৃতিদানকারী দেশ হিসেবে এবং একই ধরনের ঐতিহ্য, বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের কারণে ভুটান বাংলাদেশের জনগণের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
উভয় নেতা দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সার্বিক দিক পর্যালোচনা করেন এবং উভয় দেশের বিভিন্ন সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলোতে পারস্পারিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, সড়ক, রেল ও বিমান যোগাযোগ, জল-বিদ্যুৎ, দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, সংস্কৃতি এবং দু’দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি।
করোনা মহামারি মোকাবিলায় ঔষধ পাঠানোয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ভুটানের প্রধানমন্ত্রী এসময় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। গত ৬ ডিসেম্বর অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি -পিটিএ) স্বাক্ষর হওয়ায় উভয় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং আশা প্রকাশ করেন, দু’দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে এ চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী ফরেন অফিস কনসালটেশন (বিদেশ অফিস পরামর্শ - এফওসি) এবং বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠক যত দ্রুত সম্ভব অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তাঁরা আন্ত:রাষ্ট্রীয় পানিপথ ব্যবহারের জন্য এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি) এবং ট্রানজিট চুক্তির খসড়া প্রটোকল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চুড়ান্ত করার বিষয়ে সম্মতি প্রকাশ করেন।
দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি খাতের সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন। বাংলাদেশ স্বল্পতম ব্যয়ে ‘‘ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ’’ ভূটানে সরবরাহের ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইথ (আমাদের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের ব্যান্ডউইথ-এসইএ-এমই-ডব্লিউই -৫) ব্যবহারে ভুটান আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থা কাজ করছে।
বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে জল-বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী একযোগে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরে নেপালের প্রবেশাধিকার প্রদানে বাংলাদেশের সম্মতির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পূনর্ব্যক্ত করেন। এবিষয়ে ট্রানজিট চুক্তি ও প্রটোকল দ্রুত সম্পাদনের ওপর তিনি জোর দেন।
সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারতের চিলাহাটি-হলদিবাড়ি (চিলাহাটি-হলদিবাড়ি) ট্রেন সংযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ট্রেন যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়টি খতিয়ে দেখার বিষয়ে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী সম্মত হয়েছেন। ভুটানের গেলেফু ও বাংলাদেশের সাথে, বিশেষ করে, লালমনিরহাট ও সৈয়দপুরের সাথে কার্গো বিমান যোগাযোগ স্থাপনের সম্ভাবনার বিষয়টি খতিয়ে দেখার বিষয়েও দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী সম্মত হয়েছেন।
দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন যে, ১৯ জন বাংলাদেশি ডাক্তার ও সার্জন ভুটানে অত্যন্ত সুনামের সাথে কাজ করছে এবং বাংলাদেশ থেকে আরো ডাক্তার ভুটানে প্রেরণে বাংলাদেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এছাড়া ভুটানের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে বাংলাদেশকে পছন্দ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্তোষ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে অধ্যয়নরত ভূটানী শিক্ষার্থীদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশও সম্মত হয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে বন্ধুত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যৌথভাবে সম্পাদনের বিষয়ে উভয় প্রধানমন্ত্রী একমত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটানের কৃষি বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণ প্রদানে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, বিশেষ করে যে সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সক্ষমতা অর্জন করেছে।
আজ বিকালে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ঢাকা ত্যাগ করবেন।