প্রকাশ: ৩ মার্চ, ২০২১ ১২:২৩ অপরাহ্ন
জবি প্রতিনিধি : প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও নিশ্চিত হয়নি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৭০০ শিক্ষকের জন্য রয়েছে ৪০ জনের বসবাসের মাত্র একটি ডরমিটরি। তবে এই ডরমিটরিতেও নেই বসবাসের সকল সুযোগ সুবিধা।
ভবনে পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও কেয়ারটেকারের অভাব, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরবরাহ না থাকা, এমনকি ডরমিটরি দেখভালের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় ভবনে বিদ্যুৎ, গ্যাস বা পানির লাইনে কোন সমস্যা হলে কে ঠিক করবে এমন সিদ্ধান্তে ঝামেলা পোহাতে হয় শিক্ষকদের। কোন কিছু নষ্ট হলে শিক্ষকদের নিজেদেরই ঠিক করতে হয়।
এছাড়া পুরান ঢাকার মতো জনবহুল এলাকায় অবস্থিত এই ডরমিটরিতে নিরাপত্তার জন্য নেই কোন ব্যবস্থা। ডরমিটরি দেখাশোনার জন্য কেয়ারটেকার, নিরাপত্তাকর্মী বা সিসি ক্যামেরা কিছুই নেই ভবনটিতে। নিরাপত্তার দিক দিয়ে চরম ঝুঁকিতে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরির শিক্ষকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ডরমিটরিতে ঢুকতেই নিচের প্রবেশ দ্বার খোলা। নেই কোন কেয়ারটেকার, নিরাপত্তা কর্মী বা সিসি ক্যামেরা। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলে ছাদের দরজাও উন্মুক্ত দেখা যায়। ডরমিটরির সাথেই অন্যান্য আবাসিক ভবন থাকায় ভবনের ছাদ ও নিচের প্রবেশ গেটের মাধ্যমে সহজেই বহিরাগতরা ঢোকার আশঙ্কায় নিরাপত্তাহীনতায় আছেন বলে জানান শিক্ষকরা।
এছাড়া ভবনের পাশে যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা যায় ময়লার স্তুপ। ছয় তালা ভবনের বিভিন্ন রুম থেকে ময়লা সরারসরি নিচে ফেলায় কোন কোন ফ্লাটের বাইরের চিলেকোঠা ও জানালার উপরেও ঝুলে আছে ময়লা। ড্রেনগুলো উন্মুক্ত। পয়ঃনিষ্কাশন না হওয়ায় মশা মাছি ভনভন করতে দেখা যায়।
এসব বিষয়ে ডরমিটরিতে বসবাস করা কয়েকজন শিক্ষক বলেন, এখানে বসবাসের পরিবেশ খুবই খারাপ। কেয়ারটেকার না থাকায় ভবনের কোন কিছু নষ্ট হয়ে গেলে আমাদেরকেই ঠিক করতে হয়। প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাবে ময়লা যেখানে সেখানে পড়ে থাকে। পাশের ড্রেনে ময়লা নিষ্কাশন হয় না বলে আমরা ডেঙ্গুর আশঙ্কায় থাকি। কোন পরিচালনা কমিটি না থাকায় মান সন্মানের কারণে অন্য কাউকে বলতেও পারি না।
তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষকদের বসবাসের এ ভবনে নিরাপত্তার জন্য কোন সিকিউরিটি গার্ড বা সিসি ক্যামেরাও নেই। কে ভবনে আসে যায় দেখার কেউ নেই। কোন নীতিমালা না থাকাই যে যেভাবে পারেন বসবাস করছেন। যদি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো যথাযথ নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সার্ভিস চার্জ নিয়েও আমাদের বসবাসের সুযোগ সুবিধা প্রদান করে তবুও আমরা রাজি।
এসময় কিছু শিক্ষক নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, ডরমিটরিতে নীতিমালা অনুসরণ না করে মৌখিক ভাবেই শিক্ষকের থাকার অনুমতি প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে লবিং তদবির করতে পারলেই পছন্দের শিক্ষকদের মেলে ডরমিটরিতে থাকার সুযোগ। বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ, নিয়মকানুন বাদেই নিজেদের মতো করে বসবাস করে আসছেন শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি 'ডরমিটরি পরিচালনা কমিটি' নামে ছয় সদস্যদের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদকে আহবায়ক ও রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামানকে সদস্য সচিব করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ, ছাত্র কল্যাণের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকি এবং অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক ড. কাজী মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনকে সদস্য করে এ কমিটি করা হয়। কিন্তু ডরমিটরিতে বসবাসকারী কোন শিক্ষক প্রতিনিধিকে কমিটিতে না রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও ডরমিটরি পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, নীতিমালা অনুসারে নতুন করে শিক্ষকদের ডরমিটরিতে উঠতে আবেদন করতে বলা হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট সার্ভিস চার্জের মাধ্যমে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সকল সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ডরমিটরিতে সিট বরাদ্দ দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে ডরমিটরি সংস্কার, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, কেয়ারটেকার ও নিরাপত্তাকর্মীসহ যে যে সুবিধাগুলো লাগে তার ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ডরমিটরি পরিচালনা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ বলেন, মৌখিকভাবে অনুমতি নিয়ে শিক্ষকরা ডরমিটরিতে বসবাস করে আসছেন। এতোদিন নীতিমালার প্রয়োগ ও পরিচালনা কমিটি না থাকায় ডরমিটরিতে সমস্যা ছিল। ২০১৯ সালের জুন বা জুলাইয়ের দিকে একটি নীতিমালা পাশ হয়। তবে এতোদিন নীতিমালার প্রয়োগ ছিল না। এখন থেকে ডরমিটরির নতুন পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে নীতিমালা মেনে শিক্ষক তোলার পর ডরমিটরির সকল সমস্যা সমাধান হবে বলে আমরা শিক্ষক সমিতি আশা করছি।