প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ ১২:০৭ অপরাহ্ন
যশোর থেকে খান সাহেব : ২০ ফেব্রুয়ারী ঘড়ির কাঁটায় বেলা প্রায় ১২টা। কৃষি বিভাগের একটা প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ করে বাদেখানপুর গ্রামের মাঠ থেকে চৌগাছার উদ্দ্যেশে রওয়ানা হয়েছি। আমগাছ জামগাছ আর বাঁশ বাগানের বুক চিরে চলে গেছে গ্রাম কাঁচা রাস্তা। ছুটে চলছে আমার মটর বাইক।
বাদেখানপুর মৌজার প্রায় শেষ সীমানায় পৌঁছানোর সাথে সাথে একদল ক্ষুদে মানবগোষ্ঠি হাতে হাত বেধে পথ আটকালো। থেমে গেল আমার মটর বাইক। জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার? বলল আমাদের শহীদ মিনারে টাকা দিতে হবে।
তাই! ওহ্ তা তোমাদের শহীদ মিনার কই ? রাস্তার পাশেই ডেকে দেখালো তাদের সদ্য নির্মিত শহীদ মিনার । দেখে পছন্দ হলো গর্বে বুকটা ভরে গেল মনে মনে ভাবলাম এই অজপাড়াগাঁয়ের এতটুকু শিশুরা যখন শহীদ মিনার তৈরী করতে পেরেছে তখন বাঙালীরা অনেক কিছু পারবে।
সবাইকে নিয়ে ফটোসেশনটা সেরে নিয়ে একে একে সবার নাম পরিচয় জানলাম। ওদের নেতৃত্ব দিচ্ছে বাদেখানপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী শিউলি খাতুন (৯)। অন্যরা ছিল তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সিয়াম(৮), দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী জলি(৭) ও ছাত্র শাকিল (৭), শিশু শ্রেণীর তাসফিয়া (৫) ও সোহানা। তাদের দাবী অনুযায়ী কিছু টাকা তাদের হাতে দিয়ে রওয়ানা হতেই তারা বলল সামনে আরো একটা দল আছে।
যাহোক ৫০ মিটার সামনে যেতেই একই ব্যাপার হাতে হাত বেধে দাঁড়িয়ে আর একটি ক্ষুদে মানবদল। তাদেরও একই দাবী শহীদ মিনারে টাকা দিতে হবে। তাদেরও ফটোসেশন শেষ করে নাম পরিচয় জানলাম। তাদের নেতৃত্বে রয়েছে বাদেখানপুর দাখিল মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র রাব্বি (৯)।
তার সহযোগীরা হলো নারায়ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ঐশি (৮), নার্সারী শ্রেণীর ছাত্র অর্পণ (৫), বাদেখানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র তামিম (৬) ও তাফসীর (৬)। আর এখনো বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পা রাখেনি নয়ন(৪), জিমিয়া (৪) ও ছনি (৪)। ওদের দাবী অনুযায়ী কিছু টাকা হাতে দিয়ে দিলাম।
এরপর দুইদল স্থপতিকে এক জায়গায় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম শহীদ দিবস কত তারিখ ? ওরা সবাই বলল ২১ ফেব্রুয়ারী। শহীদ দিবসের আরো একটি নাম আছে তোমরা জান কি ? ওদের একজন বলল আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস। ওদের সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে স্বগত উচ্চারণ করলাম তোমরা জেগে থাকলে পথ হারাবে না বাংলাদেশ।