ঢাকা, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৬ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

বিজয় দিবসে ব্রাজিলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগারের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রদূত


প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৫:০১ অপরাহ্ন


বিজয় দিবসে ব্রাজিলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগারের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রদূত

কূটনৈতিক প্রতিবেদক : রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমান বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লক্ষ শহীদ, দুই লক্ষাধিক নারী মুক্তিযোদ্ধা ও চার জাতীয় নেতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তিনি সমবেত অতিথিবর্গকে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন। 

দূতাবাসের আহবানে সাড়া দিয়ে কোভিড-১৯ মহামারী সত্ত্বেও দূতাবাস আয়োজিত এ অনুষ্ঠান সফল করে তোলার জন্য তিনি সমাগত শিক্ষাবিদবৃন্দ ও সাংবাদিকসহ সকল অতিথিবর্গকে বিজয় দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

আজ বৈশ্বিক করোনা মহামারী এবং ব্রাজিলে চলমান করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণের মধ্যেও যথাযথ শ্রদ্ধা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে পরিমিত পরিসরে আজ ব্রাজিলে বাংলাদেশ দূতাবাসে মহান বিজয় দিবস ২০২০ উদযাপন করা হয়। 

রাষ্ট্রদূত জুলফিকার বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিসংগ্রামের ঘটনাক্রম সবিস্তারে বর্ণনা করেন। ভাষাসংগ্রামের মাধ্যমে সূচিত হওয়া স্বাধিকার আন্দোলন, বাঙালির আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম কিভাবে পর্যায়ক্রমে সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামে রূপান্তরিত হয়েছিল - সেসব রক্তঝরা দিনের বর্ণনা দেন রাষ্ট্রদূত তাঁর সাবলীল ভঙ্গিমায়।

স্বাধীনতা-উত্তরকালে জাতির জনকের নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ার সংগ্ৰাম, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্রে জাতির জনকের শাহাদৎ বরণ ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কিভাবে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে ইত্যাদি বিষয়ে বিশদ আলোকপাত করেন।

এ আয়োজনে প্রবাসী বাংলাদেশী ছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্রাজিলিয়ান সংবাদকর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন। ব্রাজিলের পরারষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ব্রাসিলিয়া সরকারের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং ব্রাসিলিয়াস্থ কূটনৈতিক কোরের সদস্যবৃন্দও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

মহান বিজয় দিবস পালনের প্রাক্কালে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালনে এ দূতাবাসের কর্মসূচীর অংশ হিসেবে দূতাবাসে “বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগার”-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রদূত মোঃ জুলফিকার রহমান। একই সাথে তিনি দূতাবাসে একটি “বঙ্গবন্ধু কর্ণার” ও উন্মোচন করেন। 

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে ব্রাজিলসহ লাতিন আমেরিকান অঞ্চলে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরার এ জনকূটনীতির প্রয়াস বাংলাদেশ ও এতদ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। এ অঞ্চলের জনগণের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর করতেও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পাঠাগার অবদান রাখবে।

দূতাবাসের উদ্যোগে লাতিন আমেরিকার প্রখ্যাত ব্রাসিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়ার" প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্প্রতি নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আজকের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত জনকূটনীতির এই অনন্য সিদ্ধান্তের বিষয়েও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক বঙ্গবন্ধুর লেখা ঐতিহাসিক গ্রন্থ "অসমাপ্ত আত্মজীবনী" ব্রাজিলিয়ান পর্তুগীজ ভাষায় অনুবাদ করবেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রেসে মুদ্রিত হবে মর্মেও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ দুটি জনকূটনীতি-উদ্যোগ এর সাথে বঙ্গবন্ধু পাঠাগার-এর উদ্বোধন ব্রাজিলে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে ব্রাজিলিয়ান গবেষকদের জন্য একটি গুরত্বপূর্ণ সংযোজন বলে মত প্রকাশ করেন অভ্যাগত ব্রাসিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকসহ উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ।

সকাল সাড়ে ৮ টায় জাতীয় সঙ্গীতের সাথে মান্যবর রাষ্ট্রদূত কর্তৃক জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সূচিত মহান বিজয় দিবস অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সমাগত অতিথিবৃন্দ এবং দূতাবাস পরিবারের সকলকে সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। 

পবিত্র কোরান থেকে পাঠ এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ, মহান ভাষা আন্দোলনসহ গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আত্মত্যাগকারী সকল শহীদ এবং বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগষ্টে নির্মম হত্যাকান্ডে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদ-এর আত্মার মাগফেরাত এবং বাংলাদেশের ক্রমঅগ্রসরমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অব্যাহত অগ্রযাত্রা কামনা করে এবং বিদ্যমান করোনা ভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশসহ পুরো পৃথিবীর মানুষকে রক্ষার আহবান জানিয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। এরপর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রেরিত ভিডিও বাণী প্রদর্শন করা হয়।

দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে অনুষ্ঠিত আলোচনা পর্বে দূতাবাসের কর্মকর্তাগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। বক্তারা মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গকারী ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং দেশজুড়ে গণহত্যা ও পাশবিক নির্যাতনের বেদনাময় ঘটনাপ্রবাহ স্মরণ করেন। পাশাপাশি বিশ্বসভায় বাংলাদেশের এই রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরনীয় অবদানের উপর তাঁরা আলোকপাত করেন।

দূতাবাস পরিবারের শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দূতাবাসের মহান বিজয় দিবস কররসূচীর পরিসমাপ্তি ঘটে।


   আরও সংবাদ