প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ২২:১২ অপরাহ্ন
হাবিপ্রবি থেকে আবু সাহেব: ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) অধ্যয়নরত ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের মেয়াদ শেষ হলেও শিক্ষার্থীরা স্নাতক ডিগ্রী নিতে পারেনি। এর কারণ হিসাবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা করোনা মহামারির পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত আন্দোলনকে দায়ী করছেন।
হাবিপ্রবির ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার দাবীতে গত অক্টোবর থেকে আন্দোলন করে আসছে। এর প্রেক্ষিতে আগামী ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে একাডেমিক কাউন্সিল। বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মু. আবুল কাসেম। উক্ত দিনে ১৬ ব্যাচের পরীক্ষার দিন তারিখ নির্ধারিত হবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
এদিকে করোনা মহামারির কারণে শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস কার্যক্রমে অংশ নিলেও উপস্থিতির হার সন্তোষজনক নয় বলে জানিয়েছেন হাবিপ্রবির বিভিন্ন বিভাগের একাধিক শিক্ষক। এর প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ চূড়ান্ত লেভেলের পরীক্ষায় অংশ নিলে রেজাল্ট বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার বরাবর ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের সিলেবাস সংক্ষেপ করার পাশাপাশি অসমাপ্ত মিডটার্ম পরীক্ষা, কুইজ টেষ্ট ও উপস্থিতির সম্পূর্ণ নাম্বার যাতে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে দেয়া হয় সে ব্যাপারে স্মারকলিপি দেয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিসংখ্যান বিভাগের লেভেল ৪ সেমিস্টার ১ এর শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম লাবু বলেন, " আমাদের লেভেল ৪ সেমিস্টার ১ এর ফাইনাল পরীক্ষা এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি কিন্তু আমরা ইতিমধ্যে লেভেল ৪ সেমিস্টার ২ এর ক্লাস করছি। যেহেতু দীর্ঘদিন আমরা লেখা পরার বাহিরে আছি তাই ৭ম ও ৮ম সেমিস্টারের কোর্স সমূহ সংক্ষিপ্ত করার পাশাপাশি আমাদের উক্ত দুই সেমিস্টারের অসমাপ্ত মিডটার্ম, কুইজ ও উপস্থিতির বিকল্প হিসাবে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া হোক। আমি এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি "।
আবার কৃষি অনুষদের ( বিশেষ ব্যাচ ) ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাগিব হাসান সিফাত বলেন, " এ মুহূর্তে কৃষি অনুষদের বিশেষ ব্যাচ, পরিসংখ্যান বিভাগ ও আর্কিচেকচার বিভাগের লেভেল ৪ সেমিস্টার ১ এর পরীক্ষা হয়নি। কিন্তু একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা পরবর্তি সেমিস্টারের ক্লাস করছি । তাই আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি মিডটার্ম পরীক্ষা, কুইজ পরীক্ষা দিতে গেলে লেভেল ৪ সেমিস্টার ২ তে অনেক সময় চলে যাবে। যেহেতু আমাদের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সকলের একই দাবী দ্রুত সার্টিফিকেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া সেজন্য অ্যাসাইনমেন্টের বিকল্প নেই। অ্যাসাইনমেন্টে পুরো নাম্বার বরাদ্দ থাকলে যেসকল শিক্ষার্থী নানা কারণে ক্লাস করতে পারছে না কিংবা অনলাইন ক্লাস বুঝতে সমস্যা হচ্ছে তাদের রেজাল্ট বিপর্যয়ের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে। আমরা ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এমুহূর্তে একাডেমিক কাউন্সিলের দিকে তাকিয়ে আছি "।
অন্যদিকে, আর্কিচেকচার বিভাগের ১৬ ব্যাচের লেভেল ৪ সেমিস্টার ১ এর শিক্ষার্থী ইসরাতুল হক শাওন বলেন, " অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু অ্যাসাইনমেন্ট নিচ্ছে আমরাও সেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে চাই। তবে একাডেমিক কাউন্সিলে যাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষে সকল সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সেজন্য হাবিপ্রবি প্রশাসনে সর্বোচ্চ হস্তক্ষেপ কামনা করছি। পাশাপাশি একাডেমিক কাউন্সিলে যাতে অকার্যকর ফি সমূহ মওকূফ করা হয় তার জোর দাবী জনাই "।
পক্ষান্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধক্ষ্য অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র হালদারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, " যেহেতু ইউজিসি থেকে সকল সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষেই এসেছে সেহেতু আমরাও চাইবো নিয়মের মধ্যে থেকে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সবচেয়ে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে। শিক্ষার্থীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ। তাঁদের জন্য যে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হয় আমরা ইউজিসির নির্দেশনা মেনে সেভাবেই পদক্ষেপ নিবো "।
সর্বোপরি সার্বিক সকল বিষয় নিয়ে মুঠোফোন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "অ্যাসাইনমেন্টের দিকে জোর দিতে ইতিমধ্যে গত ৩রা ডিসেম্বর একটি বিশেষ সভায় আমি শিক্ষকদের আহবান জানিয়েছি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে। কারণ ইতিমধ্যে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসাইনমেন্টের দিকে ঝুঁকে পরেছে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট যাতে হুমকির মুখে না পরে। তবে এ বিষয়ে আমি একক কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবো না । তবে আশা করি একাডেমিক কাউন্সিলে সকল সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষেই থাকবে "।
এসময় উপাচার্য অ্যাসাইনমেন্টের বিষয়টির পাশাপাশি ও অকার্যকর ফি সমূহ মওকূফের বিষয়টি এবারের একাডেমিক কাউন্সিলে সর্বাধিক গুরুত্বপাবে বলে নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য যে, ১৬ই ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাবিপ্রবির ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা মিডটার্ম, কুইজ ও উপস্থিতির নাম্বারের বিকল্প হিসাবে অ্যাসাইনমেন্ট দেয়ার দাবী জানালে তা অল্প সময়ের মাঝেই বিভিন্ন গ্রুপে ভাইরাল হয়। ১৬ ব্যাচের উক্ত দাবীটিকে যৌক্তিক বলে ইতিমধ্যে হাবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি হাবিপ্রবি ছাত্রলীগ শাখার নেতৃবৃন্দও সহমত প্রকাশ করেছে।