প্রকাশ: ৮ নভেম্বর, ২০২০ ২১:০৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে নির্বাচনী কোনও ‘সুষ্ঠু পরিবেশ নেই’ দাবি করে মাঠ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি দলীয় প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য শেষ অথবা প্রথম নেই; ভোটের মাঠে আছি এবং থাকবো।’
রবিবার (৮ নভেম্বর) উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ শেষে ধানের শীষের এ প্রার্থী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা-১৮ আসনে ভোটের কোনও সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। তারা (আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও তার সমর্থক) বিভিন্ন জায়গায় প্রচার করছে, ঘরে ঘরে, রাস্তায় রাস্তায় তাদের মাইক বাজছে। আর আমাদের অফিসেও মাইক বাজাতে দিচ্ছে না। গতপরশু আমাদের মাইক ভাঙচুর করেছে-এখানে সুষ্ঠু পরিবেশের কোনো সুযোগই নেই। সিইসি নিজেও বলছেন, এখানে (ঢাকা-১৮ আসনে) সবকিছু করতে পারতেছিনা, আমাদের (ইসি) নিজেদেরও বাধ্যবাধকতা আছে। তাদের (কমিশনের) বাধ্যবাধকতা কী? পুলিশ আমাদের সাথে কথা বলে না। বললেও বলে উপরে যান। নির্বাচনী এলাকায় সব ক্ষমতার অধিকারী হল সিইসি। সেখানে সিইসি যদি অপারগতা প্রকাশ করে, সেখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কীভাবে থাকে?’
তিনি বলেন, ‘এখানে কোনও অবস্থায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই, নির্বাচনেরও পরিবেশ নেই। শুধুমাত্র গণতন্ত্রের স্বার্থে গণতন্ত্র রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করছি আমরা সফল হব। আমরা মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য শেষ অথবা প্রথম নেই; ভোটের মাঠে আছি এবং থাকবো।’
এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের নিজ নির্বাচনী কার্যালয় থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মী সাথে নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেন এস এম জাহাঙ্গীর। এরপর আব্দুল্লাহপুরসহ উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন সড়কে গণসংযোগ শেষে ১২ নম্বর সড়কে শহীদ ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজের সামনে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতিতে সংক্ষিপ্ত পথসভায় বক্তব্য রাখেন। গণসংযোগ শুরুর আগে নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে সাংবাদিকদেরও নানা প্রশ্নের জবাব দেন।
গণসংযোগে অংশ নেয়া নেতাকর্মীদের মুখে উল্লেখযোগ্য স্লোগান ছিল- ‘জিয়া তুমি আছ মিশে, সারাদেশের ধানের শীষে’, ‘খালেদার জিয়ার সালাম নিন, ধানের শীষে ভোটদিন’, ‘তারেক রহমানের সালাম নিন, ধানের শীষে ভোট দিন’, ‘জাহাঙ্গীর ভাইয়ের সালাম নিন, ধানের শীষে ভোট দিন’, ‘১২ নভেম্বর সারাদিন, ধানের শীষে ভোট দিন,’ ‘সিল মারো ভাই সিল মারো, ধানের শীষে সিল মারো’, ‘এলাকাবাসীকে বলে যাই, ধানের শীষে ভোট চাই,’ ‘গণতন্ত্রের মার্কা, ধানের শীষ মার্কা’ ইত্যাদি নানা শ্লোগাণে পুরো এলাকা মুখরিত কওে তোলে নেতাকর্মী সমর্থকরা। শ্লোগাণের বাড়তি আকর্ষণ ছিল ‘মা-বোনদের বলে যাই, ধানের শীষে ভোট চাই,’ ‘ও চাচা-মামা,নানা-নানী, দাদা-দাদি, মা-বাবা, ভাই-ভাবি, আপা-দুলাভাই, ভাই-বোনকে উদ্দেশ্য করে করোতালি ও গানে গানে এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে ‘ভোট দিবেন কিসে ধানের শীষে’ নেতাকর্মীদের দেয়া স্লোগান বেশ আকৃষ্ট করে।
এসময় গণসংযোগকালে জাহাঙ্গীরের সাথে ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাজীব হাসান, যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মোরতাজুল করীম বাদরু, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন সরকার, উত্তরের স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ফখরুল ইসরাম রবিন, পশ্চিম ছাত্রদলের সভাপতি কামরুজ্জামান জুয়েল, মহিলা দলের তাহমিনা আফরিন নিতা, বিএনপির মহানগর নেতা এস আই টুটুলসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।
এস এম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আজ আমাদের ৪৭ ও ৪৮ থেকে শুরু হওয়ার কথা। পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমরা আবেদনপত্র পাঠিয়ে ছিলাম তা তারা গ্রহণ করেনি।’ তবে রুটিন কাজ সবই হচ্ছে। আমরা শুরু থেকেই পুলিশের অনুমতি নিয়ে কর্মসূচি দিলেও একই স্থানে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আপনারা দেখেছেন আমরা সংঘাত এড়াতে অনুমতি পাওয়ার পরও সেসকল স্থানে গণসংযোগ এড়িয়ে চলছি।’
ধানের শীষের এ প্রার্থী বলেন, ‘আমাদের অবলম্বন হল ভোটার তথা জনগণ। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের আশ্রয়স্থল জনগণ। জনগণের ভোটে আমরা নির্বাচিত হতে চাই, এর বিকল্প নেই। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের বিকল্পও থাকে। আপনারা দেখেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) যে কথাগুলো বলেছেন, যেমন ৩০ তারিখের ভোট ২৯ তারিখ আর হবে না। তার মানে কী? ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৩৬ টি ভোট কেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি। তার মানে কী ওই এলাকায় কী আওয়ামী লীগ নেই? অবশ্যই আছে। সেখানে আওয়ামী লীগও ভোট দিতে যায়নি অথবা ভোটারের দরকার হয়নি। তাদের আসলে জনগণের ওপর আস্থা নেই। কারণ, তারা জানে জনগণ ভোট কেন্দ্রে গেলেই ধানের শীষে তথা বিএনপিকে ভোট দিবে।’
জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ‘এই আসনে ১৯৯১ সাল থেকে এই আসনে যতবার নির্বাচন হয়েছে, জনগণ ভোট দিতে পেরেছে ততবারই তারা বিএনপিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। ২০০৮ সালের পর থেকে জনগণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তারা ভোট দিতে পারেনি। আমরা গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করছি, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সংগ্রাম করছি। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের নেতাকর্মী ও জনগণ ঐক্যবদ্ধ আছে। আগামী ১২ নভেম্বর ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের চেষ্টা জনগণও করে যাচ্ছে আমরাও করছি। আমরা জনগণের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি এবং আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা ভোট কেন্দ্রে আসুন আপনাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। এবার আশা করছি, জনগণ ভোট কেন্দ্রে আসবেন।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আপনারা জানেন ইতোমধ্যে প্রশাসনের মাধ্যমে ভোটাদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। গত পরশুদিন তারা নিজেরা নিজেদের অফিসে আগুন জ্বালিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের নামে মামলা করার ধান্দা করছে, পূর্বেও তারা করেছে। তারা গায়েবি মামলাও করেছে। মামলা হামলা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা জনগণের সাথে ঐক্যবদ্ধ আছি, জনগণ আমাদের সাথে আছে। আমরা আগামী ১২ নভেম্বর জনগণকে সাথে নিয়ে ভোট চোর ও ভোট ডাকাতদের প্রতিহত করার চেষ্টা করব। এ আওয়ামী লীগ ভোট চুরি বা ডাকাতি করতে পারবে না।