ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের স্বীকৃতি দিতে বিশ্বব্যাংককে আহ্ববান করলেন অর্থমন্ত্রী


প্রকাশ: ২১ অক্টোবর, ২০২০ ২০:১০ অপরাহ্ন


দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের স্বীকৃতি দিতে বিশ্বব্যাংককে আহ্ববান করলেন অর্থমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ সরকার পরিবার এবং শ্রমিকদের রক্ষা করতে কি কি ধরনের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে যাতে করে তাদের নেতিবাচক মোকাবেলা প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে না হয় এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, কোভিড -১৯ এর অপ্রত্যাশিত অভিঘাত থেকে উদ্ভুত প্রাসঙ্গিক বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানাই। আপনারা সকলেই অবশ্যই অবগত যে বাংলাদেশ বিভিন্ন দিক থেকে আলাদা বৈশিষ্ট মন্ডিত। 

বাংলাদেশের রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাস্তববাদী নেতৃত্ব এবং দেশে বিদেশে কঠোর পরিশ্রম করা নাগরিক। বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্যরা অনুমান করেছিল যে করোনার কারনে  বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী রেমিট্যান্সের পরিমাণ হ্রাস পাবে। যা বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি, বিশেষত গ্রামীণ অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে গার্হস্থ্য চাহিদা এবং প্রণোদিত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমি আনন্দের সাথে সকলকে অবগত করতে চাই যে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্সের সবসময়ে উর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখিয়েছে এবং সম্প্রতি এটি ত্বরান্বিত হয়েছে। আমরা ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১৮.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পেয়েছি। 

বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভার অংশ হিসেবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ আইএমফের দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্ট উয়িং শেফার; আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী আবদুল হাদী আরগান্ধিওয়াল, ভূটানের অর্থমন্ত্রী লায়নপো নামগে শেরিং , ভারতের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, মালদ্বীপের অর্থমন্ত্রী ইব্রাহিম আমির, নেপালের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. যুবরাজ খাতিওয়াদা, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহাকারী এবং দারিদ্র্য দমন ও সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ড. সানিয়া নিশতার এবং শ্রীলংকার শিক্ষামন্ত্রী প্রফেসর জি.এল.পিরিস এর সাথে এক ভার্চুয়াল গোলটেবিল সভায় অংশগ্রহন করেন।

চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৬.৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স রেকর্ড হয়েছে, যা পুর্বের বছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে ৪৯% বেশি। আমাদের সরকার ঘোষিত ২% সরাসরি নগদ প্রণোদনা নীতি এক্ষেত্রে প্রশাংসার দাবীদার। 

তাই এটি স্পষ্টই প্রতিয়মান হয় যে আমাদের রেমিট্যান্স মোটেও কমেনি বরং প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী আমাদের প্রায় ১১.৬ মিলিয়ন বাংলাদেশী নাগরিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে। মালয়েশিয়ার করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে মালয়েশিয়ায় যে সমস্ত ব্যবস্থাপক পর্যায়ে বিদেশী রয়েছেন যার ৩৭% শতাংশই বাংলাদেশী নাগরিক।

অর্থমন্ত্রী আরো বলেন,তবুও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বন্ধের কারণে গৃহবন্দী অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে উদ্বেগ উপেক্ষা করা যায়না। আমাদের গত ১ এপ্রিল থেকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে এক লাখ ৯৫ হাজার ৬৯৮ জন শ্রমিক ফিরে এসেছেন। যদিও বিশ্বব্যাপী মোট প্রবাসী বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের তুলনায় এটি বড় সংখ্যা নয়। আমাদের প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের সূত্রমতে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ১৫ অক্টোবর পযন্ত ২ লাখ ৮৪ হাজার জন কর্মী বিদেশে গিয়েছেন যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬% বেশি। 

সাধারণত দেখা গেছে যে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে প্রতি মাসে প্রায় ৬০ হাজার কর্মী বিদেশে নিযুক্ত হন। আমাদের সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে কর্মীদেরকে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে চাকরি নিয়ে বিদেশে ফেরত পাঠাতে সহায়তা করে আসছে। আমরা নিশ্চিত বলতে পারি যে ইতোমধ্যে আমাদের প্রবাসী কর্মীরা বিদেশে ফিরে কাজ শুরু করছেন।

অর্থমন্ত্রী আরো উল্লেখ করেন, তা ছাড়া সরকার সামাজিক বিশেষভাবে সুরক্ষা কর্মসূচির ব্যবস্থা করেছিল। এপ্রিল এবং মে মাসে কোভিড-১৯ ছুটির সময়ে প্রত্যাবাসনের জন্য বিদেশে গমণকারীদের জন্য ১.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করা হয়। বিদেশে চাকরি হারানো প্রত্যাবাসীরা ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেটের পুনর্বাসন কর্মসূচির জন্য তালিকাভুক্ত হন এবং তাদেরকে অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা পরিকল্পনারও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 

চলতি অর্থবছরে আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয় ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য প্রবাস শ্রমিকদের লক্ষ্য করে একটি নির্দিষ্ট সামাজিক সুরক্ষার জন্য প্রায় ২৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের “কর্মসংস্থান সৃষ্টি কর্মসূচি” শীর্ষক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হ'ল কোভিড-১৯ এর ধাক্কা কাটিয়ে উঠার জন্য সম্ভাব্য কর্মীদের বিদেশের চাকরীটি সহজ ও দ্রুততর উপায় পেতে সহজতর করা।

দেশে এবং বিদেশে আমাদের এই সকল কর্মরিা অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে। এসকল কর্মীদের কষ্টের স্বীকৃতি দিতে বিশ্বব্যাংকে আহ্ববান করে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের এবং বিশ্বের অগ্রগতির প্রবাহ ধরে রাখতে আমাদের কর্মীরা কষ্ট মন্ত্রে মুগ্ধ। 

তাই আমি অত্যন্ত খুশি হব,যদি বিশ্ব ও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের এ অর্জন বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে স্বীকৃতি পায়। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্য প্রাচ্য এবং পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্বের প্রতিটি বড় বড় শহরে কর্মরত এ সকল কর্মীদের বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার প্রশংসা কেবলমাত্র আমাদের মানুষকে নয় বিশ্বব্যাপী সমস্ত প্রবাসী কর্মীদের উৎসাহিত করবে।


   আরও সংবাদ