ঢাকা, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩২, ২২ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

বিচা‌রের প্র‌তিক্ষায় ২১ বছর, অব্যাহতি বিএনপির মন্ত্রীকে


প্রকাশ: ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ পূর্বাহ্ন


বিচা‌রের প্র‌তিক্ষায় ২১ বছর, অব্যাহতি বিএনপির মন্ত্রীকে

র‌হিদুল ইসলাম খান : ১৯৯৮ সা‌লের ৩০ আগস্ট য‌শোর শহ‌রের বেজ পাড়ার নিজ বা‌ড়ির স‌ন্নিক‌টে আততায়ীর হা‌তে নির্মমভা‌বে নিহত হয় সে সম‌য়ের সব‌চে‌য়ে বহুল আ‌লো‌চিত ও প্রচার সংখ্যার শী‌র্ষে থাকা য‌শোর থে‌কে প্রকা‌শিত দৈ‌নিক রানা‌রের সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুল। পর‌দিন তার স্ত্রী  হা‌ফিজা আক্তার শি‌রিন অজ্ঞাত আসামী‌দের না‌মে য‌শোর কোতয়ালী থানায় মামলা দা‌য়ের ক‌রেন। আর সেই থে‌কে তার প‌রিবার আর সহ‌যোদ্ধা‌দের প্র‌তিক্ষার পালা শুরু। 

এরপর এক‌দিন দুই‌দিন ক‌রে আজ ২১টি বছর হা‌রি‌য়ে গে‌ছে কা‌লের গ‌র্ভে। তবু তা‌দের প্র‌তিক্ষার পালা শেষ হয়‌নি । স্বজন আর সহকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে এ মামলার বিচার দাবি করে আসছে। রাস্তায় দা‌ঁড়ি‌য়ে‌ছে ফেস্টুন, প্লাকার্ড আর কা‌লো পতাকা নি‌য়ে কিন্তু টনক ন‌ড়ে‌নি কা‌রো। কেউ জা‌নেনা ক‌বেই বা এ মামলার কার্যক্রমের শে‌ষে রায় দেওয়া হ‌বে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। একজনের হাইকোর্টে করা অব্যাহতির আবেদনের নিষ্পত্তি প্রতিবেদন না পাওয়ায় থমকে আছে মামলার বিচারিক কাজ। তিন বছর আগে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে মামলাটি বিশেষ জজ আদালতে বদলি করা হয়েছে। তবে হাইকোর্টের প্রতিবেদন না পাওয়ায় সেখানেও এগোনো যাচ্ছে না।

স্পেশাল জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) দফতর জানায়, এ মামলায় অব্যাহতি চেয়ে ঢাকায় কর্মরত সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে আবেদন করেন। ওই আসামি উচ্চ আদালতে যাওয়ায় মুকুল হত্যা মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।

একপর্যায়ে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (দ্বিতীয়) আদালত ফারাজী আজমল হোসেনের অংশ বাদ রেখে বিচার কার্যক্রম শুরু করেন। মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ফারাজী আজমল হোসেনের হাইকোর্টে করা অব্যাহতির আবেদনের নিষ্পত্তি সংক্রান্ত আদেশ সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দিতে বলা হয় তার আইনজীবীকে। তবে দীর্ঘ ছয় বছরেও হাইকোর্টের কোনো আদেশ আদালতে এসে পৌঁছায়নি। আশা করা হচ্ছে, হাইকোর্টের আদেশ পেলে যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) শেষে এ মামলার রায় হবে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি যশোর জোনের তৎকালীন এএসপি দুলালউদ্দিন আকন্দ ১৯৯৯ সালের ২৩ এপ্রিল সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামসহ ২২ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। একপর্যায়ে আইনি জটিলতার কারণে বিচারিক কার্যক্রম থমকে যায় এবং চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি হাইকোর্ট থেকে বাতিল করে দেওয়া হয়।

দীর্ঘদিন পর ২০০৫ সালে হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ মুকুল হত্যা মামলা পুনরুজ্জীবিত করে বর্ধিত তদন্তের নির্দেশ দেন। ২০০৫ সালের ২১ ডিসেম্বর সিআইডি’র এএসপি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মওলা বক্স নতুন করে আরও দু’জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট জমা দেন।

গত ১৫ জুন যশোরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল (তৃতীয়), অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (দ্বিতীয়) আদালত ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাংবাদিক মুকুল হত্যা মামলার বিচার শুরু করেন। 

এ সময় হাইকোর্টের নির্দেশে মামলার দায় থেকে আসামি তৎকালীন মন্ত্রী মরহুম তরিকুল ইসলাম ও রূপমকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

২০১০ সালে মামলার ২৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয় যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (দ্বিতীয়) আদালতে। সেখান থেকে দুই বছর মামলাটি যশোরের বিশেষ জজ আদালতে বদলি করা হয়েছে। ত‌বে শেষ পর্যন্ত মামলার সকল কার্যক্রম শেষ ক‌রে রায় প্রদান কর‌তে পা‌রে‌নি সং‌শ্লিষ্ট আদালত।


   আরও সংবাদ