প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ২০:২৯ অপরাহ্ন
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, সারা পৃথিবীতেই উৎপাদিত খাদ্যের বিরাট একটা অংশ নষ্ট ও অপচয় হয়। বাংলাদেশেও খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে খাদ্য নষ্ট হয়। যা একদিকে খাদ্য নিরাপত্তায় অন্যদিকে কৃষকের আয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর মধ্যে চলমান মহামারি করোনার কারণে পৃথিবীর অনেক দেশেই খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। সেজন্য কোনভাবেই খাদ্য নষ্ট ও অপচয় করা যাবে না।
মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) অনলাইনে ‘বাংলাদেশে খাদ্য নষ্ট ও অপচয়রোধে (খাদ্য হ্রাস এবং বর্জ্য-এফএলডাব্লু) চ্যালেঞ্জ ও সমাধান’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে কৃষিক্ষেত্রে ও খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। খাদ্য নষ্ট ও অপচয়রোধেও সরকার কাজ করছে। ডেল্টা প্ল্যান, কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (সিআইপি-২), জাতীয় কৃষি নীতিতেও এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
একই সাথে, খাদ্য নষ্ট ও অপচয় কমিয়ে আনতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ও এগ্রো-প্রসেসিংয়ে সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকারের এসব উদ্যোগের পাশাপাশি উৎপাদক, ক্রেতা-ভোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
বাংলাদেশ সোসাইটি ফর হর্টিকালচারাল সায়েন্স (বিএসএইচএস) এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বাংলাদেশ যৌথভাবে জাতিসংঘ ঘোষিত ‘খাদ্য নষ্ট ও অপচয় বিষয়ে আন্তর্জাতিক সচেতনতা দিবস’ পালন উপলক্ষে এ সেমিনারটি আয়োজন করে। ‘খাদ্য নষ্ট ও অপচয়’ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সবাইকে সচেতন করতে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ২৯ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক সচেতনতা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। প্রথমবারের মতো এ বছর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হচ্ছে। প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘খাদ্য নষ্ট ও অপচয় বন্ধ করুন। মানুষের জন্য। পৃথিবীর জন্য।’(খাদ্য হ্রাস এবং বর্জ্য বন্ধ করুন the মানুষের জন্য। প্ল্যানেটের জন্য)।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এফএও ঢাকার চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার নাওকি মিনামিগুচি ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ২০১৯ রিপোর্ট মোতাবেক বছরে সারা বিশ্বে উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের এক-তৃতীয়াংশ নষ্ট বা অপচয় হয়।
যার পরিমাণ প্রায় প্রায় ১.৩ বিলিয়ন টন বা ১৩০ কোটি টন খাদ্য নষ্ট হয়। ক্যলরিতে কনভার্ট করলে প্রায় ২৪% খাদ্য নষ্ট হয়। এছাড়া, ফসল উৎপাদনের জন্য জমি, পানি, পরিবেশ, এনার্জি, শ্রম, পু্ঁজি, নষ্ট খাদ্যসৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাসের হিসাব আমলে নিলে ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ আরও অনেক অনেক বেশি।
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে কি পরিমাণ খাদ্য নষ্ট বা অপচয় হয় তার সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও কয়েকটি গবেষণায় দেখা যায়, শাকসবজি ও ফলমূলে পোস্টহার্ভেস্ট নষ্ট বা অপচয়ের পরিমাণ ৩০-৪০%, বার্ষিক আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ৪৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৩৪৪২ কোটি টাকা। মাঠে ফসল বোনা, পরিচর্যা, ফসল কাটা, প্রক্রিয়াজাত করা, দোকানে পৌঁছানো, ক্রেতার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই খাদ্য নষ্ট বা অপচয় হয়। যা এখন বৈশ্বিক উদ্বেগের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ সোসাইটি ফর হর্টিকালচারাল সায়েন্সের সভাপতি মো. সালেহ আহমেদের সভাপতিত্বে এফএও’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি. সিম্পসন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুল মুঈদ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগের অধ্যাপক মো. আশরাফুল ইসলাম,বিএসএইচএস’র মহাসচিব আফজাল হোসেন ভূইয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।