ঢাকা, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩২, ২২ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

চৌগাছায় অপহরণের পরে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে জোরপূর্বক বিয়ে!


প্রকাশ: ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ পূর্বাহ্ন


চৌগাছায় অপহরণের পরে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে জোরপূর্বক বিয়ে!

যশোর থেকে খান সাহেব : যশোরের চৌগাছা ছারা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে অপহরণের পর ঝিনাইদহে নিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে তিব্বত হোসেন নামে এক ঘটক ও মোহন নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। 

মেয়েটির পরিবার চৌগাছা থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ শনিবার সন্ধ্যায় মেয়েটিকে মোহনের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। মানসিক ডিপ্রেশনে থাকায় গতকাল রাত ৮টায় মেয়েটিকে চৌগাছা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রাতেই মামলা করতে চাইলে পুলিশ মামলা না নিয়ে পারিবারিকভাবে মিটিয়ে ফেলতে পরামর্শ দেয় বলে অভিযোগ করেছেন মেয়েটির পিতা।

অন্যদিকে রোববার বেলা ১১ টায় চৌগাছা থানার এএসআই নজরুল ইসলাম বলেন, ওই ভিকটিমের পরিবারকে থানায় মামলা করার জন্য আসতে বলা হলেও এখনো আসেন নি।

মেয়েটির পিতা বলেন, আমরা গরীব মানুষ। দিন মজুরী করে চলি। শহরের একটি পাড়ায় বসবাস করি। ২৮ আগস্ট আমরা বাড়িতে কেউ ছিলাম না। এসময় আমার মেয়ে বাড়ির বাইরে গেলে কোনভাবে অপহরণ করে উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের আইনাল বিশ্বাসের ছেলে ঘটক তিব্বত হোসেন ও তার এক ভায়রা।

তিনি বলেন, এর আগের দিন ওই ঘটক আমাকে মোহন নামে এক ব্যক্তির সাথে মেয়ে বিয়ে দেয়ার জন্য চাপাচাপি করে। আমি তাকে বলি আমার মেয়ে ক্লাস সিক্সে পড়ে, এখনো ছোট। তাকে আমি বিয়ে দেব না। এ নিয়ে ঘটকের সাথে আমার কথাকাটাকাটি হয়। তখন তিব্বত আমাকে হুমকি দেয় ‘তোমার মেয়েকে নিয়ে যেতে আমার পাঁচটাকার ভাজা খরচ হবে।’ 

মেয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, মেয়েকে অজ্ঞান অবস্থায় একটি গাড়িতে করে ঝিনাইদহ নিয়ে একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। গাড়ির মধ্যে তার জ্ঞান ফিরলে তার হাত-মুখ চেপে ধরেন দুজন। মেয়েটির অবস্থা খারাপ হওয়ায় হাসপাতালের ডাক্তার তাকে হাসপাতালে ভর্তি রাখতে নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই ঘটক ও তার ভায়রা মেয়েটিকে হাসপাতাল থেকে অসুস্থ অবস্থায় নিয়ে এসে কোন একটি কাজী অফিসে নিয়ে চৌগাছা উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের কিসমতখানপুর গ্রামের মৃত ইন্তাজ আলীর ছেলে মোহন (৩৫) নামে এক ব্যক্তির সাথে বিয়ে দেয়। মোহনের আগের দুই স্ত্রীর একজন অসুস্থ হয়ে অন্যজন আত্মহত্যা করে মারা যায়। বিয়ের পর মোহন মেয়েটিকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী মহেশপুর উপজেলার আদমপুর গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়িতে ওঠে।

হোসেন আলী বলেন, আমরা থানায় অভিযোগ দেয়ার পরও পুলিশ আসামিদের আটক করেনি। পরে গতকাল সন্ধ্যায় উপজেলার কিসমতখানপুর থেকে আমার মেয়েকে উদ্ধার করে রাতে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে চৌগাছা থানা পুলিশ। আমরা রাতেই মামলা করতে চাইলে পুলিশ বলে এক হাতে তালি বাজে না। তোমাদের মেয়েরও সায় আছে। মামলা করে কি লাভ হবে। বাড়ি নিয়ে গিয়ে পারিবারিক ভাবে মীমাংসা করে নাও।

তবে বেলা ১১ টায় মোবাইলে চৌগাছা থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ও মেয়েটিকে উদ্ধারকারী পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম মেয়েটিকে উদ্ধারের কথা নিশ্চিত করে বলেন, মেয়েটির পরিবারকে বলা হয়েছে থানায় এসে মামলা করে যান। 

আজ মামলা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়েটির পরিবার আসলে মামলা নেয়া হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মেয়েটিকে শনিবার রাত ৮ টা ৫ মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জরুরী বিভাগের চিকিৎসক সুরাইয়া পারভীন মানসিক ডিপ্রেশনের (এইচসিআর) রোগী হিসেবে তাকে ভর্তি রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। 


   আরও সংবাদ