প্রকাশ: ৩১ অগাস্ট, ২০১৯ ০০:০০ পূর্বাহ্ন
সড়ক ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ের অভাবের কারণেই কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি বলে মনে করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। সেই সাথে ঢাকা মহানগরীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আইন মানার সংস্কৃতির পাশাপাশি ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের কথাও তিনি বলেন।
আজ শনিবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ আয়োজিত ‘ঢাকা মহানগরীর বাস ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ডিএমপি কমিশনার হিসেবে আমি গত পৌনে পাঁচ বছরে বাস মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বার বার বসেছি। বেশকিছু সমস্যা চিহ্নিত করে আমরা সেগুলো থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজেছি। কিন্তু এর সঙ্গে বাস মালিক-শ্রমিক এবং পুলিশের বাইরেও সিটি করপোরেশন, ওয়াসাসহ অনেকগুলো সংস্থা জড়িত। সেসব সংস্থার সমন্বয়ের অভাবে আমরা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাইনি।
তিনি বলেন, সড়কগুলোতে ভৌত অবকাঠামের উন্নয়ন হলে অনেক পরিবর্তন চলে আসবে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে একটি এলাকা খুবই দুর্ঘটনাপ্রবণ ছিল। রোড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে একটি বাঁক সোজা করে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে ওই সড়কে ৯৫ শতাংশ দুর্ঘটনা কমে গেছে।
আমাদের মহানগরীর ওপর দিয়ে দূরপাল্লার গাড়িগুলো যাতায়াত করে। কয়েকটা বাইপাস হওয়ার পর কিছুটা কমেছে। ঢাকার বাস টার্মিনালগুলো বাস ডিপোতে পরিণত হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বাস ডিপো নগরীর বাইরে থাকার কথা।
সড়কে বাস বেশি নেই উল্লেখ করে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, বাস বেশি না থাকার কারণে গাড়িগুলো রাস্তায় দাঁড়িয়েই যাত্রী উঠানামা করছে। এক্ষেত্রে হাজারো জরিমানা করে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ ১৬৭ টা বাসস্ট্যান্ড চিহ্নিত করেছে। ফুটপাত দিয়ে যেন মোটরসাইকেল চলাচল করতে না পারে সেজন্য মেটাল পিলার স্থাপন করেছে। অথচ এগুলো ডিএমপির কাজ না হওয়া সত্ত্বেও নিজ অর্থায়নে ডিএমপি করেছে।
পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে এখনো হাত উঁচিয়ে গাড়ি চলাচলে সিগনাল দেওয়া হয়। আমরা এখনো এই সিগনাল ব্যবস্থাটাকে ডিজিটাল করতে পারলাম না। বেশিরভাগ মানুষ অপরাধ করলে পুলিশের দ্বারা আইন প্রয়োগ অসম্ভব মন্তব্য করে তিনি বলেন, চালকরা মোবাইলে কথা বলার সময় গাড়ি চালাবেন। পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে গাড়ির সামনে লাফ দিয়ে রাস্তা পারাপার হবেন। শতকরা ৯৮ শতাংশ মানুষই যদি আইন না মানে তাহলে পুলিশ কেন, ফেরেশতা নেমে এলেও আইন প্রয়োগ সম্ভব নয়। তাই আমাদের সবার মধ্যেই আইন মানার সংস্কৃতি চালু করতে হবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বিভিন্ন অপরাধে গাড়ি চালকদের আমরা প্রচুর পরিমাণে জরিমানা করছি। ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ যেন রাজস্ব আদায়ের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এটি ঠিক নয়। গাড়ির মালিক-শ্রমিকদের মনে রাখতে হবে এটা শুধু ব্যবসা নয়, সেবা। যত্রতত্র গাড়ি না থামানো, গাড়ির দরজা বন্ধ রাখা, বিনা কারণে হর্ন না বাজানো, শুধু আন্তরিক হলেই এসব মেনে চলা যায়। আমরা সহযোগিতা করবো। কিন্তু মূল উদ্যোগটা মালিক-শ্রমিকদেরই নিতে হবে।
‘একটা দুর্ঘটনা হয় আর একটা আন্দোলন হয়। সড়ক নিরাপদ না করা গেলে জনগণের এই ক্ষোভ দমানো সম্ভব নয়। আর এই রোশানল থেকে কেউই রেহাই পাবে না।’ কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ফুটেজ দেখে যদি পথচারীর গাফিলতি পাওয়া যায়, তাহলে চালকের পাশাপাশি সেই দায় পথচারীকেও নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন আছাদুজ্জামান মিয়া।
আরও বক্তব্য রাখেন ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ প্রমুখ। আলোচনা সভায় ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বাস মালিক-শ্রমিকরা উপস্থিত ছিলেন।