ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২, ২৭ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী আইন করেছিল : ধর্ম সচিব


প্রকাশ: ১৫ অগাস্ট, ২০২০ ০০:০০ পূর্বাহ্ন


বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী আইন করেছিল : ধর্ম সচিব

স্টাফ রিপোর্টার : "মানুষকে হত্যা করা যাবে কিন্তু হত্যাকারীর বিচার করা যাবে না"- বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা কোরআন-সুন্নাহবিরোধী এমন আইন করতে পিছপা হয়নি। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা কুরআন বিরোধী আইন করেছিল। কিন্তু আল্লাহ্পাকের হুকুমে ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার বাংলার মাটিতে হয়েছে।

আজ শনিবার (১৫ আগস্ট) সকাল ১১টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পূর্ব সাহানে স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ২০২০ পালন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যবৃন্দসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আলোচনা, মিলাদ ও বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্ম সচিব নূরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

ধর্ম সচিব বলেন, বঙ্গবন্ধুর কোন কর্মকাণ্ডে ঈমানের ঘাটতি ছিল না। আল্লাহর উপর ভরসা করেই তিনি তিনি সকল কাজ করতেন।

বঙ্গবন্ধুই সর্বপ্রথম আইন করে মদ জুয়া নিষিদ্ধ করেন। তিনিই সর্বপ্রথম তাবলীগ জামাতের জন্য বিশ্ব ইজতেমার জায়গা দান করেন। তিনিই প্রথম ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ওআইসি সম্মেলনে যোগদানের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের সাথে  সম্পর্ক স্থাপন করেন। বাংলাদেশকে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সদস্য হিসেবে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই প্রথম রেডিও-টেলিভিশনে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করার ব্যবস্থা করেন যা আজও চালু রয়েছে।

ধর্ম সচিব আরো বলেন,১৪ আগস্ট ১৯৭৫ শেষ রাতে মুয়াজ্জিনের আযানের ধ্বনি শুনে যখন মুসল্লিগণ মসজিদমুখী হচ্ছিল সে সময়ে ঘাতকের দল স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যসহ অন্যান্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে। এমনকি শেখ রাসেলের মত শিশুকে হত্যা করতেও তারা দ্বিধা করেনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের  গতিপথকে পরিবর্তন করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ তাআলার মেহেরবানীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২১ বছর পর বাংলাদেশ আবার সঠিক পথে অগ্রসর হয়।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত সোনার বাংলা বিনির্মাণে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। ১৯৯৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর  তিনি পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পন্ন করেন, ভারতের সাথে ফারাক্কা চুক্তি সম্পন্ন করে বাংলাদেশের পানি পাওয়ার ব্যবস্থা করেন, বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেন, দারিদ্রে হার উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনেন।

ধর্ম সচিব আরো বলেন, বাংলাদেশকে একটি জঙ্গীবাদী  রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি উদার গণতান্ত্রিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে পরিচিতি পেয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার সারা দেশকে বিদ্যুতায়িত করেছে। সমুদ্রবিজয় উপহার দিয়েছে। ল্যান্ডবাউন্ডারি চূক্তি সম্পন্ন করেছে।

তিনি তার বক্তৃতায় আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর  নেতৃত্বে সরকার পদ্মা সেতুর পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহত্তম প্রকল্প বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০ টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ জেলা ও উপজেলায় মসজিদ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে। এসব বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকার  বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছেন।

পরে ১১ টা পর্যন্ত বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে ১০০ জন কোরআনে হাফেজের মাধ্যমে ১০০ বার পবিত্র কোরআন খতম করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আনিস মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার, অতিরিক্ত সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব কাজী নূরুল ইসলাম, পরিচালক মোহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদার ও সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

খতমে কোরআন ও আলোচনা সভার পর বিশেষ দোয়া ও মুনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মুনাজাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যবৃন্দসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়। দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নতির জন্য দোয়া করা হয়। 

ধর্মসচিব নূরুল ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদসহ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ফাউন্ডেশনের পরিচালকবৃন্দ এবং সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ বিশেষ দোয়া ও মুনাজাতে অংশ নেন। মুনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মিজানুর রহমান।

এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যবৃন্দসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আজ সকাল ৯.৩০ টায় বনানী কবরস্থানে পবিত্র কোরআন খতম ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে আজ সকালে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে ধর্মসচিব নূরুল ইসলাম বৃক্ষরোপন কর্মসূচি এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন আগারগাঁওস্থ প্রধান কার্যালয় মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ দিনব্যাপি ফ্রি চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।


   আরও সংবাদ