ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

মণিরামপুরে নিরাপদ সবজিজোন পারখাজুরায় মিষ্টি কুমড়া চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা


প্রকাশ: ১২ অগাস্ট, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


মণিরামপুরে নিরাপদ সবজিজোন পারখাজুরায় মিষ্টি কুমড়া চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা

   

মণিরামপুর থেকে আব্বাস উদ্দীন : মণিরামপুর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের নিরাপদ সব্জিজোন খ্যাত মশ্মিমনগর ইউনিয়নের পারখাজুরা গ্রামের চাষিরা মিষ্টি কুমড়া (স্থানীয় নাম কদু) চাষের দিকে ক্রমান্বয়ে ঝুঁকে পড়ছে। হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া চাষ করে তাই ওই এলাকার বহু কৃষক আর্থিকভাবে সফলতার মুখ দেখেছে। 

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ বছর আগে এই গ্রামে মাত্র ৪/৫ জন চাষি এই মিষ্টি কুমড়ার চাষ শুরু করে। হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে অনেক কৃষক লাভবান হওয়ায় তাদের দেখাদেখি গত ৪/৫ বছরের ব্যবধানে বর্তমানে এই গ্রামে মিষ্টি কুমড়া চাষির সংখ্যা দাড়িয়েছে প্রায় এক’শ। 

সরেজমিন পারখাজুরা গ্রামে যেয়ে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ সুতলী ও বাঁশের চটা দিয়ে নির্মিত মাচা বা বান দিয়ে আবাদকৃত প্রতিটি ক্ষেতে ঝুলছে শত শত মিষ্টি কুমড়া। যা দেখে যে কোন চাষি কিংবা ব্যক্তির মন আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠবে। কথা হয় পারখাজুরা গ্রামের সফল চাষি ও কৃষক নেতা আব্দুল মান্নানের সাথে। তিনি বলেন, বোরো ধান কেটেই  ২৯ শতক জমিতি তিনি হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া/কদু চাষ করেছি। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে তার ক্ষেত এখন ফুলে ফলে ভরে গেছে। প্রায় দেড় হাজারের মত কদু তার ক্ষেতে এখন ঝুলছে। আরও কিছু ফল নতুন করে ধরতে পারে বলে তিনি আশা করছেন। কটের সুতা,বাঁশ ক্রয় ও মজুরি সবমিলে তার খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। 

যে কদু গাছে ধরেছে তা প্রায় লাখ টাকা বিক্রি হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি সানন্দে বলেন,  মাত্র সাড়ে তিন মাসে তার ১৫ কাঠা জমিতে তিনি ৮০ হাজার টাকার মত লাভের আশা করছেন। মিষ্টি কুমড়া চাষ অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশী লাভজনক তাই অনেক কৃষক অন্য ফসল আবাদ বাদ দিয়ে মিষ্টি কুমড়া চাষের দিকে ঝুকছে।

কুমড়ার ফলন শেষ হবার আগেই তিনি এই ক্ষেতের মাচায়/বানে লাউ চাষ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। ফলে এক খরচে মিষ্টি কুমড়া ও লাউ চাষ করে তিনি অধিক লাভের আশায় সর্বদা ক্ষেতের পরিচর্যা নিয়ে প্রতিদিন সময় দিচ্ছেন। মিষ্টি কুমড়া চাষে তার সফলতার পিছনে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ বেশ সহায়ক হয়েছে বলে তিনি জানান। কোন প্রকার বালাই নাশক ব্যবহার না করেই বালাই দমনের ফাঁদ বা সেক্স ফেরমন ব্যবহার মিষ্টি কুমড়া চাষে বেশ কার্যকরী একটি পন্থা বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এটিকে স্থানীয়ভাবে  প্লাষ্টিকের কৌটার মধ্যে পোকা মারার ফাঁদ বা কৌটার মধ্যে মান্দুলী ঝুলিয়ে পোকা বা বালাই দমন করার ফাঁদ বলা হয়। এই সেক্স ফেরমনে বালাই দমনের ফলে রোগমুক্ত ভাল মানের কুমড়া আবাদ সম্ভব হয়েছে। যার ফলেই কৃষকরা বেশি লাভবান হয়েছে।

মশ্মিমনগর ইউনিয়নে নিয়োজিত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলতাপ হোসেন জানান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া চাষের ক্ষেত্রে পারখাজুরা গ্রামের আব্দুল মান্নানসহ কিছু কুমড়া চাষীর প্রদর্শনী ক্ষেতে বিনা মূল্যে জৈব সার, কেঁচোসার ও বালাই দমনের জন্য সেক্স ফেরমন বিতরণ করা হয়েছে। 

আর অন্য চাষীদেরকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া চাষ করে পারখাজুরা গ্রামের আকবর মোড়ল, ডাঃ মোস্তাক মোড়ল, মহব্বত গাজী, মোজাম সরদারমহ প্রায় এক’শ কৃষক এখন আর্থিকভাবে সফলতা লাভ করেছেন বলে তিনি জানান।

তিনি আরও জানান, কৃষক মান্নানের ন্যায় অন্য কুমড়া চাষিরা তাদের ক্ষেতে একই মাচায় লাউ চাষ করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। ইতোমধ্যে তারা ক্ষেতে লাউয়ের বীজ বপন করেছেন। 

উপজেলা কৃষি অফিসার হীরক কুমার সরকার জানান, ক্ষেতে মাচা করে মিষ্টি কুমড়া চাষ একটি লাভজনক সব্জি চাষ। তাছাড়া একই মাচায় তিন-চার মাসের ব্যবধানে অন্য আর একটি সব্জি লাউ আবাদ করে কৃষকরা আরও বেশি লাভবান হচ্ছে। ফলে কৃষকরা অধিক লাভের আশায় মিষ্টি কুমড়া চাষের দিকে ঝুকছে। উপজেলার পারখাজুরা গ্রামের চাষিরা তার প্রকৃষ্ট উদাহরন।


   আরও সংবাদ