ঢাকা, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩২, ২২ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে ভিডিও কনফারেন্সিং হতে পারে রোল মডেল


প্রকাশ: ৪ অগাস্ট, ২০২০ ০০:০০ পূর্বাহ্ন


ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে ভিডিও কনফারেন্সিং হতে পারে রোল মডেল

মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি : মৎস্য খাতের উৎপাদন বৃদ্ধিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বিশেষ করে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে মৎস্য চাষিদের দ্রুততম সেবা প্রদান করায় যশোরের মণিরামপুর উপজেলার মৎস্য চাষিদের মাঝে এটি বেশ সুফল বয়ে এনেছে। 

চাহিদামাফিক ও ফলপ্রসু তথ্য সেবা মৎস্যচাষিদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার উপযুক্ত ও কার্যকর মাধ্যম হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সিং ইতোমধ্যে অত্র উপজেলায় একটি সফল সেবা মাধ্যম হিসেবে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে। যা আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল সেবা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে মৎস্যখাতে তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট একটি পন্থা বলে সংশ্লিষ্টরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। 

মণিরামপুর উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, মৎস্য খাতে তথ্য প্রযুক্তির সুফল যেন দেশের সকল মৎস্য চাষি পায় এবং তথ্যপ্রযুক্তির উপর ভর করে মৎস্য চাষিদের জন্য প্রয়োজনীয় নানা তথ্য ও পরামর্শ যেন সহজেই মৎস্যচাষিদের কাছে সহজে পৌঁছতে পারে সে জন্য মৎস্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারণ কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। 

সম্পদের অপ্রতুলতা, সীমিত জনবল,দাপ্তরিক ব্যস্ততা এবং কোভিড-১৯ এর মতো মহামরী অবস্থার কারণে মৎস্যচাষিদের দোরগোড়ায় দ্রুততম সময়ে সেবা প্রদান করা অত্যন্ত দূরহ ব্যাপার। ফলে মৎস্যচাষিদের আর্থিক তি থেকে রা করে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে মৎস্য চাষিদের দ্রুততম সেবা প্রদান করা একটি উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ মাধ্যম। 

ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে মৎস্য সেবা প্রদানে মৎস্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলোজি প্রোগ্রাম (এনএটিপি) ফেজ-২ প্রকল্পের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

এনএটিপি-২ প্রকল্পের কল্যাণে প্রকল্পের আওতাভুক্ত লিফ, মোবাইল ট্যাব ও বাইসাইকেল ব্যবহার করে অত্যন্ত দ্রুততম সময়ে স্বল্প খরচে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সহিত লিফের ভিডিও কনাফারেন্সিং এর মাধ্যমে মৎস্যচাষিদের তাৎণিক সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর ফলে মৎস্য চাষিরা দ্রুততম সময়ে পরামর্শ সেবা পাওয়ার মাধ্যমে তাদের আর্থিক তি পুষিয়ে নিচ্ছেন এবং মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখছেন।

এ কর্মসূচির ইনোভেশন আইডিয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে যেয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার ঘোষ বলেন, পুকুর, নদী-নালা, খাল-বিল বাওড়ে মৎস্য সম্পদে প্রাচুর্য্যপূর্ণ যশোরের মণিরামপুর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ  উপজেলা। উপজেলাটির আয়তন ৪৪৬ বর্গ কি.মি.। যেখানে মোট মৎস্য চাষির সংখ্যা ২৪,৪৯৪ জন (পুরুষ- ২৩,৪৯২ জন এবং মহিলা চাষী- ১০০২ জন)।

মণিরামপুর উপজেলার মোট মৎস্য উৎপাদন ৩৮,৮৮৪ মে. টন (২০১৮-১৯) যা চাহিদার তুলনায় প্রায় ৪ (চার) গুণ। মৎস্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে মৎস্য চাষিদের জরুরী পরামর্শ সেবা প্রদান করা মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ কর্মীগণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলেও বিভিন্ন প্রতিকূলতা, যেমন দাপ্তরিক জরুরী কাজে ব্যস্ততা, দক্ষ জনবলের স্বল্পতা, কোভিড-১৯ এর মতো মহামারী, প্রাকৃতিক দূর্যোগ ইত্যাদির কারণে মৎস্যচাষীদের সরেজমিনে পরামর্শ সেবা প্রদান করা অত্যন্ত দূরহ ব্যাপার। 

এমতাবস্থায় ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে মৎস্যচাষীকে অল্প সময়ে স্বল্প খরচে সরাসরি মৎস্য সম্প্রসারণ সেবা প্রদান করা একটি কার্যকর পদ্ধতি; যা মৎস্যচাষিদের আর্থিক ক্ষতি নিরসন করে মাছের উৎপাদন ত্বরান্বিত করবে। 

তিনি আরও বলেন, উপজেলার প্রতিটা ইউনিয়নে এনএটিপি-২ প্রকল্পের মাধ্যমে নিযুক্ত স্থানীয় মৎস্য সম্প্রসারণ প্রতিনিধীগণ (লিফ) এবং তাদের কাছে প্রদত্ত বাইসাইকেল, পানি (পানির বিভিন্ন প্যারামিটার) পরীক্ষার যন্ত্রপাতি এবং স্মার্ট মোবাইল ট্যাব (অ্যান্ড্রয়েড চালিত এবং সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট সংযোগ সহ) ইত্যাদির সমন্বয়ে উক্ত আইডিয়টি সহজেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। 

উক্ত কার্যক্রমের জন্য ভুক্তভোগী চাষীর ফোনকল প্রাপ্তির পর ১৫ মিনিটের মধ্যেই সেখানে উক্ত ইউনিয়নের নিযুক্ত লিফকে প্রেরণ করে পরবর্তী ১০ মিনিটের মধ্যেই কাক্সিক্ষত সেবা প্রদান করা সম্ভব।  লিফদের উক্ত সেবা প্রদানের নিমিত্ত কারিগরী বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা এবং দ্রুততম সময়ে চাষীর দোরগোড়ায় সেবা প্রদান করে কাক্সিক্ষত মৎস্য উৎপাদন নিশ্চিত করা এই ভিডিও কনফারেন্সিং সেবা মাধ্যমের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বলে তিনি জানান। 

এই সেবা মৎস্য চাষিরা কীভাবে পেয়ে থাকেন এ প্রসংগে তিনি বলেন, কোন মৎস্যচাষি জরুরী পরামর্শ সেবার জন্য উপজেলা দপ্তরের নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বরে (উপজেলা দপ্তরের কর্পোরেট মোবাইল নম্বরে) ফোন করবেন এবং কর্মকর্তার নির্দেশে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের এনএটিপি-২ প্রকল্পের নিয়োজিত ‘লিফ’ পানি পরীক্ষার কিট এবং স্মার্ট মোবাইল ট্যাবসহ বাইসাইকেল ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে উক্ত চাষির কাছে হাজির হবেন। 

লিফ কর্মকর্তার পরামর্শে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও তথ্য সংগ্রহের পর স্মার্ট মোবাইল ট্যাবের মাধ্যমে উক্ত চাষীকে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত করে থাকেন এবং সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা চাষীকে প্রয়োজনীয় জরুরী মৎস্য পরামর্শ সেবা প্রদান করে আসছেন। ফলে চাষী দ্রুততম সময়ে দোরগোড়ায় জরুরী মৎস্য পরামর্শ সেবা পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন এবং মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে মৎস্যচাষী পরামর্শ সেবা প্রদান পদ্ধতিতে অত্র উপজেলায় গত এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত ১৭ টি ইউনিয়নে মোট ৩০৫ জন মৎস্যচাষীকে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। 

৩০৫ জন মৎস্যচাষীকে উক্ত পদ্ধতিতে পরামর্শ সেবা প্রদানের ফলে উপজেলা মৎস্য দপ্তরের ৩০ হাজার টাকার মোটরসাইকেলের জ্বলানী এবং ৬০০ কর্মঘন্টা সাশ্রয় হয়েছে সুতরাং কার্যক্রমটি  গড়ে প্রতিদিন ৫ জন (বিভিন্ন স্থনের চাষী বিবেচনা করা হয়েছে) করে মৎস্যচাষীকে পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে বছরে প্রায় ১,৮০০ জন মৎস্যচাষীকে গড়ে ৪০ কি.মি. যাতায়াতের ভোগান্তী লাঘব করে পরামর্শ প্রদান করা সম্ভব হবে ফলে চাষীদের যাতায়াত বাবদ জনপ্রতি ১০০ টাকা হিসাবে সর্বমোট এক লাখ ৮০ হাজার টাকা সাশ্রয় করা সম্ভবপর হবে পাশাপাশি উপজেলা মৎস্য দপ্তরের কর্মকর্তাগণের জন্য ৭২ হাজার কি.মি. যাতায়াতে মোটর সাইকেলের এক ৪৪ হাজার টাকার জ্বালানী এবং মোট ৩,৬০০ কর্মঘন্টা সাশ্রয় হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার ঘোষ আরও জানান, ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে মৎস্যচাষিদের মৎস্য সেবা’র ক্ষেত্রে গৃহীত এই আইডিয়াটি বাস্তবায়নের ফলে- সার্বিকভাবে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে; মৎস্যচাষীরা দ্রæততম সময়ে দোরগোড়ায় জরুরী কাক্সিক্ষত মৎস্য পরামর্শ সেবা পাবে। মৎস্যচাষীরা দ্রæততম সময়ে দোর গোড়ায় জরুরী কাক্সিক্ষত মৎস্য পরামর্শ সেবা পাবে। মৎস্যচাষীদের সাথে উপজেলা মৎস্য দপ্তরের যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে;মৎস্যচাষীদের উপজেলা মৎস্য দপ্তরে আসার খরচ সাশ্রয় হবে। সীমিত জনবলের মাধ্যমে মৎস্যচাষীদের দ্রুততম উপায়ে পরামর্শ সেবা প্রদান করা সহজ হবে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মৎস্য পরামর্শ সেবা প্রদানের ফলে সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ এর সুফল পাওয়া সহজ হবে ও মৎস্যচাষীরা বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। তিনি এই কর্মসূচিটি বাস্তবায়নের ফলে প্রতিকূল অবস্থা যতই থাকুক সেবার মান বজায় থাকবে। 

এর ফলে চাষিরা দ্রুততম সময়ে স্বল্প খরচে প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণ করতে পারবে। ফলে চাষিদের মাছ চাষের ঝুঁকি হ্রাস পাবে, মৎস্য উৎপাদন ত্বরান্বিত হবে এবং আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে মণিরামপুরের উক্ত প্রকল্পটি হতে পারে  দেশের জন্য একটি রোল মডেল।


   আরও সংবাদ