ঢাকা, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ চৈত্র ১৪৩২, ২২ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

য‌শো‌রে স্ত্রী হত্যার দা‌য়ে দুই জ‌নের মৃত্যুদন্ড


প্রকাশ: ২৯ অগাস্ট, ২০১৯ ০০:০০ পূর্বাহ্ন


য‌শো‌রে স্ত্রী হত্যার দা‌য়ে দুই জ‌নের মৃত্যুদন্ড

য‌শো‌র থে‌কে খান সা‌হেব : স্ত্রী হত্যার দায়ে যশোর সদর উপজেলার আগ্রাইল গ্রামের জাহিদুল ইসলাম ও কেশবপুর উপজেলার মনোহরনগর গ্রামের মোমিন গাজীকে মৃত্যুদণ্ড ও অর্থ দণ্ডের আদেশ দিয়েছেন যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। 

যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) টিএম মুছা এ আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় দন্ডিতরা পলাতক ছিলেন। 

মামলা সূত্রে জানা গেছে, বাঘারপাড়া উপজেলার কটুরাকান্দি গ্রামের আব্দুস সামাদের মেয়ে তাসলিমা খাতুনকে সদর উপজেলার আগ্রাইল গ্রামের কওছার মোল্যার ছেলে জাহিদুল ইসলাম বিয়ে করে। বিয়ের পর ২০ হাজার টাকা যৌতুকের দাবিতে স্বামী জাহিদুল ও তার পরিবারের লোকেরা তাসলিমা খাতুনের উপর শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন শুরু করে। 

এক বছর পর তাসলিমার মা জাহানারা খাতুন জামাই জাহিদুলকে ১১ হাজার টাকা যৌতুক বাবদ দেন। তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে বাকী ১০ হাজার টাকার জন্য আবারো তাসলিমার উপন নির্যাতন শুরু করে। এরই মধ্যে তাসলিমার গর্ভে রিক্তা খাতুন নামে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু যৌতুক দাবিতে তাসলিমার উপরে নির্যাতন থামেনি। ২০০১ সালের ২৯ আগস্ট তাসলিমার মা জাহানারা বেগম তার জামাই বাড়ি বেড়াতে যান। রাত অনুমান ৯টার দিকে জাহিদুলসহ তার পরিবারের লোকেরা তাসলিমার কাছে যৌতুকের ১০ হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাসলিমাকে তরকারি কাটা বটির আছাড় দিয়ে এলোপাতাড়ি মারপিট শুরু করে। 

এসময় তাসলিমার মা জাহানারা বেগম ঠেকাইতে গেলে তাকেও মারপিট করে। এতে তাসলিমা ঘটনাস্থলে মারা যান। কিন্তু পিটিয়ে হত্যার বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য কলপাড়ে কাঠাঁল গাছের সাথে গলায় শাড়ি পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার চালায়। ফলে এঘটনায় প্রথমে ৩০ আগস্ট কোতোয়ালি থানায় অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করে থানা পুলিশ। লাশের ময়না তদন্ত শেষে রিপোর্ট হাতে পেয়ে জানতে পারেন আঘাতে হত্যা করা হয়েছে।

২০০২ সালের ১১ জুলাই নিহত তাসলিমার মা জাহানারা বেগম জাহিদুল ইসলাম, তার পিতা কওছার মোল্যা, জাহিদুলের ভাই মহিদুল ইসলাম ও জামির হোসেন, এবং তার ভাবি মহিদুলের স্ত্রী আমেনা খাতুনের নামে যশোর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন।

আদালতের নির্দেশে থানা পুলিশ ২০০৪ সালের ১৪ জুলাই নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করে।

প্রথমে এসআই শফিকুল ইসলাম এবং পরে এসআই সোহরাব হোসেন মামলাটি তদন্ত করে ৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে প্রধান আসামি জাহিদুল ইসলামকে মৃত্যু দণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন বিচারক। 

এ মামলার অপর চার আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন বিশেষ পিপি এম ইদ্রিস আলী ও আসামি পক্ষে অঞ্জনা রানী ধর এবং শামসুর রহমান। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত জাহিদুল ইসলাম পলাতক রয়েছে।

অপরদিকে কেশবপুরের বেতিখোলা গ্রামের মোবারক সরদারের মেয়ে মনোয়ারা খাতুনকে মনোহরনগর-পাথরঘাটা গ্রামের মৃত আতশ গাজীর ছেলে মমিন গাজী ১৯৯৭ সালে বিয়ে করে। বিয়ের সময় মমিন গাজী শ্বশুরের কাছে ৪০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করে। 

ওই সময়ে ২০ হাজার টাকা, ঘড়ি, বাইসাইকেল, স্বর্ণালংকার, গরু ও ছাগল দেয়া হয়। এরই মধ্যে মনোয়ারার গর্ভে বন্যা নামের একটি কন্য সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু বিয়ের সময় বাকি যৌতুকের ২০ হাজার টাকার জন্য মনোয়ারার উপর নির্যাতন থামে নি।

২০০৬ সালের ২০ মে সকাল ৯টার দিকে স্বামী মমিন গাজী ও তার মা জবেদা খাতুন শাবল দিয়ে মনোয়ারাকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে। এতে ঘটনাস্থলে মনোয়ারা মারা যায়। কিন্তু ওই সময়ে আসামিরা থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে।

এরপর মনোয়ার ভাই তকবার আলী যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে যৌতুক দাবিতে হত্যার অভিযোগে মামলা করেন।

আদালতের নির্দেশে একই বছরের ১৪ জুন নিয়মিত হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করে থানা পুলিশ। কেশবপুর থানার এসআই সিরাজুল ইসলাম তদন্ত শেষে মমিন গাজী ও তার মায়ের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামি মমিন গাজীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে মৃত্যুদণ্ড এবং তার মা জবেদা বেগমকে বেকসুর খালাসের আদেশ দিয়েছেন বিচারক। 

সরকারের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেছেন বিশেষ পিপি এম ইদ্রিস আলী এবং আসামি পক্ষে আবু নাসের মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত মমিন গাজী পলাতক রয়েছেন।


   আরও সংবাদ