ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

তদন্তের মধ্যেই পুলিশ–র‌্যাবের ব্রিফিং নিয়ে নীতিমালা তৈরির নির্দেশ


প্রকাশ: ২৯ অগাস্ট, ২০১৯ ০০:০০ পূর্বাহ্ন


তদন্তের মধ্যেই পুলিশ–র‌্যাবের ব্রিফিং নিয়ে নীতিমালা তৈরির নির্দেশ

মামলায় তদন্তের অগ্রগতি বা গ্রেফতার হওয়া আসামিদের বিষয়ে গণমাধ্যমে কতটুকু প্রচার করা যাবে, সে বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকার জামিনের রায়ের পর্যবেক্ষণে আজ বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছেন।

এসময় আদালত বলেন, বর্তমান আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি রিমান্ডে থাকা অবস্থায় বরগুনা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন। মিন্নি দোষ স্বীকার করেছেন বলে বরগুনার এসপি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা শুধু অযাচিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, বরং ন্যায়-নীতি, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের পরিপন্থীও। পরিস্থিতি ও বাস্তবতা যাই হোক না কেন, কোনও পুলিশ সুপারের মতো দায়িত্বশীল পদে থেকে এ ধরনের বক্তব্য জনমনে নানান প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে।

হাইকোর্ট বলেছেন, তদন্ত চলার সময়ে পুলিশ সুপারের (বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন) এ ধরনের বক্তব্যের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে। এটা কাম্য নয়। আমরা আশা করি, দায়িত্বশীল পদে থেকে পেশাদারিত্বের পরিচয় দেবেন। আমরা এ মামলার তদন্ত চলার সময়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকছি। কিন্তু পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।

পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ইদানীং দেখা যায়, অনেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরে নিয়ে এসে গণমাধ্যমে হাজির করে সংবাদ সম্মেলন করে। অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে মামলার তদন্ত নিয়ে উৎসাহী বক্তব্য দিতে দেখা যায়। গণমাধ্যমে হাজির করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে বিচারে অপরাধ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে অপরাধী বলা যাবে না। তদন্ত পর্যায়ে তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে গণমাধ্যমে কতটুকু প্রচার করা যাবে, সে বিষয়ে একটি নীতিমালা থাকা দরকার। নীতিমালা যাতে প্রণয়ন করা হয়, সে জন্য স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশের আইজিকে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন হাইকোর্ট।

এরপর আদেশে আদালত বলেন, এজাহারে মিন্নির নাম না থাকা, গ্রেপ্তারের পূর্বে আটক করে স্বীকারোক্তি আদায় করা, মিন্নির স্বীকারোক্তি আদায়ের পূর্বে পুলিশ সুপারের বক্তব্য দেওয়া এবং ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে মিন্নির নির্দোষ দাবি করা, তদন্ত শেষ পর্যায়ে থাকা, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী নারী ও শিশুর জন্য বিশেষ ব্যতিক্রম বিবেচনায় মিন্নির জামিন মঞ্জুর করলাম।

রায় শেষে আইনজীবী জেড আই খান পান্না আদালত চত্বরে গণমাধ্যমের কাছে এ ব্যাপারে ব্রিফ করেন। তখন তিনি জানান, এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ার আগেই মিন্নিকে নিয়ে পুলিশ সুপারের সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারেও আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন। তাতে আদালত বলেছেন, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরা আইনসম্মত নয়। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্রিফিং নিয়ে নীতিমালা তৈরির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

পাশাপাশি মামলাটি তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় মিন্নির বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ায় পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বিভাগীর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও আইজিপিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।


   আরও সংবাদ