ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ ভাদ্র ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

নৌবাহিনী প্রধান হলেন রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল


প্রকাশ: ১৭ জুলাই, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


নৌবাহিনী প্রধান হলেন রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল

   

স্টাফ রিপোর্টার : সরকার নতুন নৌবাহিনী প্রধান হিসেবে রিয়ার এডমিরাল এম শাহীন ইকবালকে নিয়োগ দিয়েছেন। আজ শনিবার (১৮ জুলাই) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে আগামী ২৫ জুলাই থেকে ভাইস এডমিরাল পদে পদোন্নতি পূর্বক বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান হিসেবে দ্বায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। 

আগামী ২৪ জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত তিন বছরের জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করবেন। তিনি পূর্বতন নৌপ্রধান এডমিরাল এএমএমএম আওরঙ্গজেব চৌধুরী'র স্থলাভিষিক্ত হবেন।

নব নিযুক্ত নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ০১ জুন ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ০১ ডিসেম্বর ১৯৮২ সালে এক্সিকিউটিভ শাখায় কমিশন লাভ করেন। তার দীর্ঘ এবং সুপরিচিত ৪০ বছরের কর্মজীবনে তিনি দৃষ্টান্তমূলক সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শণ করেছেন। তার পেশাদারিত্ব, সততা ও একনিষ্ঠতার জন্য তিনি নৌবাহিনীর সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও নাবিকগণের নিকট সুপরিচিত। 

তিনি নৌবাহিনী ফ্রিগেটসহ সকল শ্রেণীর জাহাজ ও গুরুত্বপূর্ণ ঘুাটি কমান্ড করেছেন। তাছাড়া, তিনি নৌ সদরে সহকারী নৌ প্রধান (অপারেশাস), সহকারী নৌ প্রধান (পার্সোনেল), পরিচালক নৌ অপারেশা›স, পরিচালক নৌ গোয়েন্দা, চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার, খুলনা নৌ অঞ্চলের অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সাথে পালন করেন। চাকুরী জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সর্বোচ্চ নেতৃত্বের গুনাবলী, সুদুর প্রসারী চিন্তা ভাবনা, আন্তরিকতা ও সততার ছাপ রেখেছেন।

দীর্ঘ চাকুরী জীবনে তিনি দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ ও সামরিক কৌশলগত শিক্ষা অর্জন করেছেন। তিনি প্রতিটি প্রশিক্ষণে উচ্চতর গ্রেডিং অর্জন এবং কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখায় নৌবাহিনী প্রধান এর নিকট হতে সর্বোচ্চ প্রশংসা প্রাপ্তসহ নানা ধরনের সম্মানে ভূষিত হন। 

তিনি যুক্তরাষ্ট্র হতে নেভাল স্টাফ কোর্স, মেরিটাইম কম্পোনেন্ট কমান্ডার ফ্ল্যাগ অফিসার কোর্স, ইন্টারন্যাশনাল সারফেস ওয়ারফেয়ার কোর্স, ভারত হতে এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার কোর্স এবং মিরপুর ন্যাশনাল ডিফে›স কলেজ হতে এনডিসি কোর্সসহ দেশ-বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ অত্যন্ত সফলতার সাথে সম্পন্ন করেন।

চাকুরী জীবনে রিয়ার এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিশেষ অবদান রাখেন। ২০১৩ সালে খুলনা নৌ অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার এর দায়িত্ব পালন কালে, তিনি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সমুদ্রসীমা নির্ধারনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিচারক ও বিশ্লেষক দলের সাথে কাজ করেন এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলের স্থানীয় ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, মিয়ানমার-টেকনাফ মাদক এবং মানব পাচার রোধে বিশেষ অবদান রাখাসহ জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অত্যন্ত সফলতার সাথে পালন করেন।

২০১৭ সালে বলপূর্বক বাস্তচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পূণঃবাসনের জন্য ভাসান চর প্রকল্পের বাস্তবায়নে রিয়ার এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল অন্যতম মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে প্রকল্পের পরিকল্পনা, তদারকি ও বাস্তবায়ন কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনা মোতাবেক প্রকল্প সূচনার মাত্র ১০ মাসের মধ্যে এক লক্ষ রোহিঙ্গাদের জন্য একটি প্রত্যন্ত দ্বীপকে বাসযোগ্য করে তোলার মাধ্যমে তিনি সর্বমহলের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন।

বর্ণাঢ্য চাকুরী জীবনে রিয়ার এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল আন্তর্জাতিক মেরিটাইম পরিমন্ডলে একাধিকবার বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, ভারত, সৌদি আরব, কুয়েত এবং কাতার সহ বিভিন্ন দেশে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও সামরিক প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। রিয়ার এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল তার অসামান্য একাডেমিক সাফল্য ও পেশাদারিত্বের জন্য নৌবাহিনীর সর্বোচ্চ পদক (এনবিপি) এবং নৌ উৎকর্ষ পদক (এনইউপি) তে ভূষিত হন।

ব্যক্তি জীবনে রিয়ার এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ঢাকার এক সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান, তার আদিবাস কুমিল্লায়। পারিবারিক জীবনে তিনি মিসেস মনিরা রওশন আক্তার এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একমাত্র ছেলে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হিসেবে কর্মরত এবং তার স্ত্রী টঘঋচঅ তে গবেষক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।

রিয়ার এডমিরাল এম শাহীন ইকবালের বিস্তৃত অভিজ্ঞতা, সাধারন জীবন যাপন এবং অসাধারন নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা নৌবাহিনীর সর্বস্তরের সদস্যদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার উৎস। তার সুদক্ষ নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আরও সমৃদ্ধ হবে বলে সকলের প্রত্যাশা। 


   আরও সংবাদ