ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ ভাদ্র ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

সংসার ঘানি...


প্রকাশ: ১০ জুলাই, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


সংসার ঘানি...

   

বিএন নিউজ ডেস্ক : আমরা ছেলে মানুষেরা বেশিরভাগই হয়তো বিয়ে করি অন্যের চোখে বউ কেমন হবে সেটা মাথায় রেখেই।সারাজীবনের পার্টনারশিপের জন্য অতীব জরুরি 'নিজের একান্ত-কথাটা' ভাবি খুব কম মানুষই।এক্ষেত্রে হয় আমরা নিজের একান্ত-চাওয়াটার ব্যাপারে ভাবতেই শিখিনি, নয়তো নিজের কি প্রয়জন তা হয়তো জানিই না।

সে যাইহোক, একটা মজার কথা মনে পড়লো।সবার সাথে শেয়ার করে মূল কথায় ফিরি।অনেকদিন আগে একবার আমার একজন সিনিয়র স্যারের সাথে বিয়ে সংক্রান্ত আলাপ উঠেছিল আমার। স্যার সেসময় সরকারের একজন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা ছিলেন।

কথা প্রসঙ্গে স্যার জানালেন,বিয়ে করতে তুমি ১০টি পয়েন্ট বিবেচনা করবে।

বেশ কৌতুহলী হয়েই জিজ্ঞেস করলাম,কিরকম পয়েন্ট স্যার?
তিনি তাঁর অফিস বয়কে দিয়ে একটা সাদা কাগজ ও স্কেল আনালেন। নিজেই লাইন টেনে ১০টি ঘর করলেন।সিরিয়াল নম্বর দিয়ে এক এক করে ঘরগুলোতে লিখলেন-
১) বংশ পরিচয়, ২) শিক্ষা-দীক্ষা, ৩) আদব-কায়দা, ৪) রান্নাগুণ থাকা, ৫) সৈন্দর্য (মূখোবয়ব) , ৬) সৈন্দর্য (চুল,উচ্চতা,স্বাস্থ্য), ৭) নম্রতা/মানিয়ে চলার প্রবনতা, ৮) সামাজিক মর্যাদা (চাকরি/ব্যাবসা/চ্যারিটি ফান্ড), ৯) পছন্দ-অপছন্দ ও ১০) বুদ্ধিমত্তা।

(স্যারের লেখা ১০টি পয়েন্টের লেখা সবগুলো কথা হুবহু মনে নেই, কিঞ্চিৎ ভুল হতেও পারে)

প্রতিটি ঘরের জন্য তিনি ১০ পয়েন্ট করে রাখলেন এবং এক এক করে সব ঘরের ব্যাখ্যা করতে থাকলেন।দারুন করে স্যার বোঝালেন।ব্যাখ্যাগুলো কেমন হবে নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পেরেছেন তাই সেব্যাপারে বলে সবার আর ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে চাইনা।

যাইহোক স্যার তাঁর কথাগুলো বলতে থাকলেন।বললেন, ধরো সব ঘরের মোট পয়েন্ট হলো ১০০।প্রতিটি ঘরে স্যার দিলেন ১০ পয়েন্ট করে।এখন যেভাবে বুঝালাম স্যার বলতে থাকলেন,সেভাবে তুমি মেয়ে দেখবে আর তোমার মার্ক্সটা প্রতিটি ঘরে বসাবে।যোগ করে তোমার মোট নম্বর যদি ৬০ এর নিচে আসে তাহলে সেই মেয়েকে আর বিয়ে করার দরকার নেই। ষাটের উপরে থাকলে চিন্তা করে দেখতে পারো। বলেই তিনি তাঁর ড্রয়ার থেকে একজন বিসিএস ক্যাডার ম্যাডামের ছবি বের করে সামনে ধরলেন।বললেন,দেখো একে তোমার কেমন লাগে?

আমাকে ছবিটা দেখতে দিয়ে স্যার একা একাই বলতে থাকলেন,শোনো তোমার ভাবীকে আমি গ্রাম থেকে বিয়ে করেছিলাম।বিয়ের সাত দিনের মধ্যেই তাঁকে আমি আমার মতো করে তৈরি করে নিয়েছি।আর বিয়ের এতো বছর পর আমি যদি এখন তোমার সামনেই তাঁকে ফোন দিয়ে বলি উম্মে কুলসুম (এটি কাল্পনিক নাম,আসল নাম বলা যাবেনা,চাকরি থাকবে না) এখন তুমি ব্যাগ গোছাও। আমি বাড়ি এসেই তোমাকে নিয়ে আমার গ্রামের বাড়ি রওয়ানা দিবো।

স্যার এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,চলো আমার সাথে,আমি বললেই দেখবে সে ব্যাগ গুছিয়ে রেডি হয়ে বসে আছে।আমাকে একটি প্রশ্নও করবে না যে, এই অ'বেলায় কেন আমার গ্রামের বাড়িতে যেতে হবে...ইত্যাদি ইত্যাদি।জীবনে বউ হতে হয় এমন,বুঝলে।

পাত্রী ম্যাডামের ছবি দেখার থেকে আমি স্যারের কথাগুলোই মন দিয়ে শুনলাম।ভালই লাগলো শুনে।ভাবলাম সত্যিই তো,ম্যাডাম তো চমৎকার মানসিকতার মানুষ।কেন যেন মুহূর্তে আমারও মনে হলো, এমন বউ পেলে মন্দ হতো না।

এরপর কয়েক সেকেন্ড পাত্রী ম্যাডামের ছবি দেখে স্যারকে বললাম স্যার,ওনার এসএসসি কতো সালে ছিল?
স্যার যা বললেন,তাতে দেখলাম তিনি (পাত্রী ম্যাডাম) আমার থেকে ২ বছরের সিনিয়র ছিলেন।বললাম স্যার,উনি যে আমার থেকে একটু বড় হয়ে গেলো। বিয়েতে তো ছেলে-মেয়ে সমবয়সী হয় অথবা মেয়েরা একটু ছোটই থাকে।

স্যার বললেন, তোমাকে ১০টা পয়েন্ট দিয়েছি,সেগুলো ভালো করে পড়ে তারপর ভাবো।ভেবে জানাও কি করবে।

বললাম জি স্যার,বুঝতে পেরেছি।ছবিটা আমি বাসায় নিয়ে যাই,ভেবে নিয়ে আবার আসবো আপনার কাছে।

তারপর,নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় স্যারের অফিসে আমার আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি।অন্যদিকে ম্যাডামের ছবিটি হারিয়ে ফেলায় সেটিও আর ভালো করে দেখাও হয়নি।এসব নিয়ে পরবর্তীতে স্যারের সাথে আর কোন কথাও হয়নি।

যাইহোক,অনেকদিন পর আজকে একটা বিয়ের ম্যাচ-মেকিং করার মতো একটা কান্ড ঘাড়ে এসে চেপেছিল।কোন এক পাত্রের বিয়ের জন্য উপযুক্ত মেয়ে পেতে পাত্রের ভাই এসেছিল আমার কাছে।পাত্রের ভাই আমার অতি স্বল্প পরিচিত একজন ব্যক্তি।তার কাছেই জানলাম পাত্র একজন সদ্য যোগদানকৃত বিসিএস ক্যাডার।পাত্রের ভাই এর ধারনা, আমি যেহেতু অনেক বিসিএস প্রার্থীদের অনলাইনে পড়াই-টড়াই, কাজেই আমার হাতে নিশ্চয়ই অবস্থাসম্পন্ন ঘরের সুন্দরী মেয়েদের একটা তালিকা প্রস্তুত করে রাখাই আছে।

পাত্রের বড় ভাই এর কথা শুনে মনে হলো, যেন পাত্র ছেলেটা নয় বরং বিয়ে করবে ছেলের এই বড় ভাইটাই।কি অদ্ভুত সব তার যে চাহিদা ইনিয়ে বিনিয়ে আমাকে জানালো তা এই যুগে এসে আবারও শুনতে হবে ভাবিনি। সে নিজেও হয়তো জানেনা সে কি চাইবে আর কি চাইবে না। নিশ্চয়ই পাত্রের বাবা-মা ও আরো ভাই-বোন আছে।তাদেরও বিসিএস ক্যাডার ভাইটিকে নিয়ে আলাদা আলাদা চাওয়া পাওয়ার হিসেব থাকতে পারে।

পাত্র কেমন বা তার বক্তব্য এক্ষেত্রে কি তা আমার জানার সুযোগ হয়নি।আমিও আর এই সুযোগটি নেবার মতো আগ্রহ পাইনি।

তবে, শঙ্কাটা আমার কাছে ঐটাই।পরিবারের সবার চাহিদামতই হয়তো ছেলেটার কোথাও একদিন কারো সাথে বিয়েটা হবে। বিয়েতে কপাল ভালো হলে তো ভালই।আর কপালে ভিন্ন কিছু লেখা থাকলে তো কথাই নাই।
কোন কারনে দুজনের চাহিদার মিল না হলে,দুজন সম্পুর্ণ ভিন্ন মানসিকতার মানুষ হলে, কিংবা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের প্রতি উভয়ের প্রকৃত ভালোবাসা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বা টান না থাকলে হাজার বছর সংসার করেও সংসারে চাপা আগুন লেগে থাকতে পারে যুগের পর যুগ।কার জীবনে যে কি চাওয়া-পাওয়া ছিল তা হয়তো আর কেউ জানতেও পারবে না;হয়তো সংসার নামক ঘানি'টাই টেনে নিয়ে যেতে হবে জীবনভর...

মাইদুল ইসলাম প্রধান
সিনিয়র তথ্য অফিসার
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়
ফেসবুক টাইম লাইন থেকে সংগৃহত।


   আরও সংবাদ