ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ ভাদ্র ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

সামাজিক দুরত্ব মানা হচ্ছে না চৌগাছার পশুর হাটে, বাড়ছে করোনা ঝুকি!


প্রকাশ: ৬ জুলাই, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


সামাজিক দুরত্ব মানা হচ্ছে না চৌগাছার পশুর হাটে, বাড়ছে করোনা ঝুকি!

   

চৌগাছা (যাশোর) প্রতিনিধি : প্রতিদিনই বাড়ছে যশোরের চৌগাছায় করোনা রোগীর সংখ্যা। করোনা প্রসার ঠেকাতে নানা রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন উপজেলা প্রশাসন। এসব পদক্ষেপের কোন বালাই নেই শহরের পশুর হাটে। 

কোরবানীর ঈদ দোরগোড়ায় হওয়ায় বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জ থেকে গরু ছাগল ক্রেতা-বিক্রেতা গায়ে গা লাগিয়ে ঠেলা ঠেলি করে এ হাটে ঘোরা ফেরা করছে। গরু হাটের এ অবস্থা দেখে হতাশ সচেতন জনসাধরণ । তারা এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থার দাবি জানান।

সরেজমিনে বাজার পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় যে, শহরের প্রান কেন্দ্রে টেংগুরপুর অবস্থিত উপজেলার একমাত্র পশু হাটটি। সপ্তাহের রবি ও বুধবার এখানে হাট বসে। পার্শর্তী ঝিকরগাছা, কালিগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর উপজেলা থেকে এখানে গরু-ছাগল ক্রয়-বিক্রয় করতে আসে কয়েক হাজার মানুষ। বাজারে হাজার হাজার লোক থাকলেও তাদের অধিকাংশেরই মুখে মাস্ক নেই। অনেককে আবার গরমে গায়ে কোন জামা না দিয়ে খালি গায়ে বাজারের মধ্যে ঘোরা ঘুরি করতে দেখা যায়। 

এদিকে এ উপজেলায় করোনা রোগীর মধ্যে অধিকাংশই পৌরসভার মধ্যে রয়েছে ২৬ জন রোগী। প্রতদিনই বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। এ নিয়ে অনেকের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

কালিগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা গরু ব্যাপারি আলাউদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা এক নসিমনে আটজন ব্যাপারি এসেছি। মুখে মাস্ক না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাস্ক আমাদের পকেটে আছে। সব সময় ব্যবহার করে কান ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। এভাবে গরমে আর পারা যায়না। সামাজিক দুরত্বের ব্যাপারে তিনি বলেন,’গরুর হাটে সামাজিক দুরত্ব চলেনা’।

বাজারের পূর্ব পাশের্ রেজাউলের চায়ের দোকান। সামনে তিনটি বেঞ্চ। এখানে গাদা গাদি করে বসে আছেন ১৬/১৭ জন লোক। পাশেই আরো দশ বারো জন লোক দাঁড়ায়ে গল্প করছে । কেউ চা পান করছে। কেউ পান খাচ্ছে। আর কেউ চায়ের জন্য অপেক্ষা করছে। রেজাউল আর তার স্ত্রী চা আর পান তৈরির কাজে সব সময় ব্যাস্ত। দোকানে বসা অনেকেরই মুখে মাস্ক নেই। আবার যাদের কাছে আছে তাদের বেশির ভাগেরই নাকের নিচে আর কানে ঝোলান। 

পলুয়া গ্রাম থেকে পাঁচটি ছাগল বিক্রি করতে আসা ইরাদ আলী বলেন, ভাইরে করোনার থেকে বেশি জ্বালায় আছি। পেটে ভাত না থাকলে মুখে মাস্ক আর সামাজিক দুরত্ব দিয়ে কি হবে?

সব থেকে বেশি ভিড় দেখা যায় খাজনা নেয়া অফিসের সামনে। এখানে গাদা গাদি করে লাইনে দাঁড়ায়ে রয়েছে খাজনা দেয়ার জন্য।  তাদের বেশির ভাগই গরমে গা ঘেমে দুর্গন্ধ পরিবেশে অতিষ্ট। 

তারা বালেন, এ পরিস্থিতিতে দু’তিন যায়গায় খাজনা নিলে ভালো হতো। বাজারের পাশেই আতিয়ার রহমানের বাড়ি । 

তিনি বলেন, গরুর হাটের এ পরিবেশের কারনে করোনা নিয়ে আমরা সার্বক্ষণিক আতঙ্কিত থাকি। হাট নিয়ে আমাদের যে সমস্যা তার থেকে সমস্যা হলো এদের কারোনা সম্পর্কে কারোর কোন সচেতনতা জ্ঞান নেই। সামাজিক দুরত্ব মেনে হাট চালালে আমরা সবাই বেঁচে যাবো বলে তিনি মন্তব্য করেন। 

এদিকে পৌরসভা সুত্রে জানা গেছে, গত প্রায় তিন মাস আগে এ হাটের ইজারার মেয়াদ শেষ হয়েছে। হাট এখন পৌরসভার তত্ত্বাবধানে খাসভাবে পরিচালিত হচ্ছে। বাজারে প্রতিদিন করোনা সচেতনতার ব্যাপারে মাইকিং করা হলেও এখানে তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। 

পৌরসভার সচিব আবুল কাশেম বলেন, জীবনটা আমার আর এ ব্যাপারে আমাকেই সচেতন হতে হবে। আমরা পৌরসভায় বিভিন্ন কার্যক্রম পালন করছি। তার পরেও নিজের স্বচেতনতা নিজেই রাখার কথা জানান তিনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুতফুন্নাহার লাকি বলেন, সামাজিক দুরত্ব না মানলে সকলকেই বিপদে পড়তে হবে। হোক সেটা গরুর হাট বা অন্য কোন যায়গা। তবে এখানে একটু বেশি কেয়ার দেয়া দরকার।

বিদায়ী উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, কোর্টের একটা আদেশের কারনে এ হাট এখন খাসভাবে পৌরসভা পরিচালনা করছে। তারাই এ ব্যাপাবে ভালো ব্যবস্থা নিতে পারবে।


   আরও সংবাদ