ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ ভাদ্র ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চৌগাছায় বৃষ্টির মধ্যে সড়কে কার্পেটিং, পাশের দোকানে ঘুমাচ্ছেন প্রকৌশলী


প্রকাশ: ৪ জুলাই, ২০২০ ১৪:০০ অপরাহ্ন


চৌগাছায় বৃষ্টির মধ্যে সড়কে কার্পেটিং, পাশের দোকানে ঘুমাচ্ছেন প্রকৌশলী

   

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি : প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মানাধীন যশোর-চৌাগাছা সড়কে বৃষ্টির মধ্যেই কার্পেটিংয়ের কাজ করলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এসময় সড়কের পাশের একটি চায়ের দোকানে ঘুমাচ্ছিলেন কাজটির সাইট তদারককারী কর্মকর্তা সড়ক ও সেতু বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম।

রোববার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে সিংহঝুলী টালিখোলা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে যশোর- চৌগাছা সড়ক প্রশস্তকরণ ও পূণঃনির্মাণ প্রকল্পের কাজের কার্পেটিং করার সময়। 

জানা গেছে, আজ যশোর-চৌগাছা সড়ক নির্মাণ কাজের কার্পেটিংয়ের কাজ প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও চলছিল। সে সময় সড়কটি দিয়ে চৌগাছা থেকে যশোর যাওয়ার পথে বিষয়টি দেখতে পান চৌগাছা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক দেবাশীষ মিশ্র জয়। বৃষ্টির মধ্যেই সড়কে কার্পেটিংয়ের বিষয়টি দেখে তিনি ওই স্থানে নিজের গাড়ি থামিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করেন। 

তখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সড়ক ও সেতু বিভাগের যশোর নির্বাহী প্রকৌশল অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে একটি চায়ের দোকানে বসে ঘুমাতে থাকা অবস্থায় দেখিয়ে বলেন তিনি কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন তাই আমরা কাজ করছি। 

এসময় দেবাশীষ মিশ্র জয় উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে ডেকে বৃষ্টির মধ্যে কাজ করতে অনুমতি দিয়েছেন কেন জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। 

তখন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জয় বলেন, কোথায় কাজ বন্ধ রয়েছে? ওদিকে তো কাজ চলছে আমরা ছবি তুলে আনলাম। আপনি এখানে বসে রয়েছেন কেন? আপনি দেখবেন না? তখন তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করতে থাকেন। 

দেবাশীষ মিশ্র জয় বলেন, এটা তো আমাদের রাস্তা। টাকা নিয়ে আসি আমরা জনপ্রতিনিধিরা। আপনি এভাবে করবেন কেন? এভাবেই কি চলবে? তখন জাহাঙ্গীর আলম বলেন যে পিচ মিক্সিং করা হয়ে গেছে সেগুলো কি করব? ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কি করবে? এসময় জয়ের সাথে থাকা স্থানীয় সাংবাদিক এইচএম ফিরোজ জাহাঙ্গীর আলমকে বলেন, আপনি কি বৃষ্টির মধ্যেই কাজ করাবেন? ওদিকে তো যে কাজ করা হয়েছে সেখানে পীচ উঠে যাচ্ছে। 

তখন তিনি বলেন না, কাজ করাবো না। এ ঘটনার পর উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম কাজের সাইটে থাকা ঠিকাদারের প্রতিনিধিকে সাইটে বৃষ্টির মধ্যে কার্পেটিং কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। 

তবে ভাইস চেয়ারম্যান জয় যশোর থেকে ফেরার পথে দেখতে পান মিক্সিং করা সেই পিচ দিয়ে সড়কে কার্পেটিং করা হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দেবাশীষ মিশ্র জয় বলেন, আমি একটি বিশেষ কাজে যশোর যাচ্ছিলাম। তখন দেখি বৃষ্টির মধ্যেও সড়কে কার্পেটিংয়ের কাজ হচ্ছে। এভাবে বৃষ্টির মধ্যে কার্পেটিংয়ের কাজ করলে ওই পিচ উঠে যাবে বলে আমি গাড়ি থেকে নেমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির কাছে জানতে চাই এভাবে বৃষ্টির মধ্যে কার্পেটিং করা হচ্ছে কেন? তখন তারা বলেন কাজের সাইটে উপ-সহকারী প্রকৌশলী রয়েছেন। 

তিনি আমাদের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আমরা কাজ করছি। সে সময় দেখি উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম দূরে সড়কের পাশে একটি চায়ের দোকানে বসে বসে ঘুমাচ্ছে। আমি উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি এক পর্যায়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেও আমি যশোর থেকে ফেরার পথে দেখতে পাই সেই বৃষ্টির মধ্যেই মিক্সিং করা পিচ দিয়ে কার্পেটিং করেছে।

এ বিষয়ে জানার জন্য সড়ক ও সেতু বিভাগের যশোর নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের ব্যবহৃত মোবাইলে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

এ বিষয়ে সড়ক বিভাগের যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বৃষ্টির মধ্যে কাজ করার কোন সুযোগ নেই। এ ধরনের অনুমতি দেয়ার প্রশ্নই আসে না। সকালেই কাজটি বন্ধ করা হয়েছিল। 

তিনি বলেন, ঘটনার সময়ের বিষয়টি আমি যতটুকু জেনেছি শেষের দিকে অল্প কিছু ম্যাট্রিয়ালস ছিল। সেটা দিয়ে কার্পেটিং করা হয়েছে।
 


   আরও সংবাদ