প্রকাশ: ১ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ পূর্বাহ্ন
এম এ ইউসুফ আলী, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় চাহিদা থাকলেও মৌসুমী ফল তরমুজের আশানুরূপ ফলন উৎপাদন হয়নি। ফলে মহাজোনের দাদন কিংবা এনজিওর ঋণের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তরমুজ চাষিরা।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, এখানকার ১৪ হাজার ২০০ মানুষ তরমুজ আবাদের সঙ্গে জড়িত। ফলন ভাল হওয়ার পাশাপাশি চাহিদা থাকায় এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান অর্থকরী ফসল এখন তরমুজ। কিন্তু চলতি মৌসুমে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত কয়েক দফার বৃষ্টিপাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ক্ষেতে পানি জমে ৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমির তরমুজ নষ্ট হয়ে গেছে। তাই চাষিরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিল ১০ হাজার হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে কয়েক দফার বৃষ্টিপাতে ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমির তরমুজ নষ্ট হয়ে গেছে। বাকি ৬ হাজার ৩০০ হেক্টরে ৩০ মেট্রিকটন হারে ১ লক্ষ ৮৯ হাজার টন ফলন উৎপাদন হয়েছে।
আড়তদাররা জানান, এই মুহূর্তে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তরমুজের বেশ চাহিদা রয়েছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী রপ্তানি হচ্ছে না। তাই ক্রয়-বিক্রয় চড়া দামে হচ্ছে। চট্রগ্রামের সাতকানিয়া থেকে এ উপজেলায় তরমুজ কিনতে আসা পাইকার আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর রাঙ্গাবালীতে তরমুজ কিনতে আসি। গতবছরের চাইতে এবার তরমুজ অনেক কম। এবার যে পরিমাণ চাহিদা, সে পরিমাণ তরমুজ আমরা আড়তে পাঠাতে পারছি না। এখন আমরা সাইজ অনুযায়ী প্রতি পিচ তরমুজ ১০০-২০০ টাকায় ক্রয় করে আড়তে পাঠাই।’ বরগুনার আমতলী থেকে আসা পাইকার চাঁনমিয়া বলেন, ‘গত বছরগুলোতে আমরা ১৫-২০ কেজি ওজনের ফল কিনেছি। কিন্তু এবার ৮-১০ কেজি ওজনের ওপর ফল নেই। বৃষ্টিতে গাছের ক্ষতি হওয়ায় ফল বড় হয়নি।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, এবারও উপজেলার খালগোড়া, কোড়ালিয়া, বাহেরচর, কাউখালী ও কাজির হাওলাসহ বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী তরমুজ ঘাট গড়ে ওঠেছে। কিন্তু গত বছরগুলোর মত ঘাটগুলোতে তেমন প্রাণচাঞ্চল্য নেই। উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কাউখালী গ্রামের তরমুজ চাষি কামরুল হিরু বলেন, ‘আমি ১২ কানি জমিতে তরমুজ দিছি। ২৪ লাখ টাকা দাদন ও ঋণ করে লাভের আশায় তরমুজ দিছিলাম। এই বৃষ্টিতে আমার সব শ্যাষ (শেষ)।’
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) আব্দুল মান্নান জানান, বৃষ্টির পরও যাদের ফলন টিকে আছে, তারা লাভবান হবে। যাদেরটা নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের লোকশান হবে। এই বৃষ্টিপাতের কারণে আনুমানিক একশত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছি। কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিবে যে, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়া হবে কিনা।