প্রকাশ: ২১ অগাস্ট, ২০১৯ ০০:০০ পূর্বাহ্ন
মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেট ও অনিয়ম তদন্তে গঠিত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল না করলে তাদের বিরুদ্ধেই আদালত অবমাননার দায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট।
আজ বুধবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এদিন আদালতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রতিবেদন দাখিলে সময় চাওয়া হয়।
আদেশে তদন্তের বিষয়ে ৫টি কার্যপরিধি ঠিক করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এই কমিটিকে আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত পুনরায় সময় বেঁধে দিয়েছেন আদালত।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান। আর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ছিলেন শেখ জালাল উদ্দিন।
পরে রাশনা ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, শুনানিকালে আদালত বলেছেন, ৬ মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। এখন ১০ মাস পার হয়ে যাচ্ছে। কমিটি বারবার এসে সময় চাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা কমিটিকে কার্যপরিধি ঠিক করে দিতে আদালতে আবেদন করি। আদালত আমাদের আবেদন মঞ্জুর করে ৫টি কার্যপরিধি নির্ধারণ করে দেন।
এসব কার্যপরিধি হলো—
এক. সিন্ডিকেটটা চালু ছিল ১০ মার্চ ২০১৭ থেকে ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত। এই সময়ে কোন কোন রিক্রুটিং এজেন্সি শ্রমিক পাঠাতে পেরেছে, সে তথ্য দিতে হবে। এতে যদি দেখা যায় এই ১০ এজেন্সি ছাড়া অন্য কেউ শ্রমিক পাঠাতে পারেনি, তাহলে প্রমাণ হবে সিন্ডেকেট ছিল।
দুই. মাইগ্রেশন খরচ বাবদ প্রত্যেক শ্রমিককের কাছ থেকে কত টাকা নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে হবে।
তিন. মালয়েশিয়া থেকে যখন সিদ্ধান্ত এলো ১০ এজেন্সির মাধ্যমেই শ্রমিক পাঠাতে হবে, তখন এখান থেকে প্রতিবাদ করা হয়েছে। ওই প্রতিবাদের মুখে এই মামলার ১১ নম্বর বিবাদী নুর আলী—(যাকে এই সিন্ডিকেটের মাস্টারমাইন্ড বলা হচ্ছে) তিনি সরকারের কাছে একটা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাতে বলেন, ‘এক-একটি সিন্ডিকেটের আরও ২০টি রিক্রুটিং এজেন্সি অন্তর্ভুক্ত, এতে ২০০ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে সবাইকে তাতে যুক্ত করবো।’ তখন সরকার বিষয়টি অনুমোদন করে। কিন্তু আমরা (হাইকোর্ট) এটাকে তদন্ত করে দেখতে বলেছি, সব এজেন্সি মিলে শ্রমিক পাঠিয়েছিল, নাকি শুধু ১০ এজেন্সি পাঠিয়েছে।
চার. মালয়েশিয়ায় বা বিদেশে শ্রমিক পাঠাতে হলে শ্রমিকদের মেডিক্যাল পরীক্ষা করতে হয়। মালয়েশিয়ার জন্য ২৬টি মেডিক্যাল সেন্টার খোলা হয়েছিল। এই ২৬টির মধ্যে ৮টি ছিল সিন্ডিকেটের। এই মেডিক্যাল সেন্টারের মাধ্যমে কত টাকা আদায় হয়েছে, সেটাও তদন্ত করে আদালতকে জানাতে হবে।
পাঁচ. জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ইসরাফিল আলমসহ ৪ জন সংসদ সদস্য সিন্ডিকেটের বিষয়ে তদন্ত করতে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন। শ্রমিকদের থেকে যে টাকা নেওয়া হয়েছে সেটা পাচার হয়েছে কিনা, তাও তদন্ত করে জানাতে হবে।
এছাড়া সিন্ডিকেটের অন্যান্য অনিয়মও সংশ্লিষ্ট কমিটি তদন্ত করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট।