প্রকাশ: ৪ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : বর্তমান সারাবিশ্বে নভেল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণ দেখা দিয়েছে এবং এর প্রতিরোধে সরকার বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ওএমএস এর মাধ্যমে ভোক্তা পর্যায়ে চালের মূল্য প্রতিকেজি ১০ টাকা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তৎপ্রেক্ষিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত ওএমএস খাতে চালের এক্স গুদাম মূল্য ৮ টাকা এবং ভোক্ত পর্যায়ে ১০ টাকায় পুনঃনির্ধারণ করে।
শনিবার (৪ এপ্রিল) সকালে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার সুমন মেহেদী প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয় হতে খাদ্য অধিদপ্তরে প্রেরিত এক নির্দেশনায় নিন্মোক্ত নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়:
১. করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধকল্পে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট কর্মহীন মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বিশেষ এ ওএমএস কর্মসূচি চলমান ওএমএস (আটা) কর্মসূচির অতিরিক্ত হিসেবে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত তারিখ পর্যন্ত চলমান থাকবে।
২. করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিকালীন সময়ে জনসাধারণ গৃহে অবস্থান করায় সাধারণ শ্রমজীবি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ফলে তাদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। দিনমজুর, রিক্সা চালক, ভ্যান চালক, পরিবহণ শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকানদার, ভিক্ষুক, ভবঘুরে, তৃতীয়লিঙ্গ (হিজরা) সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সকল কর্মহীন মানুষকে এর আওতায় এনে এই বিশেষ ওএমএস কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
৩. কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভোক্তার বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত মাস্টাররোল (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মোবাইল নাম্বারসহ) সংরক্ষণ করতে হবে।
৪. একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে ভোক্তা হিসেবে নির্বাচন করা যাবে না। এছাড়া, উক্ত পরিবারের কেউ যদি খাদ্য বান্ধব অথবা ভিজিডি কমূসূচির উপকারভোগী হয়ে থাকেন তাহলে তিনি এ কর্মসূচির আওতায় ভোক্তা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হতে পারবেন না।
৫. জেলা ও বিভাগীয় শহরের কেন্দ্রে প্রতি ২ মে.টন এবং ঢাকা মহানগরের কেন্দ্র প্রতি ৩ মে.টন করে চাল দৈনিক বিক্রি করা যাবে।
৬. জেলা ও বিভাগীয়/ঢাকা মহানগরীর ওএমএস বরাদ্দের পরিমাণের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ওএমএস কমিটির (জেলা ও বিভাগীয়/ঢাকা মহানগরীর ওএমএস কমিটি) মাধ্যমে বিদ্যমান ওএমএস কেন্দ্রের সংখ্যা ঠিক রেখে বিক্রয়কেন্দ্রের স্থান পূনঃনির্ধারণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী, শ্রমজীবীদের বসবাস কেন্দ্রের নিকটস্থ বস্তি এলাকায় অথবা পর্যাপ্ত খালি জায়গা আছে এমন স্থানকে অস্থায়ী বিক্রয়কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করতে হবে।
৭. ভোক্তা প্রতি ৫ কেজি চাল বিক্রয় করতে হবে এবং একজন ভোক্তা জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদর্শণ করে সপ্তাহে একবার মাত্র ৫ কেজি চাল ক্রয় করতে পারবেন।
৮. সপ্তাহে ৩দিন রোববার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ৩ টা পর্যন্ত বিক্রয় কার্যক্রম চালানো হবে।
৯. স্থানীয় প্রশাসন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সিটি কর্পোরশন, পৌরসভা এর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বা প্রতিনিধির উপস্থিতি /তদারকীতে বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
১০. করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি পরিচালনপূর্বক বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
১১. ওএমএস নীতিমালায় বর্ণিত জেলা/বিভাগীয়/ঢাকা মহানগরীর কমিটি সার্বিক বিষয়টি মনিটরিং করবে।
১২. ডিলারগণ দৈনিক বিক্রয় প্রতিবেদন তদারকি কর্মকর্তার প্রতিস্বাক্ষর গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট ওএমএস কমিটির সভাপতির নিকট প্রেরণ করবেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা মহানগরে মোট ৭৩ বস্তি আছে। এই বস্তি গুলোতে ৩৯ হাজার ১৮০টি পরিবার আছে। এখানে মোট জনসংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ। ঢাকা জেলা প্রশাসন থেকে জানা যায় এরা কেউ সরকারে খাদ্য সহয়তা পায়নি। ঢাকা মহানগরে ওএমএস ডিলার কেন্দ্রের সংখ্যা ১২০ টি। এই ডিলারদের তালিকা হতে ২৪ জন ডিলার বাছাই করে সপ্তাহে ৩ দিন পর্যায়ক্রমে ৭৩ বস্তি বা ৩৯ হাজার ১৮০টি পরিবারকে বিশেষ ওএমএস ৫ কেজি চাল বিক্রয় করা হবে। এই সকল কেন্দ্রে কোন আটা বিক্রয় করা হবে না।
এমতাবস্থায়, পরীক্ষামূলকভাবে আগামীকাল রোববার (৫ এপ্রিল) এই বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম ঢাকা মহানগরের ২ টি কেন্দ্র দিয়ে শুরু হবে। এর মধ্যে একটি হলো ৭ নং ওয়ার্ড, শিয়ালবাড়ী, রুপনগর ঝিলপাড় বস্তি, মিরপুর অন্যটি
সাততলা বস্তি, মহাখালী, ঢাকা।
এ কার্যক্রম জেলা প্রশাসন, ঢাকা, স্থানীয় সিটি কাউন্সিলর, আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়/ খাদ্য অধিদপ্তরের তত্ত্ববধানে ঢাকা রেশনিং ওএমএস ডিলারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করবে। এ কার্যক্রম সকাল ১০ টা হতে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত চলবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয় বর্তমান দেশের করোনা ভাইরাস আক্রমণের পরিস্থিতির কারণে সরকারের স্বাস্হ্য বিধি মেনে এ কার্যক্রমে কোন উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান হবে না।
পাশাপাশি আজ শনিবার থেকে যথারীতি ওএমএস এ আটা ১৮ টাকা কেজি দরে প্রতি কেন্দ্র হতে ১ হাজার কেজি বিক্রয় করা হবে। কেন্দ্র সংখ্যা হবে ৯৬ টি এবং সপ্তাহে ৬ দিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত চলবে।