ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

থেমে গেল টাইগারদের স্বপ্নযাত্রা


প্রকাশ: ২ জুলাই, ২০১৯ ১৪:০০ অপরাহ্ন


থেমে গেল টাইগারদের স্বপ্নযাত্রা

   

আশা-নিরাশার দোলাচলে থাকতে থাকতে বেশ সময় পেরিয়েছে। ১০-১৫ দিনের অপেক্ষা বিশ্বকাপের মতো আসরে কম কী! অনেক সমীকরণের বোঝা মাথায় নিয়ে বাংলাদেশকে কয়েকবার নামতে হয়েছে যুদ্ধের মঞ্চে। যদিও সহজ হিসাব বলছিল, ভারতের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই। সবার আগে জয়, তারপর বাকি হিসাব। কিন্তু এবার আর বীর-বাহাদুর সেজে মাঠ ছাড়া হলো না।

সেমিফাইনাল স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার ম্যাচে বাংলাদেশের সঙ্গী হলো খুব কাছে গিয়েও হারানোর বেদনা। ভারতের বিপক্ষে ২৮ রানের এই হারে থেমে গেল মাশরাফিবাহিনীর বিশ্বকাপ স্বপ্নযাত্রা। স্বপ্নের মৃত্যু না দেখতে চাইলে জিততেই হতো বাংলাদেশকে। যদিও এই জয়েই সেমিফাইনালের টিকেট মিলতো না। তবে শেষ চারের স্বপ্ন সতেজ থাকতো।

পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতলে স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার সম্ভাবনা থাকতো মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের। কিন্তু এই হারে বাংলাদেশের স্বপ্নের মৃত্যু হলো। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি হয়ে উঠলো নিতান্তই নিয়ম রক্ষার। আর ১৩ পয়েন্ট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার পর দ্বিতীয় দল হিসেবে ভারত উঠে গেল সেমিফাইনালে।

এজবাস্টনে শুরুটাই বিপক্ষে চলে গিয়েছিল বাংলাদেশের। এখানকার ব্যবহৃত উইকেটে টস জিতে যেকোনো দলই আগে ব্যাটিং করবে, সেটা সবারই জানা ছিল। ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি সেটাই করেছেন। ছন্দে ফেরা মুস্তাফিজুর রহমানের ৫ উইকেট নেয়ার দিনেও প্রথমে ব্যাটিং করে দুই ওপেনার রোহিত শর্মার ১০৪ ও লোকেশ রাহুলের ৭৭ রানের সুবাদে ৯ উইকেটে ৩১৪ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে ভারত।

মন্থর উইকেটে ব্যাটসম্যানদের ভুল হিসাবে এই রান পাড়ি দেয়া হয়নি বাংলাদেশের। তাই সাকিব আল হাসানের ৬৬ এবং শেষদিকে সাব্বির রহমান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের দারুণ লড়াইয়ের পরও ২৮৬ রানে অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপে তিন জয়ের বেড়াজালেই আটকে রইলো বাংলাদেশ। এ যেন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে বাংলাদেশের জন্য। বিশ্বকাপ মানেই সর্বোচ্চ তিন জয়। ২০১১ বিশ্বকাপের পর ২০১৫ বিশ্বকাপেও তিনটি ম্যাচে জয় পায় বাংলাদেশ। ২০১৯ বিশ্বকাপও বাংলাদেশের ভাগ্য একই রেখায় থেকে গেলো। এবারও তিন জয় নিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করতে হলো মাশরাফি বিন মুর্তজার দলকে।

সামনে বিশাল লক্ষ্য ছিল। রান তোলার তাড়া থেকে এদিন তামিম ইকবালকে দেখা অন্য ভূমিকায়। অন্যান্য ম্যাচের মতো ধীর-স্থির শুরু করেননি তিনি। উল্টো সৌম্য খেলেছেন ঠান্ডা মাথায়। এতে অবশ্য ভালো শুরু মেলেনি। দলীয় ৩৯ রানে বিদায় নেন তামিম। বাঁহাতি এই ওপেনার ২২ রান করে ফেরার পর সৌম্যকে নিয়ে এগোচ্ছিলেন চলতি বিশ্বকাপের বিস্ময় সাকিব আল হাসান।

ঠান্ডা মেজাজে খেলেও সৌম্য অবশ্য বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। বাংলাদেশকে সবচেয়ে ভোগানো হার্দিক পান্ডিয়ার শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৩৩ রান করেন বাঁহাতি এই ওপেনার। সাকিবের সঙ্গে যোগ দিয়ে ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন মুশফিকুর রহিম। এ জুটিও ভরসা হয়ে উঠতে পারেনি। মুশফিক ফেরেন ২৪ রান করে।

এক প্রান্ত আগলে খেলে যেতে থাকেন বিশ্বকাপকে রাঙিয়ে তোলা সাকিব। নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন লিটন দাস। সাবলীল মনে হলেও লিটন হতাশ করেছেন। ২২ রান করেই ক্রিজ ছাড়েন তিনি। এ সময় বাংলাদেশের ইনিংস এলোমেলো করে দনে পান্ডিয়া। লিটনকে ফেরানো ডানহাতি এই পেসার সাকিবকেও নিজের শিকারে পরিণত করেন।

ফেরার আগে ৭৪ বলে ৬টি চারে ৬৬ রানের সময় উপযোগী একটি ইনিংস খেলেন সাকিব। চলতি বিশ্বকাপে এটা তাঁর চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি। এই ইনিংস দিয়ে বিশ্বকাপ ইতিহাসের একমাত্র অলরাউন্ডার হিসেবে ৫০০’র বেশি রান ও ১০ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন তিনি। সাকিবের আগেই অবশ্য মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত সাজঘরে ফেরেন। তবে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের বিদায়ে ঘোর অন্ধকারে পড়ে যায় বাংলাদেশ।

এখান থেকে বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন হার্ড হিটার সাব্বির রহমান ও অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ১৭৯ থেকে দলের হাল ধরা এই দুই ব্যাটসম্যান দাপুটে স্টাইলে খেলে যেতে থাকেন। ভারতের কোনো বোলারকেই পাত্তা দেননি তাঁরা। কিন্তু সাব্বির শেষ করতে পারেননি। সাইফউদ্দিনের সঙ্গে ৬৬ রানের জুটি গড়ে থামেন তিনি। এরআগে ৩৬ বলে ৩৬ রান করেন তিনি।

দলের দুঃসময়ে কিছুই করতে পারেননি অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাকি সময় একাই লড়ে গেছেন সাইফউদ্দিন। কিন্তু তাঁর লড়াই ব্যবধান কমিয়েছে, একইসঙ্গে বাড়িয়েছে আফসোস । ইশ, মাত্র আর মাত্র কটি রান! ৩৮ বলে ৯টি চারে ৫১ রানের লড়াকু ইনিংস খেলা সাইফউদ্দিনকেও আর সবার মতো এমন আফসোস নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে। ভারতের হয়ে বুমরাহ সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নেন। এ ছাড়া পান্ডিয়া নেন ৩টি উইকেট।

টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামা ভারত শুরু থেকেই উড়তে থাকে। দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুলের ব্যাটে দাপুটে শুরু পায় তারা। যদিও শুরুতেই প্রতিপক্ষকে চেপে ধরার সুযোগ তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তামিম ইকবালের ভুলে সুযোগটা কাজে লাগেনি বাংলাদেশের। ব্যক্তিগত ৯ রানে মুস্তাফিজের বলে তোলা রোহিতের ক্যাচ নিতে পারেননি তামিম।

নিজেদের স্বপ্নকেই যেন মাটিতে ফেলে দেন বাংলাদেশ ওপেনার। জীবন ফিরে পাওয়ার সুযোগ পুরোপুরিভাবে কাজে লাগিয়েছেন ভারত ওপেনার। যা বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে লম্বা সময়। চলতি বিশ্বকাপে চার ম্যাচে জীবন ফিরে পাওয়া রোহিত তিন ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষেও ভুল হয়নি তাঁর।

ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান তুলে নিয়েছেন চলতি বিশ্বকাপে নিজের চতর্থ সেঞ্চুরি। ৯২ বলে সাতটি চার পাঁচটি ছক্কায় খেলেছেন ১০৪ রানের ঝলমলে এক ইনিংস। অন্য পাশে লোকেশ রাহুলও সমানে ব্যাট চালিয়েছেন। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৭৭ রান। উদ্বোধনী জুটি থেকে রেকর্ড ১৮০ রান পেয়ে যায় ভারত।

এ সময় বাংলাদেশের বোলাররা কেবল চেষ্টাই করে গেছেন। এই জুটি ভাঙতে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা তাঁর সব বোলারকে দিয়ে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু লম্বা সময় ধরে অবলীলায় ব্যাটিং করে গেছেন রোহিত-রাহুল। সবাই যখন ব্যর্থ, সৌম্য সরকার তখন বাংলাদেশকে কিছুটা স্বস্তি এনে দেন। অনিয়মিত এই বোলারই রোহিতকে সাজঘরের পথ দেখিয়ে দেন।

রোহিতকে ফেরানোর বাংলাদেশের অন্যান্য বোলাররাও ছন্দ ফিরে পান। কিছুক্ষণ পরই রাহুলকে বিদায় করেন ডানহাতি পেসার রুবেল হোসেন। তবে সবচেয়ে কার্যকর হয়ে ওঠেন মুস্তাফিজ। পুরনো ছন্দে ভারত শিবিরে আঘাত হানতে থাকেন বাঁহাতি এই পেসার। ৫৯ রান খরচায় তুলে নেন ৫ উইকেট। তাঁর বোলিংয়ের সামনেই মূলত ধুঁকতে হয়েছে ভারতের পরবর্তী ব্যাটসম্যানদের।

ভারতের দুই উইকেট পড়ার পর মাঝে সাকিব কেবল একটি উইকেট নিয়েছেন। শেষের ৫ উইকেটে উঠেছে মুস্তাফিজের ঝুলিতে। এর মাঝেও ঋষভ পান্ত ৪১ বলে ৪৮ রানের দারুণ একটি ইনিংস খেলেন। শেষের দিকে ৩৫ রান করে ভারতকে ৩১৪ রানে পৌঁছে দেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।


   আরও সংবাদ