ঢাকা, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩২, ১৯ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

বিজিবি'র ২২৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে


প্রকাশ: ৩০ জুন, ২০১৯ ০০:০০ পূর্বাহ্ন


বিজিবি'র ২২৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার : দেশের ঐতিহ্যবাহী সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক এক বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের ২২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা হয়েছে।

রোববার (৩০ জুন) সকালে রাজশাহী বিজিবি'র সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

প্রধান অতিথির শুভেচ্ছা বক্তব্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর প্রাচীনতম এ ব্যাটালিয়নের সকল কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দকে অভিনন্দন জানান। এবং বাহিনীর প্রথম ব্যাটালিয়নের ২২৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর ভবনের সম্মুখে নির্মিত "সুরক্ষিত পতাকা" স্মৃতি স্তম্ভে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর বিজিবি মহাপরিচালক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত প্রীতিভোজে আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটেন।

এসময় তিনি বলেন, "১ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের ঐতিহ্য, গৌরব ও সাফল্যগাথা মূলত এ বাহিনীর সুদীর্ঘ ইতিহাসের একটি গৌরবময় অধ্যায়। তাই এ ব্যাটালিয়নে যারা কর্মরত রয়েছেন এবং অতীতে যারা দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তারা এ বাহিনীর বিশেষ গর্বের অংশীদার"।

তিনি আরো বলেন, "১৭৯৫ সালের ২৯ শে জুন রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন নামে এ বাহিনীর যে ঐতিহাসিক পথচলা শুরু হয়েছিল-সেটা প্রকৃতপক্ষে ১ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন তথা এ বাহিনীর প্রতিষ্ঠাকালীন নাম। এ কারণে ১ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন আমাদের ঐতিহ্যবাহী সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর এক বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ ব্যাটালিয়ন। তাই এই ব্যাটালিয়নের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পুরো বাহিনীর সদস্যদের কাছেই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ"।                                               

অনুষ্ঠানে এক বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আগত অতিথিবৃন্দকে স্বাগত জানান এবং উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
 
এসময় বিজিবি'র কর্মকর্তাগণ ও সদস্যবৃন্দ ছাড়াও রাজশাহী বিভাগের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ২২৪ বছর পূর্বে অর্থাৎ ১৭৯৫ সালের ২৯ জুন এ বাহিনীর প্রতিষ্ঠাকালীন একমাত্র ব্যাটালিয়ন হিসেবে এই ব্যাটালিয়নের অবস্থান ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড়ে। পরবর্তীকালে এ বাহিনীর ১ম ব্যাটালিয়ন অর্থাৎ এক নম্বর ব্যাটালিয়ন হিসেবে বিভিন্ন সীমান্তে দায়িত্ব পালনের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে এক বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন নামে বিজিবি'র রংপুর রিজিয়নের রাজশাহী সেক্টরের অধীনে এই সীমান্তে নিয়োজিত রয়েছে। কালের পরিক্রমায় এ ব্যাটালিয়নের অনেক অর্জন বিজিবি'র ইতিহাসকে করেছে সমৃদ্ধ।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই ব্যাটালিয়নের সদস্যবৃন্দ তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করে আসছেন। ব্রিটিশ সরকারের অধীনে ১৮৭১ সালে লুসাই অভিযানে এই ব্যাটালিয়নের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং গৌরবময় ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৯) পর ১৯২০ সালে এ বাহিনীকে “ইষ্টার্ণ ফ্রন্টিয়ার রাইফেলস’’ নামে পুনর্গঠিত করা হয়। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) নেফা ও মেসোপটেমিয়াতে অভিযানকারী দলে এ বাহিনী অংশগ্রহণ করে। মেসোপটেমিয়া অভিযানে এ ব্যাটালিয়নের একজন ল্যান্স নায়েক ব্যক্তিগত কৃতিত্বের জন্য “ইন্ডিয়ান অর্ডার অব মেরিট’’ পুরস্কারে ভূষিত হন।

১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর এ বাহিনীর নতুন নাম ’ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস’ এর সাথে মিলিয়ে এ ব্যাটালিয়নের নামকরণ করা হয়। পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অধীনে ১৯৫৮ সালে লক্ষীপুর অভিযান এবং ১৯৬২ সালে আসালং সংঘর্ষে এ ব্যাটালিয়নের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও গৌরবময় ছিল। লক্ষীপুর অভিযানে অংশগ্রহণকারী তৎকালীন ইপিআর এর এক নং উইং অধিনায়ক মেজর তোফায়েল মাহমুদ এবং জমাদার আজম ৭ আগস্ট ১৯৫৮ সালে প্রতিবেশী দেশ কর্তৃক দখলকৃত স্থান পুনরুদ্ধারের জন্য এই ব্যাটালিয়নের সৈনিকদের নিয়ে বীর বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েন। হতাহতের পর শত্রু সেনাদের তাড়িয়ে দেন এবং শত্রু অধিনায়ককে বন্দী করেন। উক্ত অভিযানে জাতীয় বীরের স্বীকৃতি স্বরূপ মেজর তোফায়েল মাহমুদকে “নিশান-ই-হায়দার’’ (মরণোত্তর) এবং জমাদার আজমকে “সিতারা-ই-জুরাত’’ (মরণোত্তর) এবং আরও কয়েকজন সৈনিককে বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৪ বছর এ ব্যাটালিয়ন কুমিল্লার কোটবাড়ীতে অবস্থান করে। এই সময়ে ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে তৎকালীন ইপিআরের অন্যান্য ব্যাটালিয়নের মতো এ ব্যাটালিয়নে কমর্রত বাঙালি সৈনিকেরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধে এ ব্যাটালিয়নের ২০ জন অকুতভয় বীর সৈনিক দেশ-মাতৃকার জন্য অকুণ্ঠ চিত্তে শাহাদাত বরণ করেন। তন্মধ্যে হাবিলদার জুম্মা মিয়া ও সিপাহী আবুল বাসার বীর বিক্রম (মরণোত্তর) এবং সিপাহী শরীফ বীর প্রতীক (মরণোত্তর) খেতাবে ভূষিত হন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে চুড়ান্ত বিজয় অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ৩ মার্চ এ বাহিনীর পূর্বতন নাম ইপিআর এর পরিবর্তে “বাংলাদেশ রাইফেলস”নামকরণ করেন, তখন থেকে এ ব্যাটালিয়ন এক রাইফেলস ব্যাটালিয়ন নামে দায়িত্বপালন শুরু করে। পরবর্তীতে ২০ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে এ বাহিনীর নতুন আইন "বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন, ২০১০" কার্যকর হওয়ার পর এ ব্যাটালিয়নের নামকরণ করা হয়েছে এক বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন-যার সদর দপ্তর বর্তমানে রাজশাহীতে অবস্থিত। ঐতিহ্য ও সাফল্যের ধারাবাহিকতায় রাজশাহী সীমান্তেও এক বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।


   আরও সংবাদ