ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

 নবান্ন উৎসব মেঠোপথের কোয়াশা পেরিয়ে শহরে


প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর, ২০১৯ ১৩:০০ অপরাহ্ন


 নবান্ন উৎসব মেঠোপথের কোয়াশা পেরিয়ে শহরে

   

স্টাফ রিপোর্টার: হেমন্তের নতুন ধান কৃষকের  উঠানে । সারা বাড়ীময় কৃষাণীর ব্যস্ততা  সোনালি ধানের সিনজা গরু দিয়ে ধান মারানো সে এক চিরচেনা চিত্র গ্রাম বাংলার। নতুন ধানে  গ্রাম বাংলার  নবান্ন উৎসব এবার মেঠোপথ ধরে সড়ক মহা-সড়ক হয়ে স্পর্শ করেছে ইট-পাথরের রাজধানীকে।

গতকাল শনিবার (১৬ নভেম্বর) ইট পাথরের নগর প্রকৃতির ভিড়ে গ্রাম-বাংলার ফসল কাটার মধ্যদিয়ে ‘নবান্ন উৎসব’ উদযাপন করেছে  লোকজ সংস্কৃতিপ্রেমী রাজধানীবাসী।

শহুর জীবনের ব্যস্ততায় শিকড়কে ভুলতে বসা তরুণ-তরুণীদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় দেশজ সংস্কৃতি ও গ্রাম বাংলার কৃষি ও কৃষকের উৎপাদিত উপাদানের সাথে নাগরিক জীবনে আরও  বেশি আপন করে  নেওয়ার  প্রত্যয় এসেছে এবারের জাতীয় নবান্নোৎসবে। ঘরে ঘরে নবান্নের উৎসব  গরম ভাপে ভাপা পিঠা, দুধে ভিজে চিতই হয় দুধ চিতই, লবঙ্গের ঘ্রানে সাজে লবঙ্গ লতিকা, মুঠ পাকিয়ে  সেদ্ধ দিলেই মুঠোপিঠা। এই গ্রাামীণ জীবন সর্ম্পকেতাই তরুণদের  শিকড়ে  ফেরাতে হলে বেশি করে তুলে ধরতে হবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায়  সকালে  জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদ আয়োজন করে এই উৎসবের। সার্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িকতাভেদ করে ভোরের আবির ছড়িয়ে  বাশেঁর বাঁশি, বাংলার ঢোল,তবলা  খোল আর কিবোর্ড, গিটারসহ অন্যান্য যন্ত্রসঙ্গীতের সুরের মর্চনায়  লোকজ আবহ শুরু এবারের উৎসব। উৎসবটি লায়লা হাসানের পরিচালনায় ‘সবুজ গ্রাম বাংলার  ঢেউ  খেলে যা,  ঢেউ  খেলে যা আমন ধানের খেতে’  এই গানের মধ্যদিয়ে দলীয়  নৃত্য পরিবেশন করেন নটরাজের শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি  নাট্যজন ফেরদৌসী মজুমদার নবান্ন কথন পর্বের শুভ উদ্বোধন করেন। বক্তব্য রাখেন নবান্নোৎসব পর্ষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাঈম হাসান সুজা। সভাপতিত্ব করেন নবান্নোৎসব পর্ষদেও চেয়ারপারসন লায়লা হাসান।

নবান্ন কথন’ আলোচনায় বক্তারা বলেন, গ্রাম বাংলার অগ্রহায়ণের বিভিন্ন উৎসব যেন নগরায়নের প্রভাবে আমাদের জীবন সংসার থেকে  হারিয়ে না যায়,  সেই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান সংস্কৃতিকর্মীরা। এ উৎসব রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদযাপন করা হলেও  কৃষি-কৃষকের পাশাপাশি বাংলার অর্থনীতিকে মজবুত করার লক্ষ্যে  কাজ করতে হবে। হাজার বছরের চিরায়ত এই উৎসবটি নগরায়নের প্রভাবে হারিয়ে  যেতে বসেছে।

নতুণ প্রজন্মের তরুণেরা আমাদের সার্বজনীন উৎসবের সঙ্গে পরিচিত নয়। আমাদের সন্তানেরা  পিঠে পুলি সর্ম্পকে কিছুই জানে না। গ্রাামীণ জীবন সর্ম্পকেতাই তরুণদের  শিকড়ে  ফেরাতে হলে বেশি করে। লোকজ সংস্কৃতি  নতুন প্রজন্মের সামনে তুলেধরছি সময়ের সাথে সব ভেদাভেদ ভুলে বাঙালির কৃষ্টিকালচার ঐতিহ্যের বন্ধনে বাঁধতে চাই। এটি গণমানুষের উৎসব,খেটে খাওয়া কৃষকের ফসল ধানের  উৎসব।

লোকগানের নৃত্যের সঙ্গে   পটগান, ধামাইয়া গানসহ বিভিন্ন ধরনের লোকগানের সঙ্গে শিল্পীরা  দেশের গান, লালনগীতি, নজরুল সঙ্গীত ও রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করেন। শুরুতে  ছিল দলীয় নৃত্য ‘আমার বাংলা মায়ের মাটির সুরে জুড়ায় মনপ্রাণ’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যজন। ‘আহা  রে খুশি খুশি মন, নবান্নে রইলো বন্ধু  তোমার নিমন্ত্রণ’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে বকুল নৃত্যালয়।

সম্মিলত গান পর্বে ‘নবান্নতে রইলো বন্ধু তোমার নিমন্ত্রণ’ গান পরিবেশন করে বহ্নিশিখা, পরিবেশন করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী পরিবেশনায় ‘আবার জমবে মেলা বটতলা হাটতলা’ গানটি। উৎসবে গুড়-মুড়ি ও খই দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় অতিথিসহ উৎসবে আগত বাংলার সংস্কৃতি ভালোবাসা মানুষদের মাঝে।


   আরও সংবাদ