প্রকাশ: ১১ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ পূর্বাহ্ন
নিউজ ডেস্ক: সুন্দরবন বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষা করছে দাবি করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, সুন্দরবনকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। সুন্দরবনের প্রতি কেউ যেন অযত্ন-অবহেলা করতে না পারে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট মহলকে উদ্যোগ নিতে বলবো। আমি আপনাদের (সাংবাদিকদের) রেফারেন্স দিয়েই বলবো, সুন্দরবনের যেন আরও যত্ন নেওয়া হয়, নতুন নতুন গাছ লাগিয়ে বনকে শক্তিশালী করা হয়।
রবিবার (১০ নভেম্বর) সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বুলবুলের সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল গড়ে ৪০-৯০ কিলোমিটার। আজ বিকাল নাগাদ আবহাওয়ার উন্নতি হতে শুরু করবে। কাল রৌদ্রোজ্জ্বল দিন পাবো বলে আশা করছি। তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ভীতি ছিল, তা সাংবাদিকরা দূর করতে পেরেছেন, মানুষকে সচেতন করতে পেরেছেন; তাই আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। তাদের তৎপরতার কারণে এবার সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
এনামুর রহমান বলেন, এ বছর ২১ লাখ ৬ হাজার ৯১৮ জন মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনা হয়। বুলবুল মোকাবিলায় দেশের ১৪টি জেলায় আগেই পাঁচ লাখ করে টাকা ও পর্যাপ্ত শুকনো খাবার পাঠনো হয়। নেভি ও কোস্টগার্ড ভালো কাজ করেছে। পটুয়াখালীতে হারিয়ে যাওয়া ১০০ জেলেকে উদ্ধার করেছে তারা। আগে থেকেই রাসমেলা বাতিল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন, ডিসিদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এ কারণে আমরা উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সহস পেয়েছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এ পর্যন্ত দু’জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। ৩০ জন আহত হয়েছেন। পাঁচ থেকে ছয় হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। যে দু’জন মারা গেছেন, তাদের একজনের নাম প্রমিলা মণ্ডল (৬৩), বাড়ি খুলনার দাকোপ উপজেলায়। তিনি অনুমতি না নিয়ে সাইক্লোন শেল্টার ছেড়ে বাড়ির দিকে রওনা দিয়ে পথে গাছচাপায় মারা যান। আরেকজনের নাম হামিদ কাজি (৬৫), বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের মাধবখালী ইউনিয়নে। ঘর চাপা পড়ে তিনি মারা গেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে এক শিশুর জন্ম হয়েছে। বাগেরহাটের মিঠাখালীর একটি আশ্রয়কেন্দ্রে বাচ্চাটির জন্ম হয়। তার নাম রাখা হয়েছে বুলবুলি।
দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসন সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরুর আগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আগে পরিদর্শন করতে হয়। কাল থেকে আমরা পরিদর্শনে যাবো। জেলা প্রশাসক ও থানা নির্বাহী অফিসাররাও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করছেন। এ কাজের জন্য সাত দিন সময় লাগবে।
ঝড়ে ফসলের ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এবার ঝড়ে আমনের ক্ষতি হয়নি। কারণ, পটুয়াখালী ছাড়া আক্রান্ত জেলাগুলোতে আমন চাষ হয় না। পটুয়াখালীতে অল্পকিছু জমিতে আমনের চাষ হয়, সেখানে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে শীতকালীন সবজির কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় এ ক্ষতি পুষিয়ে দিতে কাজ করবে।
‘প্রাথমিকভবে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে— সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। খুলনায় গাছপালা ভেঙেছে বেশি। ভোলায় ৫-৬টি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝালকাঠিতে ধানের জমির ক্ষতি হয়েছে। বরিশালে তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বরগুনায় একটি স্কুলের চাল ভেঙে পড়েছে। পটুয়াখালীতে ৮৫টি কাঁচাঘর ভেঙে পড়েছে। পিরোজপুর ও কক্সবাজারে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘আশ্রয়কেন্দ্রে কেউ আসতে না চাইলে, জোর করে আনার বিধান রয়েছে। আমরা এবার বলপ্রয়োগ করে কিছু মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে এনেছি। আগে নিরাপত্তার অভাব ও অব্যবস্থাপনার কারণে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চাইতো না। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, ব্যবস্থাপনা উন্নত করা হয়েছে। নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা, প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ও গর্ববতী নারীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেখানে আলো নেই সেখানে সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে মানুষজন ইচ্ছা করেই আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে।
সিগন্যাল বেশি দেওয়া হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সিগন্যাল সঠিক ছিল। দেখুন, ঝড়টি প্রথমে পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানে। এরপর সুন্দরবন হয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে, তাই ক্ষয়ক্ষতি তেমন একটা হয়নি। কিন্তু ঝড়টি যদি সরাসরি আমাদের উপকূলে আঘাত হানতো তাহলে বোঝা যেত এর ভয়াবহতা কত তীব্র।
এ সময় আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আন্দামান সাগর থেকে বুলবুলের উৎপত্তি। এটি খুলনা হয়ে দেশে প্রবেশ করে। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছিল। রবিবার (১০ নভেম্বর) ভোর ৫টার দিকে ঝড়টি খুলনা, বরগুনা ও বাগেরহাটে আঘাত হানে। এরপর ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। সকাল সাড়ে ৯টায় ১০ নম্বর সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত রাখতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক আরও বলেন, ‘সমুদ্রে জেলেদের মাছ ধরার ব্যাপারে এখনও নিষেধাজ্ঞা আছে। তাদের নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। আগামী দু’দিনের মধ্যে আবহাওয়া স্বাভাবিক হবে।’ ঝড়ের সময় মোংলায় সর্বোচ্চ ১৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ত্রাণসচিব শাহ কামাল বলেন, ‘এবার সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে পেরেছি। আগাম সিগন্যাল ও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে।
তিনি বলেন ‘এ বছর ভাসানচরে বুলবুলের তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেতে ১৫০ জন জেলে ও ৫০ জন শ্রমিক ও ১৯০ জন নৌবাহিনীর সদস্য আশ্রয় নেন। তারা নিরাপদে ছিলেন। আগামীতে এ ধরনের দুর্যোগে ভাসানচরকে আমরা কাজে লাগাবো।
এ সময় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম এবং আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।