ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ ভাদ্র ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

চুয়াডাঙ্গায় আমন ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমণ


প্রকাশ: ৭ নভেম্বর, ২০১৯ ১৩:০০ অপরাহ্ন


চুয়াডাঙ্গায় আমন ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমণ

   

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : চুয়াডাঙ্গার মাঠে মাঠে আমন ধানের ক্ষেতে বাদামি ঘাশ ফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিনের মধ্যে জেলার সব উপজেলার মাঠের পর মাঠ ধানক্ষেতে ছড়িয়ে পড়েছে। আবার অনেক ক্ষেতে পোকার আক্রমণে ধান শুকিয়ে যাচ্ছে। এনিয়ে দিশেহারা জেলার কৃষকরা।

কৃষকরা জানান, মৌসুমে ভালো পরিচর্জার ফলে গতবারের তুলনায় এবার ভালো আবাদ হয়েছে। মৌসুমের শেষের দিকে পোকর আক্রমনে ক্ষেতের ধান শুকিয়ে বাইলের সবধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। আশা ছিলো পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে ও যে ধান থাকবে তা বিক্রি করে ইজারার টাকা পরিশোধ করা সম্ভব ছিলো। কিন্তু পোকার আক্রমনে তা আর সম্ভব হবেনা বলে চিন্তিত তারা।

হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামের গরীব কৃষক আমিনুল বলেন, ১০ কাঠা জমিতে শুধুমাত্র পরিবারের চাহিদা মেটাতে আমন ধানের চাষ করেছি। ক্ষেতের ধান গাছের শিষও বের হয়েছিল। কিন্ত হঠাৎ করেই ক্ষেতের মাঝে মাঝে ধানগাছগুলো মরে শুকিয়ে গাছের সব ধান চিটা হয়ে গেছে। কানাইডাঙ্গা গ্রামের জয়নাল আবেদীন, ১৫ কাঠা জমির ধানক্ষেত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন খরচের টাকাও আসবে না। বুইচিতলা গ্রামের কলিম উদ্দীন বুইচিতলার কলিম উদ্দীনের ক্ষেতের অবস্থা একই।

কৃষি র্মকর্তারা বলছেন আবহাওয়াজনিত কারনে (বি,পি,এইচ) বা কারেন্ট পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছে। কিন্ত কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়ার কারনে এখনও ব্যাপকতা লাভ করতে পারেনি।

জেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানাগেছে, চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গা জেলায় আমন ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৭ হাজার ৩৯৫ হেক্টোর। কিন্ত চাষ হয়েছে ৪০ হাজার ৫’শত ৫০ হেক্টোর জমিতে।কথা হয় ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করা সদাবরী গ্রামের কৃষক আলম হোসেনের সাথে।

তিনি জানান, আমাদের মাঠের অনেকের ক্ষেতে কারেন্ট পোকা লেগেছে। আমার ক্ষেতেও কিছু কিছু জায়গায় দেখা যাচ্ছে। সে কারনে ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রেকরছি।

তিনি বলেন, সারাবছর পয়সা খরচ করে চাষ করে এখন ভরা ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। এর চেয়ে বড় ক্ষতি হতে পারেনা।

দামুড়হুদা কৃষি অফিসের এ কৃষিকর্মকর্তা জানান, গত সপ্তাহের কয়েকদিনের গরমের পর বর্ষা হয়েছে। এরপর দিনের বেলায় ভ্যাপসা গরমের শেষে রাতে ঠান্ডা পড়ার কারনে ধানক্ষেতে (বিপিএইচ) বা বাদামী গাছ ফড়িং রোগ দেখা দিয়েছিল। কৃষকদের ভাষায়, এটাই কারেন্ট পোকা রোগ।

তিনি বলেন, ক্ষেত প্রথম দিকে আক্রান্ত হলেও বর্তমানে নিয়ন্ত্রনে। তিনি আরও বলেন, ঠান্ডা গরম মিশ্রিত আবহাওয়ায় স্যাঁতসেতে জমিগুলোতে আক্রমনটা বেশি দেখা যায়।

তিনি বলেন, প্রথম দিকে এ পোকা ধানগাছের গোড়ায় বাসাবেধে বংশবিস্তারের পাশাপাশি শুড় দিয়ে গাছের গোড়ার নরম কান্ডে ছিদ্র করে দেয়। এতে ধান গাছের হরমোন ক্ষয় হতে থাকে। ২য় পর্যায়ে গাছের কান্ডের ছিদ্র দিয়ে জাইলেম ফ্লোয়েম সিল হয়ে গিয়ে মাটি থেকেও খাদ্যরস নিতে পারে না গাছ। সর্বশেষ ৩য় পর্যায়ে এসে হঠাৎ করেই ধানগাছগুলো শুকিয়ে বাইলের সকল ধান চিটা হয়ে যায়। তিনি বলেন, এ পর্যায়ে আর কিছু করার থাকে না।

দামুড়হুদা উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, বিভিন্ন কৃষকের ক্ষেতের বিপিএইচ রোগের কথা জানা গেছে। দিনের বেলায় গরম আর রাতে ঠান্ডা এমন আবহাওয়ায় এ রোগ দেখা দিয়েছিল। কিন্ত কৃষকদেরকে সচেতন করার কারনে ব্যাপক আকার ধারন করতে পারেনি। তিনি বলেন, আক্রান্ত ক্ষেতে প্লেনাম, হুপারসট, সপসিন , নিপসিন ক্ষেতে স্প্রে করতে কৃষকদেরকে পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ঠান্ডা পড়া শুরু হলে ক্ষিপ্ত এ আক্রমন থাকবে না।


   আরও সংবাদ