প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর, ২০২৫ ০৬:১৪ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা সর্বাগ্রে ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এদেশের আপামর জনগণ, রাজনৈতিক দলসহ সর্বমহলের প্রত্যাশা পূরণের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পুলিশের কাঁধে।
তিনি বলেন, সবার প্রত্যাশা বাংলাদেশ পুলিশ সামনের জাতীয় নির্বাচনে এমন এক মানদণ্ড স্থাপন করবে, যা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশ সহ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
আজ সোমবার সকালে রাজধানী ঢাকায় পুলিশ সদরদপ্তরে 'হল অভ প্রাইড' সম্মেলন কক্ষে পুলিশ আয়োজিত বিশেষ অপরাধ পর্যালোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় সিআইএসসিও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পুলিশের বিভিন্ন রেঞ্জের ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলার পুলিশ সুপার অংশগ্রহণ করেন। এ সময় পুলিশ সদরদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা বলেন, আইনের প্রয়োগ শুধু শক্তি দিয়ে নয়, ন্যায়, নিষ্ঠা ও মানবিকতা দিয়েও প্রতিষ্ঠিত হয়। পুলিশকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নির্বাচনী মাঠে আপনারা কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী নন; আপনারা জনগণের নিরাপত্তা, আস্থা ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার প্রতীক।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সামনে নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও সংলাপ শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যদের কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষাবলম্বন, বিশেষ সুবিধা প্রদান ও গ্রহণ এবং নিজেকে রাজনৈতিক কর্মী ভাবা যাবেনা।
উপদেষ্টা বলেন, ফ্যাসিস্টদের তালিকা পুলিশের কাছে রয়েছে। তারা সমাজ ও রাষ্ট্রে অস্থিরতা সৃষ্টিতে সরাসরি জড়িত। তাছাড়া অনেক অপরাধী জামিনে ছাড়া পেয়ে অপরাধ করছে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টদের অপকর্ম, অপপ্রচার, অপরাজনীতি, অপরাধ ও ঝটিকা মিছিল ঠেকাতে গ্রেফতার বাড়াতে হবে। তবে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা যাবে না।
ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অধীনস্থ পুলিশ অফিসার ও ট্রুপসদের পেশাদারিত্ব, টিম স্পিরিট, শৃঙ্খলা ও মনোবল বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অধীনস্থদের মধ্যে যাদের পেশাদারিত্ব নাই, শৃঙ্খলা নাই, কমান্ড মানতে চায়না, যারা সরকার ও রাষ্ট্রের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, জেলা পর্যায়ে ঘনঘন কোর কমিটির সভা আহ্বান করতে হবে। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার, মিথ্যা মামলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।
তিনি বলেন, পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চকে আরও সক্রিয় করতে হবে। জেলার সকল বিষয় নখদর্পণে রাখতে হবে। থানা থেকে লুট হওয়া বা হারানো বা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান ত্বরান্বিত করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, জেলার কেপিআইগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। অগ্নিকাণ্ডের মত দুর্ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। এবিষয়ে পুলিশসহ সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, পুলিশের উপর আক্রমণ কোন অবস্থাতেই সহ্য করা হবে না। এ ব্যাপারে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
উপদেষ্টা বলেন, সাম্প্রতিককালে সাইবার অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে তরুণ পুলিশ অফিসারদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
অপরাধ পর্যালোচনা সভায় উপদেষ্টা বিভিন্ন রেঞ্জের ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলার পুলিশ সুপারদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করেন।