ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তাদের টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ


প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১০:২১ পূর্বাহ্ন


অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তাদের টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি ও ব্যাংক থেকে অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের টার্গেট করে প্রথমে উচ্চ বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাসায় ডেকে নেয় প্রতারক চক্রটি। পরে ভুক্তভোগীদের আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার ফাঁদে ফেলে বিদেশি বায়ার সেজে প্রতারণা করেন চক্রটি। ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অর্থে হাতিয়ে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় তারা।

এ ঘটনায় পল্লবী থানায় একটি প্রতারণার মামলা হয়। ওই মামালার তদন্তে নেমে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গতকাল রোববার ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মাহবুবুর রহমান ওরফে আশরাফুল ইসলাম বাবু, আল-আমিন ওরফে আ ন ম রফিকুল ইসলাম, রাশেদুল ইসলাম ওরফে আব্দুর রহমান ওরফে রফিকুল ইসলাম রাকিব, মাসুদ খান ওরফে বস মাসুদ ও বিলকিস। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ৭০ লাখ টাকা, মাইক্রোবাস, রাডো, রোলেক্স ও ওমেগা ব্র্যান্ডের ঘড়ি, চেকবই, সিল, চুক্তিপত্র ও ১২টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে।

আজ সোমবার আগারগাঁওয়ের পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত ডিআইজি এনায়েত হোসেন মান্নান।

তিনি বলেন, জাতীয় পত্রিকায় ‘ব্রাদার্স গ্রুপে’ কোম্পানির চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে যোগাযোগ করেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। পরে তাকে রাজধানীর কলাবাগানের একটি ঠিকানায় ডেকে নেন। সেখানে তাকে ‘ভাই ভাই’ পার্টনারশিপের নাটক করে শপথ করানো হয়। এরপর ব্যবসায়িক প্রলোভনে ফেলে ২২লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। পরে ব্যাংক কর্মকর্তা মিজানুর বিষয়টি বুঝতে পারলে প্রতারকরা ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায়। একপর্যায়ে যোগাযোগ করলে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় তারা।

তিনি বলেন, ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী একটি মামলা করেন। পরে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) স্ব-উদ্যোগে মামলার তদন্ত নিয়ে অভিযান শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ৩০জুন চক্রের অন্যতম সদস্য আব্দুল আজিজসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানের সময় অন্য আরেক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা ইলিয়াস খানের সঙ্গেও একই কায়দায় প্রতারণা করে।

অতিরিক্ত ডিআইজি এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে আসে, চক্রটি দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘন ঘন ঠিকানা পরিবর্তন করে নতুন নতুন অফিস কাম বাসা ভাড়া নেয়। তারা নিজেদের বড় ব্যবসায়ী ও বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়ে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিশেষভাবে সরকারি ও ব্যাংক থেকে অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের টার্গেট করেন তারা। ভুক্তভোগীদের হাইফাই পরিবেশে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ঘড়ির আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার গল্পের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা এরপর ফোন ও সিম পরিবর্তন করে নতুন জায়গায় একইভাবে প্রতারণার ফাঁদ পাতে।

তিনি জানান, এ চক্রটি গত তিন মাসে ৫০টিরও বেশি মোবাইল ও শতাধিক সিম পরিবর্তন করেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এ ধরনের সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পিবিআই তৎপর। জনগণকে এ ধরনের প্রলোভনে পড়ে বিনিয়োগ বা অর্থ প্রদান না করার জন্য সতর্কও করেছে পিবিআইর অতিরিক্ত ডিআইজি এনায়েত হোসেন মান্নান।

তিনি বলেন, আসামিদের গতকাল আদালতে তুলে রিমান্ড আবেদন করা হয়। পরে শুনানি শেষে আাদালত তাদের তিনদিন করে রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছে।


   আরও সংবাদ