প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১১:৪২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাহিনীর চলমান সংস্কার কার্যক্রমের আওতায় প্রায় দুই লাখ তরুণকে গণপ্রতিরক্ষার নতুন ধারায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নব সংযোজিত বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এভিএমআইএস) সফটওয়্যারের মাধ্যমে সব সদস্যের নিবন্ধন ও হালনাগাদ তথ্য যাচাই করে পূজার নিরাপত্তা দায়িত্ব নির্ধারণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ।
আজ রোববার রাজধানীর খিলগাঁও আনসার সদরদপ্তরে দুর্গাপূজা উপলক্ষে পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, দুর্গাপূজাযর নিরাপত্তায় সারা দেশে দুই লাখ আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পূজামণ্ডপের নিরাপত্তার পাশাপাশি এখন থেকে আনসার-ভিডিপির ৬০ লাখ সদস্যের কার্যক্রম ডিজিটাল সিস্টেমে মনিটরিং করা হবে, যাতে কোনো অনিয়মের সুযোগ না থাকে। এ ছাড়া যানবাহনও জিপিআরএস প্রযুক্তির আওতায় আনা হচ্ছে।
বাহিনীর মহাপরিচালক বলেন, পূজামণ্ডপে গুজব প্রতিরোধ ও তাৎক্ষণিক যেকোনো ঘটনা মোকাবেলায় ‘ইনসিডেন্ট রিপোর্ট’ ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে, যা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও দৃঢ় করেছে। এ ছাড়া জেলা কমান্ড্যান্ট ও উপজেলা আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তারা মাঠে থেকে সরাসরি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করছেন এবং পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।
তিনি বলেন, ৬০ লাখ সদস্যকে ডিজিটাল সিস্টেমে আনা হয়েছে। এই সিস্টেমে সারাদেশের আনসারের কার্যক্রম মনিটরিং হবে। এতে আনসার সদস্যদের অনিয়ম করার কোনো সুযোগ থাকবে না। এছাড়া যানবাহনকেও জিপিআরসের সিস্টেমে মনিটরিং করা হবে বলেও জানান বাহিনীর মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ডিজিটাল এই সিস্টেমে দায়িত্ব পালন জাতীয় নির্বাচনে আনসার বাহিনীর জন্য এসিড টেস্ট।
পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় আনসার-ভিডিপির কার্যক্রম বিষয়ে মহাপরিচালক বলেন, এবারের দুর্গাপূজায় পূজামণ্ডপগুলোকে নিরাপত্তা ঝুঁকির ভিত্তিতে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ৭ হাজার ৫৪টি পূজামণ্ডপে আটজন করে, গুরুত্বপূর্ণ ১০ হাজার ৯৭২টি এবং সাধারণ ১৩ হাজার ৫৫০টি পূজামণ্ডপে ছয়জন করে আনসার-ভিডিপি সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা শিফট অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছেন।
এ ছাড়া দেশের ৬৪ জেলায় ৯২টি ব্যাটালিয়ন আনসার স্ট্রাইকিং ফোর্স টিম মোতায়েন করা হয়েছে, যারা নিয়মিত টহল পরিচালনার পাশাপাশি যেকোনো আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত আছে।
সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, এই নিরাপত্তা কার্যক্রমকে আরও কার্যকর ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে চালু করা হয়েছে ‘শারদীয় সুরক্ষা অ্যাপস’। এর মাধ্যমে মোতায়েনকৃত সদস্যরা দুর্ঘটনা, গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে রিপোর্ট করছেন এবং এসব তথ্য অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ভাগাভাগি করা হচ্ছে।
সর্বনিম্ন এসএসসি পাস ১৮ থেকে ২৫ বছরের তরুণদের প্রশিক্ষণের বিষয় তুলে ধরে মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের অংশ হিসেবে গত এক বছরে ১ লাখ ৩৫ হজার ৫০০ জনকে ভিডিপি মৌলিক প্রশিক্ষণ এবং ১৫ হাজার ৮০৭ জনকে উপজেলা আনসার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। আগামী ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে আরও ১ লাখ ১৪ হাজার তরুণকে ভিডিপি মৌলিক প্রশিক্ষণ এবং ৩৭ হাজার ৪২৬ জনকে উপজেলা আনসার প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব প্রশিক্ষণে তারুণ্য, মেধা ও যোগ্যতাকে মাপকাঠি হিসেবে ধরা হয়েছে; কোনো প্রকার সুপারিশকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। প্রশিক্ষিত সদস্যরা শুধু পূজার নিরাপত্তায় নয়, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনসহ রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে স্বল্পকালীন মোতায়েনেও দায়িত্ব পালন করবেন।
এ ছাড়া এভিএমআইএস-এর অধীনে ধাপে ধাপে ৬০ লাখ সদস্যের ডাটাবেজ অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে এবং এসটিডিএম সফটওয়্যার থেকে স্বচ্ছতার সঙ্গে সদস্য বাছাই করা হচ্ছে।