প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ০২:২১ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শেখ হাসিনা ও তাঁর সহযোগীদের বিচার অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকার। বিচার আন্তর্জাতিক আইনের মানদণ্ড অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিচারের মুখোমুখি থাকা সত্ত্বেও তিনি (শেখ হাসিনা) ভারতে বসে উস্কানিমূলক ও অস্থিতিশীল বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। ন্যায়বিচারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার তাঁকে প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছে।
নিউইয়র্কে বুধবার ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব্বের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেছেন। এ ছাড়া পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফসহ বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে এদিন প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করেছেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এসব বৈঠক হয়। খবর বাসসের।
আলেকজান্ডার স্টাব্বের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান
উপদেষ্টা বলেন, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) পুনরুজ্জীবন এবং আসিয়ানের সদস্যপদ পেতে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে সার্ক ও আসিয়ানের মধ্যে প্রধান সেতুবন্ধন হিসেবে দেখতে চাই। আসিয়ানের সঙ্গে সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনারশিপের জন্য আমাদের আবেদন পূর্ণ সদস্যপদের দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
এ সময় ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ নীতি সম্পর্কে জানতে চান। বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন, বিচার, সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট এবং নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ ব্যবহার-সংক্রান্ত পদক্ষেপসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।
ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জাতিসংঘ সংস্কারের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, বিশ্বের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল পরিবর্তনশীল।
জাতিসংঘকে শক্তিশালী করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা একমত পোষণ করে বলেন, জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী বড় সংকট মোকাবিলায় কার্যত অসহায় হয়ে পড়েছে। বিশ্বজুড়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে এবং জাতিসংঘ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে যথাযথ প্রভাব রাখতে সক্ষম হচ্ছে না।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বৈঠকে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা পাকিস্তানে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বন্যায় এক হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানিতে গভীর শোক প্রকাশ এবং আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলোচনা শেষ পর্যায়ে এবং দলগুলো জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে। এতে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বাংলাদেশে যেন আর কোনো স্বৈরশাসকের উত্থান না হয়, সে লক্ষ্যে সংস্কার কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। উভয় নেতা আলোচনা করেন সাম্প্রতিক কয়েক বছরে সার্ক কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিকল্প উপায় অনুসন্ধান করা উচিত।
অধ্যাপক ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানান শাহবাজ শরিফ।
ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিজনেস ফোরাম গঠন নিয়ে আলোচনা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি দুদেশের বিজনেস ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এর উদ্দেশ্য বাংলাদেশে ইতালির বিনিয়োগ বাড়ানো। নিউইয়র্কে বুধবার এ বৈঠক হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশে নির্বাচন, অভিবাসন নিয়ে চ্যালেঞ্জ, রোহিঙ্গা সংকট এবং আগামী ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী মেলোনির বাংলাদেশে সম্ভাব্য সফর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের পথে রয়েছে। এরপর তিনি তাঁর পূর্ববর্তী ভূমিকায় ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী মেলোনি আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে অনুষ্ঠেয় রোহিঙ্গা সংকটবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠানোর অঙ্গীকার করেন।
কসোভো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক
কসোভোর প্রেসিডেন্ট ভিওসা ওসমানি বুধবার নিউইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। একটি হোটেলে এ বৈঠকে অভিবাসন, বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়ানো এবং উভয় দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।
প্রেসিডেন্ট ওসমানি বলেন, বাংলাদেশি অনেক নাগরিক কসোভোতে আছেন এবং দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। তিনি দুদেশের মধ্যে কয়েকটি বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেন। বিশেষভাবে তিনি বস্ত্র খাতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির সুপারিশ করেন এবং এ খাতে ব্যাপক সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন।
অধ্যাপক ইউনূস প্রেসিডেন্ট ওসমানিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং ঢাকায় একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি দল পাঠানোর আহ্বান জানান, যাতে তারা অর্থনৈতিক সুযোগগুলো অনুসন্ধান করতে পারে।
মার্কিন কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ এক্সিকিউটিভ বিজনেস গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ আহ্বান জানান। এ আয়োজন করে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল (ইউএসবিবিসি)।
প্রধান উপদেষ্টা মেটলাইফ, শেভরন এবং এক্সেলেরেটসহ শীর্ষ মার্কিন কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। প্রেস সচিব শফিকুল আলম পরে সাংবাদিকদের জানান, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সফরে আসা বাংলাদেশের ছয়জন রাজনৈতিক নেতা সভায় উপস্থিত ছিলেন। তাদের মার্কিন শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
ক্লাব ডি মাদ্রিদে যোগদানের প্রস্তাব ড. ইউনূসকে
ক্লাব ডি মাদ্রিদের সভাপতি ও স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দানিলো তুর্ক বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে একটি হোটেলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে দানিলো তুর্ক অধ্যাপক ইউনূসকে সংগঠনের সদস্য হতে আমন্ত্রণ জানান। তিনি ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে অধ্যাপক ইউনূসের কাজের প্রশংসা এবং এর বৈশ্বিক প্রভাবের কথা উল্লেখ করেন।
ক্লাব ডি মাদ্রিদ বিশ্বের বৃহত্তম ফোরাম। এতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীরা নিজেদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং সারাবিশ্বের মানুষের কল্যাণে কাজ করেন।