প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ০১:৪২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: সড়কে দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষের প্রাণহানী কমাতে উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা, যানজট ও ভোগান্তি লাঘবের পরিকল্পনা নির্বাচনী ইশতেহারে তুলে ধরতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দাবী জানিয়েছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। 'যাত্রী অধিকার দিবস-২০২৫' উপলক্ষে এক আলোচনায় লিখিত বক্তব্যে এ দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
আজ শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটের (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলানায়তনে 'যাত্রী অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক অঙ্গীকার চাই' শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
লিখিত বক্তব্যে মোজাম্মেল হক বলেন, গত ১১ বছরে ৬২ হাজার ৬১৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৮৬ হাজার ৬৯০ জন নিহত এবং ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৫৭ জন আহত হয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে অসহনীয় যানজটে প্রতিদিন কেবল রাজধানীতে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি ৯৮ হাজার কোটি টাকা। জ্বালানি অপচয় প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার। এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, যানজটে আর্থিক ক্ষতির চেয়ে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি কয়েকগুণ বেশি। এতে একজন নাগরিকের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে ও উদ্বেগ বাড়ছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুস ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, কিডনি, হৃদযন্ত্র ও প্রজননতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা, যানজট ও বিশৃঙ্খলা রোধে ২০১৮ সালে প্রণীত সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নে যাত্রী ও নাগরিক সমাজের মতামত উপেক্ষা করায় এসব সমস্যার সমাধান দিতে পারেনি। উন্নত গণপরিবহনের অভাবে দেশে রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, অটোরিক্সার মতো ছোট ছোট যানবাহন দেশের প্রধান বাহনে পরিণত হয়েছে। ৫৬ শতাংশ মানুষ বাধ্য হয়ে প্রাইভেট পরিবহন ব্যবহার করছে।
মোজাম্মেল হক বলেন, বিগত সরকারের আমলে পরিবহনে দুর্নীতি ও ভুলনীতির ফলে যানজট এখন নগর, বন্দর পেরিয়ে গ্রামেগঞ্জে পৌছে গেছে। হাজারো ছাত্র-জনতার প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত সড়ক সেক্টরে সংস্কারের কোন কার্যক্রম হাতে নেয়নি। এ পরিস্থিতিতে সড়কে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানী বন্ধ করা ও যানজটের ভোগান্তি লাঘবের কৌশল থেকে স্ব স্ব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে অর্ন্তভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।
তিনি বলেন, এই শহরে ছোট যানবাহন যত বাড়বে তত দুর্ঘটনা ঘটবে। এছাড়া ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা নিবন্ধন দিলে ঢাকা শহর অচল হয়ে যাবে। কারণ এই সেক্টরে আকিজ থেকে শুরু করে বড় বড় কোম্পানি বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।
আলোচনা সভায় এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, বিআরটিএ আমরা গা্ড়ির ফিটনেস করাতে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। আবার রাস্তায় চলাচল করা গণপরিবহনের দিকে তাকানো যায় না। এসব গাড়ির নাকি ফিসটনেস করাতে যাওয়া লাগে না। এমনিই হয়ে যায়। এসব কিছুর সংস্কার না হলে কিছুই হবে না।
গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান একাই যাত্র সমিতি, শ্রমিক সমিতি ও মালিক সমিতির নেতা ছিলেন। এই অবস্থায় হলে ভালো কিছু আশা করি কিভাবে। পরে যাত্রী কল্যাণ সিমিতির দাবির সঙ্গে একমত ঘোষণা করেন।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইয়াসিন চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রতিনিধি দীপক রায়, সংগঠনের সাবেক চেয়ারম্যান শরিফ রফিকুজ্জামান ও অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।