ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ নারীর


প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ০৭:১৬ পূর্বাহ্ন


পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ নারীর

নিজস্ব প্রতিবেদক: কিশোরগঞ্জ ভৈরব সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন এক নারী ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বিয়ের দাবিতে তার বাসায় গেলে নাজমুসের পরিবারের সদস্যরা হত্যাচেষ্টা করেন।

আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী নারী। ভুক্তভোগী বলেন, আমার হত্যা মামলা তদন্ত করেন পুলিশ ব্যুর অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সেখানে তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটি নিয়ে লুকচুরি এবং হাসি তামাশা করেন। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করে বলেন, ২০২৩ সালের ১৯ জুন ফেসবুক গ্রুপ ‘পাত্র-পাত্রী দুজনেই হবে ঢাবিয়ান’-এ পাত্রী চেয়ে পোস্ট করেন পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুস। সেই পোস্টের সূত্র ধরে তাদের পরিচয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নাজমুস তার স্ত্রী ও সন্তানের বিষয়টি গোপন রেখে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। তাদের এ সম্পর্ক দুই পরিবারের কাছেও সুপরিচিত ছিল এবং উভয়ের বাসায় অবাধ যাতায়াত ছিল।

তিনি বলেন, তাদের সম্পর্কের মধ্যে শিক্ষা ক্যাডারের ৪০তম ব্যাচের ইভা চৌধুরীর সঙ্গে জড়ান এএসপি নাজমুস সাকিব। পরে তাকে বিয়ে করেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হলে একটি গোয়েন্দা সংস্থা ইভা চৌধুরীকে সিরাজগঞ্জ থেকে আটক করে বলে দাবি ভুক্তভোগীর। বর্তমানে তার স্ত্রী ইভা ভৈরব কলেজে কর্মরত আছেন।

ভুক্তভোগী বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে গত ২০ মে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮-এর বিচারক শওকত আলীর আদালতে ধর্ষণ মামলার আবেদন করি। পরে ট্রাইব্যুনাল শাহবাগ থানা-পুলিশকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন। বর্তমানে মামলাটি শাহবাগ থানা পুলশ তদন্ত করছেন। তবে ধর্ষণ মামলার আসামি পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুস সাকিবকে গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ। এদিকে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে আদালতে মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট দিতে তড়িঘড়ি করছে তদন্ত কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, পুলিশ তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে পোস্টিং দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদরদপ্তর সহ একাধিক কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও এখনো সুফল পায়নি। আমার মৃত্যুর পর কি প্রশাসনের নজর পড়বে? আমি ন্যায় বিচার পেতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। নাজমুস সাকিবকে চাকরি থেকে বহিস্কারসহ দেশের প্রচলিত আইনে তার বিচার চাই।

মামলার এজাহারে বলা হয়, সর্বশেষ গত ৪ এপ্রিল রাতে বাদী আসামির বাসায় অবস্থান করেন। একপর্যায়ে বাদী জানতে পারেন, আসামি ইতিমধ্যে অন্য এক নারীকে বিয়ে করেছেন। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আসামি তাঁকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান এবং মামলা করলে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেন।

এএসপি নাজমুস সাকিবের প্রথম স্ত্রী ইসরাত রহমান নারী নির্যাতন ও যৌতুক আইনে মামলা করেন। সেই মামলায় কয়েক মাস জেলও খেটেছেন নাজমুস। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট পর আওয়ামী লীগ শাসন আমলে বঞ্চিতের শিকার দাবি করে আবার চাকরিতে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশের ভৈরব সার্কেলে কর্মরত রয়েছে।

প্রথমে অভিযোগকারী নারীকে চিনেন না বলে দাবি করেন ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা এএসপি নাজমুস সাকিব। পরে তিনি সমকালকে বলেন, দ্বিতীয় বিয়ের জন্য পাত্রী চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট করে পরিবারের সদস্যরা। সেখানে মুক্তা সিভি পাঠায়। ওই পরিচয়ে বেশ কিছুদিন তার সঙ্গে কথা হয়। এরপর বিয়ের জন্য তাকে দেখেন তার (নাজমুস) বোন। কিন্তু পছন্দ না হওয়ায় আর বিয়ে হয়নি।

বাসায় যাত্রায়াত ও অন্তরঙ্গ মূহুর্তের ছবির কথা জানতে চাইলে সেগুলো মেকি বলে দাবি করেন নাজমুস সাকিব। এ বিষয়ে তার বর্তমান স্ত্রী ইভা চৌধুরী বলেন, সামাজিকভাবে হেনাস্তার করতে মুক্তা এসব করছেন।


   আরও সংবাদ