প্রকাশ: ২৯ অগাস্ট, ২০২৪ ১২:২৫ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের মতো আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি অংশও চাকরি জাতীয়করণসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, আন্দোলনরত সাধারণ আনসার সদস্যদের দাবি–দাওয়া মেনে নেয়ার আশ্বাস দেওয়ার পরেও রহস্যজনক কারণে তারা সচিবালয় ও বাহিনীর সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়ে বিশৃঙ্খা সৃষ্টি করে। আন্দোলনকারীদের মধ্যে অনেক বহিরগত প্রবেশের তথ্য প্রমাণ পেয়েছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর খিলগাঁওয়ে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদরদপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করার সময় একথা বলেন তিনি। এর আগে ফেনীর ফুলগাছী এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতারণের সময় পানিতে ডুবে মারা যায় আনসার সদস্য ওয়াহিদুর রহমান। তার পরিবারকে বাহিনীর পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করেন মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। এসময় তাঁর পরিবারের হাতে সাত লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়।
এসময় তিনি বলেন, দাবি আদায়ে সচিবালয় ঘেরাও করে ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এতে আহতও হয়েছেন অনেকে শিক্ষার্থী। সংঘর্ষের জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে চিহ্নিত আনসার সদস্যদের চাকরি থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ, পল্টন ও রমনা থানায় তিনটি মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় ৩৭৫ জন আনসার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
আনসারের মহাপরিচালক বলেন, আন্দোলনরত সদস্যদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু গ্রুপ ছিল। যেখানে প্রত্যেক আনসার সদস্যকে বাহিনীর পোশাক পরিহিত হয়ে আসার পাশাপাশি অতিরিক্ত একটি পোশাক সঙ্গে নিয়ে আসতে বলা হয়। এর মাধ্যমেই বোঝা যায়, আনসারের পোশাকে আন্দোলনে বহিরাগতরা ছিল।
তিনি বলেন, সচিবালায়ে আনসার সদস্যরা অবস্থান নেওয়ার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টরা আলোচনা করা হয়। এমন কি সেই আলোচনায় আন্দোলনরত আনসারদের সমন্বয়করা ছিল। আলোচনা শেষে তাদের দাবি মানার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছায়। একটি কমিটিও গঠন করা হয়। তারা বাইরে এসে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয়। কিন্তু সেখানে বহিরাগতরা আন্দোলন থেকে সরে আসেনি। এর মাধ্যমেই বোঝা যাচ্ছে, আসলে তাদের উদ্দেশ্য ছিল অন্য কিছু। এমন কি সমন্বয়করা বিষয়টি স্বীকারও করেছে, যে তাদের ঘোষণাও মানা হচ্ছিলো না। এ আন্দোলনে নানা অপকর্মের কারণে চাকরি হারানো আনসার সদস্যরাও ছিল। আন্দোলনটা শুরুতে আনসারদের থাকলেও পরে এটা অন্য কারো হাতে চলে যায়। তবে আনসারদের দাবি যৌক্তিক ছিল। তাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু তারা সব কিছুর বাইরে যেতে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিলো।
গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার দায়িত্ব ফেলে আন্দোলনে যাওয়া সাধারন আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে বাহিনী প্রধান বলেন, আনসার সদস্যরা দেশের বিমানবন্দরসহ কেপিআই ভুক্ত স্থাপনার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। অথচ তারা সেসব অরক্ষিত অবস্থায় রেখে আন্দোলনে চলে আসে। এছাড়া শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে অনুমতি ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ করার সুযোগ নেই। ফলে শৃঙ্খল বাহিনীর সদস্য হিসেবে তারা যে কাজটি করেছে তাদের সবাইকে আনসার বাহিনীর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, সাধারণ আনসার সদস্যদের থেকে সব অস্ত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছি। কারণ অবাধ্য কারো হাতে অস্ত্র থাকলে, সেটি দেশ ও জাতির জন্য ঝুঁকির কারণ। কর্মস্থল ত্যাগ করা সদস্যদের চাকরি স্থগিত করা হয়েছে। কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা কর্মস্থলে ফেরেননি তাদের পলাতক হিসেবে ধরা হয়েছে। যারা আন্দোলনে ইন্ধন যুগিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক বলেন, গোপালগঞ্জ জেলা থেকে ২৯ হাজার আনসার সদস্য নিয়োগের তথ্য সঠিক নয়। প্রতিটি জেলার আলাদা আলাদা সংখ্যা নির্ধারিত থাকে। তাই বেশি নিয়োগের সুযোগ নেই। গোপালগঞ্জ জেলা থেকে নিয়োগ পাওয়া আনসারদের সংখ্যা ১ হাজার ৩০০।