প্রকাশ: ২৭ অগাস্ট, ২০২৪ ১২:০৪ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদেশে সব সাধারন আনসারদের ব্যারাক থেকে অস্ত্র ক্লোজড করার নির্দেশ সদর দপ্তরের। এ ছাড়া আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী আনসার সদস্যদের তালিকা তৈরি করেছে বাহিনীটি। এসব সদস্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার পাশপাশি বাহিনী থেকেও স্থায়ী বহিস্কার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা ব্যারাক থেকে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, তাদের আর ব্যারাকে ফিরতে দেওয়া হয়নি। এখন পর্যন্ত সারা দেশে ১০ হাজার সাধারণ আনসার সদস্যদের তালিকা আসছে সদরদপ্তরে। তাদের গতকাল সোমবার থেকেই কর্মস্থল ত্যাগ করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে একাধিক জেলা কমান্ড্যান্ট সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। তারা বলেছেন, সাধারন আনসার সদস্যদের দাবি–দাওয়ার বিষয়ে তারা সর্তক ছিলেন। অনেক জেলাতে জেলা কমান্ড্যান্টের কার্যালয় ঘেরাও করার চেষ্টা করেছে অঙ্গীভূত আনসার সদস্যরা। এমন আলোচনা উঠার পরপরই কৌশলে ব্যারাকগুলো থেকে অস্ত্র ক্লোজড করা হয়। যেসব সাধারণ আনসার সদস্য আন্দোলনে অংশ নেয়, তাদের তালিকা করে সদরদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া তাদের ডিউটি থেকেও প্রত্যাহার করা হয়েছে। যেসব সদস্য কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের কাউকেই সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি।
একটি সূত্রে জানা যায়, আন্দোলনে অংশ নিয়েছে অধিকাংশ ছুটিতে থাকা সদস্যরা। তারা ছুটিতে থাকা অবস্থায় এ আন্দোলনের নামে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টিতে জড়িয়েছে। তবে কর্মস্থল ছেড়ে আসা সদস্যের সংখ্যাও কম না। এ কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কাউকে আর বাহিনীতে চাকরি করার সুযোগ নেই। তাদের সবাইকে প্রচলিত আইনে বিচার হবে। এ ছাড়া কোনো মামলার আসামি হয়ে বাহিনীতে চাকরিতে রাখার সুযোগ থাকে না।
সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সারা দেশ থেকে অংশ নেওয়া ১০ হাজার সাধারণ আনসার সদস্যদের তালিকা এখন পর্যন্ত সদরদপ্তরে পৌঁছাছেছে। ঢাকা জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৩ হাজার সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা জেলা থেকে আন্দোলনে অংশ নেওয়া চার শতাধিক সদস্যের তালিকা সদরদপ্তরে জমা পড়েছে। ঢাকার পাশ্ববর্তী একটি জেলা থেকে আসছে ১৬২ এবং আরেকটি জেলা থেকে আসছে ২জন সদস্যের নাম। তবে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় কর্মরত ১৪ হাজার সাধারণ আনসারের মধ্যে আন্দোলনে অংশ নেওয়া নামের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনও আসেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জেলা কমান্ড্যান্ট বলেন, সব জেলা কমান্ড্যান্ট অফিসাররা সাধারণ আনসারদের কাছ থেকে অস্ত্র জমা নিয়েছেন। তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় অস্ত্র ব্যবহার করছে তারা। এছাড়া যেসব সদস্য আন্দোলনের নামে ঢাকায় গিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে তাদের ব্যারাকে প্রবেশ করতে দেয়নি সাধারণ আনসারাই।
ঢাকা জেলার জেলা কমান্ড্যান্ট আলমগীর শিকদার সমকালকে বলেন, আন্দোলনের প্রথম দিকেই সাধারণ আনসারদের থেকে অস্ত্র ক্লোজড করা হয়। এতে করে অস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ ছিল না। এ ছাড়া আন্দোলনে অংশ নেওয়া ৪০০ জনের তালিকা সদরদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নিবেন।
এদিকে ডিএমপির তিন থানায় ৪২০ জনের নাম উল্লেখ করে ১১ হাজার ১০০ আনসার সদস্যকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। সবকটি মামলা হামলা, ভাঙচুর ও সহিংসতা আইনে হয়েছে। এর মধ্যে শাহবাগ থানায় ২০৮ জনের নাম উল্লেখ করে ৩ হাজার, রমনা থানায় ৯৮ জনের নাম উল্লেখ করে ৩ হাজার, পল্টন ১১৪ জনের নাম উল্লেখ করে ৪ হাজার এবং বিমানবন্দর থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১১০০ জন সাধারণ আনসার সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। এসব আসামিদের মধ্যে শাহবাগ থানায় ১৮৯ জন, রমনা থানায় ৯৮ জন, পল্টন থানায় ১১৩ জন এবং বিমানবন্দর থানায় ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
আন্দোলনকারী আনসার সদস্যদের পরিচয়
আনসার বাহিনীর তিনভাগে গঠিত। আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন (এজিবি), ব্যাটালিয়ন আনসার ও অঙ্গীভূত বা সাধারণ আনসার। বাহিনীর প্রতিটি ইউনিট আলাদা আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এর মধ্যে এজিবি ও ব্যাটালিয়ন আনসার সশস্ত্র ইউনিট। তারা মূলত সেনাবানিহনীর সঙ্গে পার্বত্য অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং রাষ্টীয় প্রয়োজনে কাজ করেন। তারা কমব্যাট রঙের শার্ট–প্যান্ট পরেন। আর সাধারণ আনসার সদস্যরা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় চাহিদা মাফিক মাস্টার রোলে/দৈনিক হাজিরায় কাজ করেন। তারা জলপাই রঙের শার্ট, কালো প্যান্ট ও কালো রঙের বুট ব্যবহার করেন। এই সদস্যরাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন।
সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সাধারণ আনসার মূলত একটি সরকারি গার্ড সার্ভিস। এই গার্ডের স্মাটকার্ডধারী সদস্য প্রায় ৯৯ হাজার। তবে তাদের নিয়োজিত করার মতো পদ রয়েছে ৫৪ হাজার ৩৫০টি। যার সব কয়টি পদে আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। বাকি ৪৪ হাজার ৬৫০ জন সদস্য বিভিন্ন মেয়াদে ছুটিতে রয়েছেন। সক্রিয় আনসার সদস্যদের মধ্যে সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় ২২ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। বাকি সদস্যরা অন্যান্য বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। এর সংখ্যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়।
একজন আনসার সদস্যের বেতন থেকে বাড়তি ২০ শতাংশ কেটে রাখা হয় দাবি সাধারণ আনসার সদস্যদের। এ বিষয়ে জানা যায়, এই টাকা তাদের বেতনের অংশ নয়। এটা ‘পরিচালন ব্যয়’ হিসেবে বেতনের অতিরিক্ত নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকেন। এর থেকে প্রতিটি সদস্যের বছরে দুই সেট পোশাক ও জুতাসহ তাদের অস্ত্র ও গাড়ি সরবরাহ করা হয়। এছাড়া বিশেষ প্রয়োজনে এই ফান্ড থেকেই তাদের সহযোগিতা করা হয়।
যোগ দেওয়ার পর শুরুতে একজন আনসার সদস্য বেতন পান ১৭ হাজার টাকা। এর সঙ্গে তাকে রেশন সুবিধা, চিকিৎসা ও আবাসিক ভাতা নিয়ে তাদের বেতন আসে ২৪ হাজার টাকা। তবে তাদের বেশিরভাগ পুরো চাকরি জীবনে একই ধরনের সুযোগ–সুবিধা পান।