প্রকাশ: ২৩ অগাস্ট, ২০২৪ ১১:৫০ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: আকাশ থেকে লাগাতার ঝরছে বৃষ্টি আর বাঁধভাঙা বন্যার তোড়ে প্লাবিত দেশের পূর্বাঞ্চল ৯টি জেলা। মানবতার চিরন্তন হৃদয়াবেগ নিয়ে দুর্গত মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন দেশের ছাত্র-জনতা। সর্বশক্তি নিয়ে দেশের এই ভয়ানক প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় নেমেছেন। ঢাকার টিএসসিতে ছাত্র-জনতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে, সাধারণ মানুষ দু'হাত খুলে সহায়তা করছে। এই ত্রাণ তহবিলে যে যেভাবে পারছেন—অর্থ, খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, উদ্ধার, আশ্রয়, শুশ্রূষা দিয়ে, কায়িক শ্রম দিয়ে ত্রাণকাজে সহায়তা করছেন। তাঁরা বলছেন, এই ঐক্যই দুর্যোগ–দুর্বিপাক থেকে বিপদগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধারের প্রধান শক্তি।
দুর্যোগ–দুঃসময়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়ানোর মহৎ গুণটি এ দেশের মানুষ রপ্ত করেছেন অনেক আগেই। সিডর, আইলা থেকে শুরু করে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, শৈত্যপ্রবাহ কিংবা অগ্নিকাণ্ড, ভবনধস এমনকি মহামারির সময় সর্বস্তরের মানুষ আপনাপন সাধ্যানুযায়ী মানবিক কাজে সক্রিয় থেকেছেন। সবাই মিলে দুর্যোগ অতিক্রম করে জীবনের বুনিয়াদ অব্যাহত রাখতে অবদান রেখেছেন।
এবারও দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যায় তার ব্যত্যয় হয়নি। রাজধানীসহ সারা দেশে পথে পথে দেখা যাচ্ছে ত্রাণ সংগ্রহের কাজ। তবে এখন ত্রাণ তহবিল ও অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ, ত্রাণকাজে নানা রকম উপকরণ দান ও সরাসরি অংশ নিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বড় ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে ফেসবুক ত্রাণকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের যোগাযোগ, অভিজ্ঞতা বিনিময়, পরামর্শ, ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ও সংগ্রহের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ত্রাণকেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে পোস্ট দিয়েছেন সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেখানে ১৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা তহবিল ও ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়েছে বলে তিনি ফেসবুকে জানিয়েছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ‘লজিস্টিকস এরিয়া রিলিফ ফান্ড’, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পক্ষ থেকে ফেসবুকে ত্রাণ সংগ্রহের কাজ চলছে বলে আহ্বান জানানো হয়েছে। বিমান ও নৌবাহিনীরও ত্রাণকাজের এমন উদ্যোগ রয়েছে।
কত মানুষ কতভাবে যে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন! ব্যক্তিগতভাবে আমজাদ খান নামের একজন তাঁর মুঠোফোন নম্বর দিয়ে জানিয়েছেন, ৪৫০ টাকা দামের লাইফ জ্যাকেট তিনি উদ্ধারকর্মীদের ১৫০ টাকায় দিচ্ছেন। ইমাম হোসেন নামের আরেকজন লিখেছেন, ত্রাণসামগ্রী, নৌকা বা স্পিডবোট পরিবহনের জন্য তাঁর দুটি ট্রাক নিয়োজিত রয়েছে।
চট্টগ্রামের এইচ এম অ্যাগ্রো নামের একটি প্রতিষ্ঠান তাদের ফেসবুক পেজে উল্লেখ করেছে, তাদের খামারে গবাদিপশু রাখার ব্যবস্থা আছে। ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করে ত্রাণকর্মীরা তাঁদের খামারে দুর্গতদের গবাদিপশু বিনা খরচায় রাখতে পারবেন।
‘চাঁদাবাজি নিবারণ রেসপন্স টিম’ নামের একটি দল লিখেছে, তারা পাঁচটি স্পিডবোট নিয়ে ত্রাণকাজে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুটি স্পিডবোট নিয়ে ফেনী চলে গেছে তাদের দুটি দল। ‘স্মাইল বাংলাদেশ’ নামের স্বেচ্ছাসেবীদের একটি দল জানিয়েছে, তারা পাঁচটি বড় কাভার্ড ভ্যান সংগ্রহ করেছেন ত্রাণসামগ্রী পাঠাতে। ফোন নম্বর দিয়ে আহ্বান জানিয়েছেন আগ্রহীরা ত্রাণ পাঠাতে চাইলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
ত্রাণকাজে নেমেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ, ঢাবি পরিবার, বিভিন্ন বিভাগ। দীপ সাহা নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘জগন্নাথ হলের সরস্বতী পূজার জাঁকজমক আর বাজেট বাংলাদেশের কে না জানে, প্রায় ৮০টি মণ্ডপে একসঙ্গে পূজা হয়। সবচেয়ে সুন্দর বিষয়টা হচ্ছে, প্রায় প্রতিটা মণ্ডপ থেকেই পূজার বাজেটের একাংশ বন্যার্ত মানুষদের সহায়তার জন্য ব্যয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, ব্র্যাক, বিউইপি, এআইইউবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা গ্রুপ করে ত্রাণকাজে অংশ নিচ্ছেন। অংশ নিচ্ছে জনপ্রিয় মাধ্যম মিম সৃষ্টিকারীদের সংগঠন ‘স্বাধীন বাংলা মিমার্স সংঘ’, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল’, চিকিৎসকদের সংগঠন, ‘স্বেচ্ছা রক্তদান সংস্থা সন্ধানী’সহ অসংখ্য সংগঠন।