প্রকাশ: ১৬ জুন, ২০২২ ২২:৩৭ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: গরিবদুস্থ জনগনকে সেবার নাম করে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। আর নেপথ্যে রয়েছে ভসড নামের এক এনজিও এবং আম্বালা ফাউন্ডেশন নামের ক্ষুদ্র ঋণ দেয়া নামের এক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আবু মোহাম্মদ সাইদুর রহমান, একেএম মোস্তাফিজুর রহমান এবং আরিফ শিকদারের বিরুদ্ধে এই টাকা পাচার হয়েছে। যার তদন্তে নেমেছে দূনীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক সূত্র বলছে, দুই প্রতিষ্ঠানের মালিকদের ব্যাপারে বিস্তারিত অনুসদ্ধান শেষে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। যে কোন সময় এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করা হবে।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আবু মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বর্তমানে একটি বেসরকারী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে রয়েছেন। এবং প্যানডামিক ফিশারিজ, সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্স, এরআরবি লাইফ ইন্সুরেন্সসহ সতেরোটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে আছেন। সাবেক এ সরকারী কর্মকর্তাদের নামে বেনামে বিপুল সম্পদ রয়েছে।
জানা যায়, আবু মোহাম্মদ সাইদুর রহমান সরকারী বিভিন্ন দফতরে কর্মরত থাকাকালে নিজের প্রভাব খাটিয়ে তার আপন ভাগ্নে একেএম মোস্তাফিজুর রহমানকে ভসড নামের একটি এনজিও তৈরী করে সিডর সহ বিভিন্ন দূর্যোগের সরকারী টাকা দিয়েছেন। দু:স্থ ও অসুস্থ দরিদ্র জনগনের সরকারী নিজস্ব প্রকল্পের টাকা ভসড এবং আম্বালা ফাউন্ডেশনকে কাজ দিয়ে শতশত কোটি টাকা তছরুপ করা হয়েছে ।
সাইদুর রহমানের দুই পুত্র অস্ট্রেলিয়া এবং জার্মান প্রবাসী। জার্মান প্রবাসী ছেলে আবু মোহাম্মদ তুষার ইকবালের নামে শতশত কোটি টাকা পাচারের মাধ্যমে এনআরবিসি ব্যাংকের পাচ শতাংশ অংশিদারিত্ব নিয়েছেন।
তাছাড়া পিকেএসএফ এর কাছ থেকে ঋন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য অর্থ নেয়। পিকেএসএফকে দৃশ্যমান রেখে সরকারী বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকল্প নিয়ে পিকেএসএফ এর মাধ্যমে কাজ দেখিয়ে বাকি টাকা লুটে নেয়। যার পরিমান হাজার কোটি টাকার ওপরে বিভিন্ন নামে বেনামে হাতিয়ে নিয়ে দেশে বাইরে পাচার করে।
সরকারী চাকুরী অবসর গ্রহনের পর সাইদুর রহমান নিজেই ভসডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনের সময় মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, স্টান্ডার্ড এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা ঋন নিয়েছেন। এ ঋনগুলোও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋনের টাকা উত্তোলন করে হাতিয়ে নিয়েছেন। ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় মামলাও হয়েছে যেগুলো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
অর্নীতা এগ্রোসহ প্যানডামিকের সাথে সংশ্লিষ্ট সতেরোটি প্রতিষ্ঠান তৈরী করে বরিশালের উজিরপুর উপজেলাসহ সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার একর জমির মালিক হয়েছেন। যার প্রকৃত মালিকরা এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বসতভিটা পাবার আশায়। গরিবদূ:স্থ মানুষকে জিম্মি করে তাদের সম্পদ লুটে নেয়ার অত্যাচারের অভিযোগ ও রয়েছে। এছাড়া শেয়ার বাজারে নামে বেনামে ম্যাক্সন স্পিনিং,ড্রাগন টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার নিয়ে হাজার হাজার নিরিহ বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়েছে। ভসডের লোন পরিশোধের নাম করে আম্বালা ফাউন্ডেশনের আরিফ শিকদারের কাছে ষাট লাখ শেয়ার ২৩ টাকা করে বক্রি করেছেন যার কোনো ধরনের কর পরিশোধ করেনী।
একেএম মোস্তাফিজুর রহমান : সাইদুর রহমানের আপন ভাগ্নে মোস্তাফিজুর রহমান। সাইদুর রহমান সরকারী কর্মকর্তা থাকাকালীন সময়ে নিজের প্রভাব খাটিয়ে তার আপন ভাগ্নে একেএম মোস্তাফিজুর রহমানকে ভসড নামের এনজিও তৈরী করে সিডর সহ বিভিন্ন দূর্যোগের সরকারী টাকা দিয়েছেন। দু:স্থ ও অসুস্থ দরিদ্র জনগনের সরকারী নিজস্ব প্রকল্পের টাকা ভসড এবং আম্বালা ফাউন্ডেশনকে কাজ দিয়ে শতশত কোটি টাকা তছরুপ করেছেন এই মোস্তাফিজুর রহমান। তাছাড়া সরকারী নিউট্রেশন প্রকল্পের (এনএনটি) সকল টাকা দরিদ্রদের সহায়তার কথা বলে শতশত কোটি টাকা তছরুপ করে বিদেশে পাচার করেছেন।
এছাড়া একজন অতিরিক্ত সচিবের ভগ্নিপতি হ্ওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে এখনো ভসড নামে অল্টারনেটিভ এডুকেশনের নাম দিয়ে শতশত কোটি সরকারী টাকা আত্মসাত করছেন। নিজে প্রবাসী হিসেবে পরিচয় পাবার জন্য বিদেশে তুরস্কের নাগরিকত্বসহ, আরব আমিরাত. মালদোভা,লাটভিয়া এবং কয়েকটি দ্বীপরাস্ট্রের রেসিডেন্ট কার্ড নিয়েছেন। নিজের ভায়রা ফিরোজ হায়দার খানের নামে এনআরবিসি ব্যাংকের পাঁচ শতাংশ বেনামী মালিকানা নিয়েছেন।
অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিডেট এর ( ইসি চেয়ারম্যান), সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্স, এবং একটি বেসরকারী ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। আপন ভায়রা ফিরোজ হায়দার খানের কাছ থেকে শেয়ার ট্রান্সফারের জন্য তথ্যাদি বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়ার কথা থাকল্ওে তা আজ পর্যন্ত দিতে পারেনি।
আরিফ শিকদার : ২০১৯ সালের ৩ মার্চ গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আম্বালা ফাউন্ডেশন নামের এনজিওর ঋণের কিস্তি কম দেয়ায় আম্বালা ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা অসহায় ঋণ গ্রহীতার কোটি টাকা মূল্যের মার্কেট জবর দখল করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়ে মার্কেটটি জবরদখল করে নেয় আরিফ শিকদারের আম্বালা ফাউন্ডেশন। সেই সময় এর প্রতিবাদ করলে আম্বালা ফাউন্ডেশনের সন্ত্রাসীদের হামলায় ঋণ গ্রহীতা মিনু বেগম, তার স্বামী হাজী ওসমান ও তার মা নুরজাহান বেগম মারাত্মক আহত হয়। এ ঘটনায় ঋণ গ্রহীতার স্বামী হাজী ওসমান বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করার পরে পুলিশ সাগর হোসেন নামে এক সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে। তাছাড়া গাজীপুরের শ্রীপুরের জৈনা বাজারের আম্বালা ফাউন্ডেশনের ফাঁদে পরে সর্বশান্ত হয়েছে অনেকেই।
অভিযোগ রয়েছে , গ্রাহকদের খালী চেক থাকার সুযোগ নিয়ে জামিনদার দুই জনের নামে তাদের জমা রাখা খালি চেকে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা করে মোট ১৬ লাখ টাকা অংক বসিয়ে চেক ডিজঅনারের মামলা করেন আরিফ শিকদারের আম্বালা ফাউন্ডেশন।
আম্বালা ফাউন্ডেশনের ঋণ গ্রহনকারী ফরিদা আক্তার জানান, তিন বছর মেয়াদি এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা রয়েছে। তারা অন্যায়ভাবে আমাদের জমি মর্টগেজ দলিল না করে ব্যক্তির নামে পাওয়ার দলিল করে নিয়েছে। এমনভাবে এলাকার অনেক লোকের কাছ হতে জমি হাতিয়ে নিচ্ছে। মামলায় এবং আমমোক্তারনামা দলিলে কোথাও ঋণের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
ভুক্তভুগীরা জানায় আম্বালা ফাউন্ডেশন থেকে ঋণ নিতে হলে তিনশত টাকা স্ট্যাম্প, ঋণ গ্রহিতা ও জমিনদাতার ৪ টি করে ব্লাংক চেক, জমির দলিল ও খারিজের কপি দিয়ে ঋণ দেন তারা। টাকা পরিশোধ করতে না পারায় বহু মানুষের জমি কেড়ে নেয় আম্বালা কতৃপক্ষ। এই নিয়ে আম্বালার নির্বাহ পরিচালক আরিফ শিকদারের কাছে ধর্ণ দিলেও নিরীহ গ্রামবাসী দূর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেয় আরিফ শিকদার। তাছাড়া আম্বালার ফাউন্ডেশখনের মালিক আরিফ শিকদার নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর আত্বীয় পরিচয় দিয়ে এ অপকর্ম করে থাকেন।
এছাড়া নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি জামায়াতকে গোপনে আর্থিক সহায়তা করছে আম্বালা ফাউন্ডেশন। মুন্সিগঞ্জ জেলার প্রভাবশালী হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছেন আরিফ শিকদার। সরকার দলে প্রার্থীতা না পেলে বিএনপি জামাতের প্রার্থী হবার পথ সুগম করছে আরিফ শিকদার। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে আরিফ শিকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলেও টাকা দিয়ে সব ম্যানেজ করছে আরিফ শিকদার। আরিফ শিকদার বর্মানে এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্সুরেন্সের পরিচালক,এরআরবিসি ব্যাংকের দুই শতাংশ শেয়ারের মালিক এবং বেনামে সাইদুর রহমান এবং মোস্তাফিজুর রহমানের সকল ব্যবসার ব্যবসায়ীক পার্টনার।
এইসব অভিযোগ নিয়ে সাইদুর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান এবং আরিফ শিকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজী হননি।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান আম্বালা ফাউন্ডেশন, ভিওএসডি নিয়ে এমন অভিযোগ আগে তাদের হাতে আসেনি বলে বিষয়গুলো নিয়ে তাদের তেমন কোনো ধারনা নেই।