প্রকাশ: ১১ জুন, ২০২২ ০১:৫৭ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর শাহজাহানপুর আমতলা এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হাসান টিপু। ওই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও সমন্বয়কারী সুমন শিকদার মুসা দ্বায় শিকার করেছে। এই হত্যাকাণ্ডে কার কি ভূমিকা ছিল, তা জানতে মুসাকে ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
মামলার এক তদন্ত কর্মকর্তা জানান, মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। এই মামালায় এখন পর্যন্ত মুসাসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে কে কোন দায়িত্ব পালন করেছে সেটা জানা যাবে। সেটাই জানার চেষ্টা চলছে। তবে প্রধান শুটার আকাশের বিষয়টি শিকার করেছে মুসা। আর বাকিদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, মুসা বেশ কয়েকজন আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার নাম বলেছে। তবে আমরাও কয়েকজনের নাম জানার চেষ্টা করেছি। যাদের নাম এসেছে সেগুলো নিয়ে যাচাই বাছাই চলছে। এছাড়া তাদের ওপরে নজরদারি করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক সূত্রে জানান, দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া জেলে যাওয়ার পরে এলাকার নিয়ন্ত্রণ চলে যায় টিপু হাতে। টিপু রাজধানীর মতিঝিল, কমলাপুর ও শাহজাহানপুরসহ আশপাশের এলাকায় আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী ফ্রিডম মানিক ও জিসানের দাপট কমে যাওয়া। ঠিকাদারি কাজের পাশাপাশি চাঁদার ভাগ না পাওয়ায়। ক্ষুব্ধ ‘আন্ডারওয়ার্ল্ডের বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী। তাদের মধ্যে ফ্রিডম মানিক ও জিসানের নাম আসছে বার বার।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, শাহজাহানপুর ও মতিঝিল এলাকার মার্কেট ও বাড়ি নির্মাণের চাঁদাবাজির পুরোটাই একাই নিয়ন্ত্রণ করতেন টিপু। শাহজাহানপুরের চাঁদার ভাগ ফ্রিডম মানিক পাচ্ছিলেন না। এতে তার ক্ষোভ চরম আকার ধারণ করে। জিসানেরও ক্ষোভ জন্মায় চাঁদার ভাগ না পাওয়ার জন্যই। পাশাপাশি বোঁচা বাবু ও যুবলীগ নেতা মিল্কী হত্যা মামলায় নিয়ন্ত্রণ টিপুর হাতে থাকাই সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা হয়।
ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, টিপু হত্যার পিছনে কয়েকটি কারণ কাজ করছে। তার মধ্যে আন্ডারওয়ার্ল্ডে চাঁদা না পৌছানো। বোঁচা বাবু ও মিল্কী হত্যার দায় মুসার এড়াতে না পারা। পরে মুসা দেশে থাকায় মামলা থেকে বাঁচতে চাইছে, আর বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসীরা চাঁদা না পাওয়ার ক্ষোভ একত্রে টিপু হত্যা।
ওমান থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে, এসব তথ্য জানিয়েছেন সুমন শিকদার মুসা। তবে হত্যাকাণ্ডের জন্য চুক্তির টাকার উৎস ও মোটরসাইকেল আর অস্ত্রের বিষয়ে এখন পর্যন্ত মুখ খোলেন নি মুসা। ঘটনার প্রধান মুসা গ্রেপ্তার হওয়ার পরেও আলামাত উদ্ধার না হওয়ায় কিছুটা বিপাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে আশা করা হচ্ছে- মুসার থেকেই আলমতের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানান এক কর্মকর্তা।
হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া শুটার আকাশকে ঠিক করে কিলিং মিশনের পরিকল্পনা করেন মুসা। পুলিশ যাতে তাকে গ্রেপ্তার করতে না পারেন, সেজন্য কিলিং মিশনের ১২ দিন আগে দেশ ছাড়েন মুসা। গত ৮ মে দুবাই থেকে ওমানে যান। পরে ১২ মে দুবাই ফেরার সময় ওমান পুলিশ হাতে আটক হন মুসা।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, শাহজাহানপুরে ডাবল মার্ডারের ঘটনায় বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশের স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দিতে মূল পরিকল্পনাকারী ও সমন্বয়কারী হিসেবে মুসার নাম আসে। পরে জানা যায়, ঘটনার আগেই দেশ ছেড়েন মুসা। তার সন্ধানে ৬ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখায় যোগাযোগ করা হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর ইন্টারপোলের মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করে। এরমধ্যে ৮ মে মুসা দুবাই থেকে ওমানে প্রবেশ করেছে বলে জানা যায়। ইন্টারপোলের ওমান পুলিশ এনসিবির সহযোগিতায় গত ১২ মে মুসাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৯ জুন ডিবির একটি টিম ওমান থেকে মুসাকে দেশে ফিরিয়ে আনেন।
ডিবিপ্রধান বলেন, মুসাকে না পেয়ে মামলার তদন্তে হিমশিম খাচ্ছিলাম। এখন মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যাকাণ্ডে কার কার দায় আছে, কার নেই। সেটি খতিয়ে দেখা হবে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন-শুটার মাসুম মোহাম্মদ আকাশ, আরফান উল্লাহ দামাল, নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির, ওমর ফারুক, মোরশেদুল আলম কাইল্লা পলাশ, আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালে, নাসির উদ্দিন মানিক, মো. মারুফ খান, মশিউর রহমান ইকরাম, ইয়াসির আরাফাত সৈকত, সেকেন্দার শিকদার, হাফিজুল ইসলাম হাফেজ ও সুমন সিকদার মুসা।
টিপু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার শুটার মুসার ১৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে তুলা হয়। পরে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারাহ দিবা ছন্দার আদালত ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বর্তমানে মুসা ডিবির কাছে ৬ দিনের রিমান্ডে আছেন।
গত ২৪ মার্চ রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু মাইক্রোবাসে করে শাহজাহানপুর আমতলা হয়ে বাসায় ফিরছিলেন। শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে পৌঁছালে হেলমেট পরা দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে জাহিদুল ও তার গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন।
এ সময় জাহিদুলের গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রী প্রীতিও গুলিবিদ্ধ হন। তাদের রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিদুল ও প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরের দিন ২৫ মার্চ দুপুরে নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।