প্রকাশ: ৯ জুন, ২০২২ ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন
কভিড মোকাবেলায় সরকার ঘোষীত ২৮টি প্রণোদনার মাধ্যমে সাত কোটি ২৯ লাখ ৯৭ জাহার মানুষ উপকৃত হয়েছেন। পাশাপাশি উপকৃত হয়েছে এক লাখ ৭২ হাজার প্রতিষ্ঠান। গতকাল জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের সময় এসব তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রী বলেন, গত বছরের বাজেট বক্তৃতায় আমি এই প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়নের একটি সংক্ষিপ্ত হালচিত্র তুলে ধরেছিলাম। আজ এ মহান সংসদে আমি প্যাকেজগুলোর সফল বাস্তবায়নের ফলে দেশের জনগণ যে উপকৃত হয়েছে তার চিত্রসহ করোনার প্রভাব কাটিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর চিত্র তুলে ধরছি। তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিমুখী খাতের শ্রমিকের কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখতে বেতন-ভাতা বাবদ সরকার যে ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল সরবরাহ করেছে তা হতে সরাসরি উপকৃত হয়েছে রপ্তানিমুখী শিল্পের ৩৮ লাখ শ্রমিক-কর্মচারি, যার ৫৩ শতাংশ নারী।
মুস্তফা কামাল বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানসমূহকে ব্যবসায় টিকিয়ে রাখতে আমাদের দেওয়া ৭৩ হাজার কোটি টাকার স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ সুবিধা এবং একইভাবে কুটির শিল্পসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রদত্ত ৪০ হাজার কোটি টাকার তহবিল হতে এ পর্যন্ত সুবিধা গ্রহণ করেছে ৪ হাজার ৫২৯টি বৃহৎ ও ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৬১টি কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এছাড়া, এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড, প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম ও এসএমই খাতের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম হতে সুবিধা ভোগ করেছে ছোট-বড় অসংখ্য ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান। সরকারের এসব প্যাকেজের ফলেই আজ রপ্তানিমুখী শিল্পসহ অন্যান্য ম্যানুফ্যাকচারিং ও সেবা খাত পুরোপুরি উৎপাদনে ফিরে এসেছে।
তিনি বলেন, ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া প্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ দরিদ্র ও নিম্ন-আয়ের মানুষের জন্য আমরা খাবারের ব্যবস্থা করেছি। পাশাপাশি, নিম্ন-আয়ের ৭০ লাখ ৫৭ হাজার পরিবারের মাঝে সরকার মাত্র ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করেছে। অতিমারির সময় অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে সারাদেশে প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত ৩৫ লাশ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রায় ২৭ লাখ উপকারভোগী পরিবারের প্রত্যেককে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদান করেছি। আমরা দেশের অতি দরিদ্র মোট ২৬২টি উপজেলায় বয়স্ক ভাতা এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা কর্মসূচির আওতা শতভাগে উন্নীত করেছি। দেশের সকল প্রতিবন্ধীকে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় এনেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসরণে গৃহহীন মানুষের জন্য সারাদেশে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার ২৩৩টি গৃহনির্মাণের মাধ্যমে সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি দরিদ্র মানুষের নিরাপদ ও সম্মানজনক বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছি। অতিমারির সময় আমাদের সরকারের নেওয়া এসব সামাজিক সুরক্ষামূলক কার্যক্রমের ফলে দেশের লাখ লাখ মানুষ অতিমারির অভিঘাত হতে সুরক্ষিত থেকেছে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার ঘোষিত প্যাকেজের বাস্তবায়নের ফলে খাদ্য উৎপাদন ও কৃষি পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা গেছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রয়েছে। কৃষি প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে উপকৃত হয়েছে দেশের ১ কোটি ৬৫ লাখ কৃষক পরিবার। কৃষকের ঋণ প্রাপ্তি সহজ করার লক্ষ্যে গঠন করা ৮ হাজার কোটি টাকার কৃষি পুনঃঅর্থায়ন স্কিমে এ পর্যন্ত সুবিধা পেয়েছে ৩ লাখ ১৪ হাজার কৃষি ফার্ম। নিম্ন-আয়ের পেশাজীবী কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য গঠিত ৩ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের সুবিধা ভোগ করেছে এ পর্যন্ত ৫.৩৪ লাখ নিম্ন-আয়ের পেশাজীবী কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। গ্রামীণ অর্থনীতিকে কর্মসৃজনের মাধ্যমে চাঙ্গা করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরকারের ঋণদান প্যাকেজসমূহের উপকারভোগী হলো লাখ লাখ গ্রামীণ জনগণ এবং এর ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি পুরোপুরি সচল রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গৃহীত এসব সময়োপযোগী পদক্ষেপের সফল বাস্তবায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ কমনওয়েলথ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কোভিড-১৯ অতিমারি মোকাবেলায় সফল শীর্ষ নারী নেত্রীদের অন্যতম হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।