ঢাকা, রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ চৈত্র ১৪৩২, ১৬ জ্বমাদিউল সানি ১৪৪৭

চাকরির নামে স্বামী-স্ত্রীর প্রতারণার ফাঁদ


প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ ০৭:৪৬ পূর্বাহ্ন


চাকরির নামে স্বামী-স্ত্রীর প্রতারণার ফাঁদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফেসবুকে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে খুলনার বাগেরহাট থেকে ঢাকায় এসেছেন সুজন বর্মণ। উদ্দেশ্য একটি সিকিউরিটি কোম্পানির সহকারী সুপারভাইজার পদে চাকরি করবেন। চাকরি নিতে আসা সুজনকে বলা হয় তার মতো আরও তরুণদের আনতে বলা হয়। কিন্তু এক মাসেও কেউরে না আনতে পারায় কোনো টাকাই পাননি। এক মাস নানা কষ্টে দিন কাটিয়েছেন বলে জানান সুজন। 

গতকাল রাতে রাজধানীর উত্তরখান থানার আঁটিপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের সাত সদস্কেয গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১। আজ সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন। 

র‍্যাব জানিয়েছে, চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আকর্ষণীয় বেতনে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। আর এই চক্রের মূল হোতা স্বামী-স্ত্রী। প্রত্যেকের কাছ থেকে ১২ হাজার ৫০০ করে আদায় করা হতো। এ পর্যন্ত সাত থেকে আটশো জনের সঙ্গে প্রতারণার করেছে। 

গ্রেপ্তাররা হলো-কথিত সিনথিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সামসুন্নাহার ওরফে মায়া (৩৩) ও তার স্বামী জুয়েল ভূঁইয়া, কামরুজ্জামান ওরফে ডেনিস (২৪), ফারহানা ইয়াছমিন ওরফে সুবর্ণা আক্তার (২৩), মেহেদী হাসান (২১), আল মামুন ওরফে মাসুদ (২১) ও তাজবির হাসান ওরফে লোহান (১৯)। তাদের কাছ থেকে পাঁচটি ভুয়া নিয়োগপত্র, ৮০ টি জীবন বৃত্তান্ত ফরম, ভিজিটিং কার্ড, টাকা আদায়ের রশিদ, ১০১ টি ভর্তির ফরম ও অঙ্গীকারনামা, সিল ১৫টি আইডি কার্ড, তিনটি রেজিস্ট্রার, আটটি মোবাইল ফোন ও নগদে ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। 

র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এসএসসি পাশে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেকার তরুণদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। তারা সাবেক সেনা কর্মকর্তার বডিগার্ড, বাসা বাড়ির নিরাপত্তা রক্ষী, সুপারভাইজারসহ বিভিন্ন পদে চাকরি বিজ্ঞাপন দিত। তাদের বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে জীবন বৃত্তান্ত জমা নেওয়া হতো। কয়েক দিন পর যোগাযোগ করে বলা হতো চাকরি হয়েছে। তবে ট্রেনিংসহ বিভিন্ন খাতের নামে ১২ হাজার ৫০০ টাকা জমা নেওয়া হতো। এরপর চাকরি না দিয়ে তাদের বলা হতো তাদের মতো আরও চাকরি প্রার্থী সংগ্রহে। চাকরি প্রার্থী সংগ্রহ করতে পারলে পার্সেন্টিজ হিসেবে ১১০০ টাকা দেওয়া হবে। মাসে অন্তত ১৪ জনকে সংগ্রহের টার্গেট দেওয়া হতো। 

চক্রটি এ পর্যন্ত সাত থেকে আটশো লোকের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরি মান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। তারা এই টাকাগুলো কোনো খাতে ব্যয় কর জানতে চাইলে র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা অর্থ পাচার কোনো তথ্য পায়নি তবে এ অর্থ দিয়ে তারা বিলাসবহুল জীবন-জীবন যাপন করতেন এবং তাদের কোম্পানির প্রচারণার জন্য এ টাকা দিয়ে ফেইসবুক বোস্টিং করত। 

যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া কি হবে। এ ছাড়া এর আগেও তারা এমন কোনো প্রতারণার সঙ্গে জড়িত আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ১৭ জন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছি তারাই এই মামলার বাদী হবেন। এ ছাড়া তাদের আগের কোনো প্রতারণার তথ্য আমাদের কাছে নেই তবে কোম্পানির এমডি অর্থাৎ মায়া আগে অন্য আরেকটি ভুয়া সিকিউরিটি কোম্পানিতে কাজ করত এবং সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে নতুনভাবে প্রতারণা শুরু করেন। তারা আট মাস ধরে এই কাজ করে আসছিল। 

এমন অনেকগুলোর সংস্থা আছে যাদের প্রতারণা খবর রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় আমরা আগেও পেয়েছি এবং অল্প শিক্ষিত লোকদের টার্গেট করে এসব প্রতারণা করে আসছে এ সকল চাকরি প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে আপনারা কি বলবেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন, এর আগেও আমরা এইরকম প্রতারণার জন্য গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু দেখা গেছে তারা জামিন বের হয়ে একই ধরনের কোম্পানি খোলে বসে অন্য নাম দিয়ে কিংবা অন্য ঠিকানা দিয়ে তারা এ ধরনের কোম্পানি খুলে বসে। গণ্যমাধ্যমের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের মানুষকে বলতে চাই কোনো ভুয়া বিজ্ঞান দেখে প্রতারিত হবেন না। চাকরি নেওয়ার আগে যাচাই করে নেবেন। 
 


   আরও সংবাদ